ফেয়ার পলিশ কি ত্বকের জন্য ভালো

সৌন্দর্যের ভাষা বদলে যাচ্ছে। ত্বক ফরসা করার অবাস্তব প্রতিযোগিতার বদলে এখন গুরুত্ব পাচ্ছে ত্বকের সুস্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা। এই পরিবর্তনের ধারাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে সাম্প্রতিক স্কিনকেয়ার ট্রেন্ড-ফেয়ার পলিশ। বিভিন্ন পারলারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই সার্ভিস নিতেই তরুণীরা এখন বেশি ভিড় জমান।

ফেয়ার পলিশ কী

ফেয়ার পলিশ করলে স্বাভাবিক ত্বকের উজ্জ্বলতাই প্রকাশ পায়। মডেল: শিরীন শিলা
ছবি: প্রথম আলো

‘বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ার’–এর স্বত্বাধিকারী শারমিন কচি বলেন, ফেয়ার পলিশ মূলত ত্বক উজ্জ্বলকারী এক পদ্ধতি, যা ত্বকের ওপর জমে থাকা মৃত কোষ দূর করে। ফলে ত্বক হয় আগের তুলনায় আরও মসৃণ, পরিষ্কার ও দীপ্তিময়। এটি ত্বকের ভেতরের স্তরে কোনো পরিবর্তন আনে না, বরং উপরিভাগের ময়লা, মৃত কোষ ও সূর্যের পোড়াভাব দূর করে ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। ফেয়ার পলিশে ত্বকের টেক্সচার উন্নত করার পাশাপাশি এতে ত্বকের স্বাভাবিক রং আরও পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে।

কেন এত জনপ্রিয় এই ট্রিটমেন্ট

বর্তমান সৌন্দর্যের ধারা অনুযায়ী ‘সুস্থ ত্বকই সুন্দর ত্বক’। ক্ষতিকর ক্রিম ও লোশন ব্যবহার করে ফরসা হওয়ার চেয়ে নিজস্ব ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন রূপবিশেষজ্ঞরা। আর এ ধারণার ভিত্তিতেই ফেয়ার পলিশ বর্তমানে এত জনপ্রিয়। ফেয়ার পলিশ করলে আপনার স্বাভাবিক ত্বকের উজ্জ্বলতাই প্রকাশ পায়। ফলে এই ট্রিটমেন্ট আপনাকে জোর করে ফরসা করে না। এর পাশাপাশি ত্বকের রোদে পোড়া ভাব ও ক্লান্তি কমায় এই পদ্ধতি। ত্বক মসৃণ হওয়ার আশায় ফেয়ার পলিশ করলে মুখে মেকআপও আরও ভালোভাবে বসে। তাই সব মিলিয়ে বর্তমানে এই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন সৌন্দর্যসচেতন তরুণীরা

ফেয়ার পলিশ কীভাবে করা হয়

ফেয়ার পলিশের প্রক্রিয়া সাধারণত পাঁচ ধাপে সম্পন্ন হয়। মডেল: তমা

শারমিন কচি জানান, ফেয়ার পলিশের প্রক্রিয়া সাধারণত পাঁচ ধাপে সম্পন্ন হয়—ক্লিনজিং, স্ক্রাবিং, পলিশিং ক্রিম বা জেল ব্যবহার, গ্লো মাস্ক এবং শেষে ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন। ক্লিনজিং ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করে ত্বককে পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুত করে। পরের ধাপ, অর্থাৎ স্ক্রাবিং এই ট্রিটমেন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে মৃত কোষ তুলে ত্বককে শ্বাসপ্রশ্বাসে সহায়তা করা হয়। এরপর পলিশিং ক্রিম বা জেল ব্যবহার করা হয়, যা মুখের ত্বককে করে মোলায়েম ও মসৃণ। পরের ধাপে ব্যবহার করা হয় গ্লো মাস্ক, যা ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা আনতে সাহায্য করে। সবশেষে ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা হয়, যা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রেখে ভবিষ্যতের ট্যানিং থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

