লিপবাম শীতকালের জন্য অপরিহার্য উপাদান
লিপবাম শীতকালের জন্য অপরিহার্য উপাদান

লিপগ্লস না লিপবাম, শীতকালে বেছে নেবেন কোনটি

ঠান্ডা হাওয়া, কম আর্দ্রতা, ধুলাবালু এবং পানিশূন্যতার কারণে এ সময় ঠোঁট খুব সহজেই শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে ফেটে যেতে শুরু করে। অনেকের ক্ষেত্রে ঠোঁট কালচে হয়ে যাওয়া বা জ্বালাপোড়ার সমস্যাও দেখা দেয়। শীতকালে ঠোঁটের এই যত্ন কেবল সৌন্দর্যের বিষয় নয়, বরং ত্বকচর্চার একটি প্রয়োজনীয় অংশ। এ অবস্থায় অনেকেই দ্বিধায় পড়েন, ঠোঁটের চর্চায় লিপগ্লস ব্যবহার করবেন, না লিপবামই হবে সবচেয়ে ভালো সমাধান?

লিপগ্লস, না লিপবাম?

হারমনি স্পা অ্যান্ড বিউটি স্যালনের স্বত্বাধিকারী এবং রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা জানালেন, লিপগ্লস মূলত ঠোঁটকে উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় দেখানোর জন্য ব্যবহৃত একটি প্রসাধনী, যা সাধারণত লিপস্টিকের ওপর একধরনের গ্লসি ফিনিশ আনতে ব্যবহার করা হয়। এটি যেহেতু একটি প্রসাধনসামগ্রী তাই তাৎক্ষণিকভাবে ঠোঁটকে সুন্দর করে তুললেও এর বেশির ভাগই রাসায়নিক উপাদানে তৈরি। তাই লিপগ্লস ঠোঁটের ভেতরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে না। ত্বকের জন্য এই আর্দ্রতাই কিন্তু শীতকালে প্রয়োজনীয়।

শীতে ঠোঁট রাখুন যত্নে

অন্যদিকে লিপবাম শীতকালের জন্য অপরিহার্য উপাদান। লিপবাম ঠোঁটের ওপর একধরনের সুরক্ষাকবচ তৈরি করে, যা ঠোঁটের ভেতরের আর্দ্রতা আটকে রাখে এবং ঠোঁটকে দীর্ঘ সময় রাখে নরম ও মসৃণ। বাজারের বিভিন্ন লিপবামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে, যেমন শিয়া বাটার, ভিটামিন ই, বিভিন্ন কার্যকরী প্রাকৃতিক তেল। লিপবামে থাকা এই উপাদানগুলো ঠোঁটকে পুষ্টি জোগায় এবং ফাটা ঠোঁট দ্রুত সারাতে সহায়তা করে।

লিপবামের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, লিপবাম চাইলে ঘরেই সহজ কিছু উপাদান দিয়ে তৈরি করা যায়, যেখানে কোনো কৃত্রিম সুগন্ধি বা ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের ঝুঁকি থাকে না। সংবেদনশীল ঠোঁটের জন্যও যা এটি উপকারী। খরচও কম।

যেভাবে বাড়িতে বানাবেন লিপবাম

বিটরুট ও পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে লিপবাম বানাতে পারবেন

বাসায় লিপবাম বানাতে প্রয়োজন হবে বিটরুট ও পেট্রোলিয়াম জেলি, জানালেন রাহিমা সুলতানা রিতা। চাইলে বাড়তি সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করতে পারেন ভিটামিন ই ক্যাপসুলও। ১ টেবিল চামচ বিটরুটের রসের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ পেট্রোলিয়াম জেলি পাত্রে নিয়ে নিন। দুটি উপাদান মিশে যেন সঠিকভাবে মিশ্রণ তৈরি হয়, তার জন্য মানতে হবে ডাবল বয়েলার পদ্ধতি। অর্থাৎ, উপাদানগুলো পাত্রে নিয়ে সেই পাত্র সরাসরি চুলায় না বসিয়ে অন্য পাত্রে রাখা গরম পানির ওপর রাখতে হবে। ধীরে ধীরে পেট্রোলিয়াম জেলি কিছুটা নরম হয়ে এলে তাতে মেশাতে হবে বিটরুটের রস। এই মিশ্রণ ঠান্ডা হলে এতে দিয়ে দিতে পারেন দুটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল। ব্যস! তৈরি হয়ে গেল ঘরোয়া লিপবাম। বেশি দিন ব্যবহারের জন্য এই লিপবাম কাচের পাত্রে রাখার পরামর্শ দিলেন তিনি। শুধু সুরক্ষাই নয়, বিটরুটের রস দেওয়ায় এই লিপবাম ব্যবহারে ঠোঁটে হালকা লালচে আভাও পাওয়া যাবে। তাই চাইলে অন্যান্য প্রসাধনী ব্যবহার না করে এই লিপবাম দিয়েই চালিয়ে নেওয়া যাবে ঠোঁটের সৌন্দর্যচর্চা।

লিপবামের যত উপকারিতা

লিপবাম ব্যবহারে ঠোঁট থাকবে নরম ও মসৃণ

শীতকালে দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য লিপবাম সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর সমাধান। ঘুমানোর আগে মোটা করে লিপবাম লাগিয়ে নিলে সারা রাত ঠোঁটের আর্দ্রতা বজায় থাকে। সকালে উঠে টিস্যু বা নরম কাপড় দিয়ে লিপবামের এই স্তর মুছে নিলে ঠোঁটের মৃত কোষ ও ফাটা চামড়াও উঠে আসে। তাই সকালে ঠোঁট লাগে আরও নরম ও মসৃণ। এ ছাড়া বাইরে বের হওয়ার আগে লিপবাম ব্যবহার করলে ঠান্ডা বাতাসের ক্ষতি থেকে ঠোঁট রক্ষা পায়। অনেক লিপবামে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষার জন্য এসপিএফ থাকে, যা ঠোঁটের কালচে হওয়া প্রতিরোধ করে। সব মিলিয়ে বলা যায়, শীতকালে ঠোঁটের প্রকৃত যত্ন নিতে চাইলে লিপগ্লস নয়, লিপবামই বরং কার্যকর সমাধান।