জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে কম খরচে মাস্টার্সের নানা সুযোগ। ভর্তি হওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা কী? কোন কোন প্রোগ্রাম চালু আছে? যাঁরা পেশাদার মাস্টার্স ডিগ্রি নিতে চান, তাঁদের জন্যই–বা কী কী সুযোগ আছে? এই লেখাতেই আছে সব প্রশ্নের উত্তর।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেসের অধীন পেশাদার এমবিএ প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ আছে। প্রধান বিষয় হিসেবে আছে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং। যেকোনো ডিসিপ্লিনে ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকলেই আবেদন করতে পারবেন। এ বছর আবেদনের সময় আছে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপেন স্কুল পরিচালিত মাস্টার অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (এমডিএস) প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারেন। পেশাজীবীদের কথা মাথায় রেখে ক্লাস হয় সাধারণত শুক্র ও শনিবারে। দুই বছর মেয়াদি মাস্টার্সে আছে চারটি সেমিস্টার। আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা মানবিক, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষাসহ যেকোনো বিষয়ে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে তিন-চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি। কোর্স ফি প্রায় ১২ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রথম সেমিস্টারে ভর্তি ফি প্রায় ১৯ হাজার ১০০ টাকা।
২ বছর মেয়াদি মাস্টার্স অব ডিজঅ্যাবিলিটি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রামেও ভর্তির সুযোগ আছে। যেকোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ন্যূনতম ২.৫ সিজিপিএ নিয়ে ফিজিওথেরাপি, ডিজঅ্যাবিলিটি ম্যানেজমেন্ট, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, হেলথ সায়েন্স, মেডিকেল সায়েন্স, বায়োলজিক্যাল সায়েন্স বিষয়ে স্নাতক এবং জীববিজ্ঞানসহ এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ৬ দশমিক ৫ থাকতে হবে। ৬০ নম্বরের এমসিকিউ, ২০ নম্বরের লিখিত ও ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে আপনি ভর্তি হতে পারবেন।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি পরিচালিত মাস্টার অব পাবলিক হেলথ প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ আছে। হেলথ সায়েন্স ও বায়োলজিক্যাল সায়েন্স বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা আবেদন করতে পারবেন। বাউবির গাজীপুর ক্যাম্পাসসহ প্রায় ১২টি স্টাডি সেন্টার থেকে পড়ার সুযোগ আছে এই মাস্টার্সে।
পুরোনো কোর্স কারিকুলামের পরিবর্তে এখানে এমন সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার চাহিদা বর্তমান শ্রমবাজারে আছে। হাতে–কলমে শেখা ও ল্যাবের কাজকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই প্রোগ্রামগুলোর সনদও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ফলে বাংলাদেশের বাইরেও এই ডিগ্রির গ্রহণযোগ্যতা আছে। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে পড়তে যাচ্ছেন, কাজ করছেন। নারীদের জন্য এই প্রোগ্রামগুলো বিশেষভাবে উপযোগী। যাঁরা কোনো না কোনো বাধার কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি, তাঁরা এখন নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়তে এই প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তি হতে পারছেন। এসব মাস্টার্স ডিগ্রিতে খরচ তুলনামূলক অনেক কম।মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ, অধ্যাপক, স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
মাস্টার্স ইন ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিসে ভর্তি হতে পারবেন। তিন বা চার বছরের স্নাতক বা সমমান ডিগ্রি পাস করেছেন যাঁরা, আবেদনের সুযোগ আছে তাঁদের জন্য।
মাস্টার্স অব আর্টস (এমএ) ও মাস্টার অব সোশ্যাল সায়েন্স (এমএসএস) প্রোগ্রামের সময়সীমা এক বছর (২ সেমিস্টার) এবং নিবন্ধনের মেয়াদ থাকবে দুই বছর।
মাস্টার অব ল (এলএলএম) প্রোগ্রামের সময়সীমা এক বছর এবং নিবন্ধনের মেয়াদ থাকবে দুই বছর।
বাউবির স্কুল অব এডুকেশনে মাস্টার অব এডুকেশন (এমএড) প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ আছে। অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড/বিএমএড/ডিপ-ইন-এড/বেল্ট/বিএজিএড/বিপিএড/ডিপিএড বা সমমানের ডিগ্রিসহ ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে।
বিভিন্ন বিষয়ে মাস্টার্সে আবেদন ফি: কোর্স ও বিষয়ভেদে আবেদনের জন্য খরচ পড়বে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অন-ক্যাম্পাস (গাজীপুর) মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ আছে। এ প্রোগ্রামের মেয়াদ এক বছর। অর্থাৎ ছয় মাস মেয়াদি দুটি সেমিস্টারে।
আর্টস গ্রুপে বাংলা, ইতিহাস, ইসলামিক অধ্যয়ন, ইংরেজি; সোশ্যাল সায়েন্স গ্রুপে সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান; ন্যাচারাল সায়েন্স গ্রুপে রসায়ন, পরিসংখ্যান, কম্পিউটারবিজ্ঞান, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান; লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স গ্রুপে প্রাণিবিজ্ঞান, ভূগোল, উদ্ভিদবিজ্ঞান, গার্হস্থ্য অর্থনীতি; বিজনেস স্টাডিজ গ্রুপে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, মার্কেটিং, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে পড়ার সুযোগ আছে।
আমাদের মাস্টার্সের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালা। যাঁরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতা বাড়াতে চান, তাঁদের জন্য এই সুযোগ অনন্য। যাঁরা বর্তমানে কোনো পেশায় যুক্ত, তাঁরাও সুবিধামতো সময়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবেন। এটি তাঁদের চাকরির পাশাপাশি নতুন দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে আমরা বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছি। খুবই কম খরচ আর নির্দিষ্ট শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই বিভিন্ন মাস্টার্স শেষ করতে পারছেন শিক্ষার্থীরা।অধ্যাপক মো. আবুদ্দারদা, ডিন, স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্র; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
এক বছর মেয়াদি মাস্টার্স ফাইনাল প্রোগ্রামে ভর্তির ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা ইউজিসি অনুমোদিত বাংলাদেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চার বছর মেয়াদি স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি থাকতে হবে। স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ/শ্রেণি বা সিজিপিএ ২.৫০ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। স্নাতক (পাস) ও প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স পরীক্ষায় পৃথকভাবে ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ/শ্রেণি বা সিজিপিএ ২.৫০ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাও এ ভর্তি কার্যক্রমে আবেদন করতে পারবেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজেও মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে পছন্দের কলেজে গিয়ে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। বিস্তারিত।
পেশাদার মাস্টার্স: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষে ‘মাস্টার্স প্রফেশনাল’ কোর্সে ভর্তির সুযোগ আছে। বিএড, বিপিএড, বিএমএড, বিএসএড, এমএড, এমএসএড, এমপিএড, এমবিএ ইন টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, এমএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) প্রোগ্রামে ভর্তি কার্যক্রম চালু আছে। এ বছর আবেদনের শেষ তারিখ আগামী ১৭ অক্টোবর। বিস্তারিত দেখুন এখানে।