কারা করাতে পারবেন

মলিন বা রুক্ষ ত্বকের অধিকারী কিংবা রোদে বাইরে থাকার কারণে যাঁদের ত্বকে ট্যান পড়ে গেছে, তাঁদের জন্য ফেয়ার পলিশ বেশ কার্যকর, বলছিলেন শারমিন কচি। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান বা আয়োজনের আগে তৎক্ষণাৎ ত্বক উজ্জ্বল করতে এটি খুবই জনপ্রিয়। পুরুষ-মহিলা উভয়েই করতে পারেন ফেয়ার পলিশ। মুখ, গলা, হাত বা পা—শরীরের বিভিন্ন স্থানে তা করা যায়।

কত দিন পরপর করা উচিত

ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেয়ার পলিশ নেওয়ার বিরতি ভিন্ন ভিন্ন। স্বাভাবিক ত্বকে ১৫ থেকে ২০ দিন পরপরই ফেয়ার পলিশ করা ভালো। শুষ্ক ত্বক যেহেতু সংবেদনশীল হয়, তাই এ ধরনের ত্বকে ২০ দিন বা মাসে একবার নেওয়া যেতে পারে এই ট্রিটমেন্ট। তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২৫ দিন পরপর ফেয়ার পলিশ করতে পারেন। সংবেদনশীল ত্বকে ৩০-৪৫ দিন পরপর এই পদ্ধতি ব্যবহার করা অধিক নিরাপদ। কেননা, খুব ঘন ঘন ফেয়ার পলিশ করলে ত্বকের উপরিভাগে থাকা প্রতিরক্ষামূলক স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ত্বক লালচে বা পাতলা হয়ে যেতে পারে।

ফেয়ার পলিশে ত্বক ফরসা হয় না

ভুল হাতে বা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে ফেয়ার পলিশ করলে ত্বকে জ্বালা, র‍্যাশ, চুলকানি, লাল ভাব বা ব্রণ বাড়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে

ফেয়ার পলিশ ত্বককে জোর করে ফরসা করে না, বরং ত্বকের প্রকৃত উজ্জ্বলতা ও নিজস্ব রং তুলে ধরতে সাহায্য করে বলে জানালেন শারমিন কচি। কেননা ত্বকের প্রকৃত রং নির্ভর করে ব্যক্তির জেনেটিক গঠন ও মেলানিনের পরিমাণের ওপর। ফেয়ার পলিশ কেবল ত্বকের উপরিভাগ পরিষ্কার করে ত্বককে তার স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ফেরাতে সাহায্য করে। তাই এটিকে একটি সাময়িক ব্রাইটেনিং ট্রিটমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা উচিত, দীর্ঘমেয়াদি ত্বক ফরসার পন্থা হিসেবে নয়।

সতর্কতা

ভুল হাতে বা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে ফেয়ার পলিশ করলে ত্বকে জ্বালা, র‍্যাশ, চুলকানি, লাল ভাব বা ব্রণ বাড়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত স্ক্রাবিং বা ঘষাঘষি ত্বককে পাতলা করে দিয়ে রোদে পোড়াভাবের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তাই এ বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। এ ছাড়া ট্রিটমেন্ট নেওয়ার আগে প্যাচ টেস্ট করে তকের ধরন বুঝে প্রোডাক্ট ব্যবহার করা এবং পেশাদারদের সহায়তা নেওয়াও দরকারি জরুরি। আর সর্বশেষ ধাপে ত্বকের সুরক্ষায় অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

কেমন খরচ পড়বে

পারলার ভেদে ফেয়ার পলিশ ট্রিটমেন্টের খরচ আলাদা হয়ে থাকে। সাধারণত ৮০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৬ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে এই সার্ভিসের দাম।