ঝলমলে একটা দিন। বেলা গড়িয়ে যখন সূর্যাস্তের খানিকক্ষণ বাকি, ঠিক তখন হলুদ আর কমলার মাঝামাঝি এক উষ্ণ রঙের আভা ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। দিন-রাতের চক্রের এই ক্ষণস্থায়ী সময়টুকুই গোধূলিবেলা। আকাশটা আবির লাল হয়ে যাওয়ার আগপর্যন্ত এর ব্যাপ্তি। গোধূলির এই মায়াবী আলোয় চারপাশটা দেখায় সুন্দর। এ জন্য গোধূলির আলোকে কনে দেখা আলোও বলা হয়। ছবি তোলার জন্যও গোধূলি চমৎকার এক সময়।
গোধূলির প্রধানতম বৈশিষ্ট্য এর আলো। শব্দ এবং ঘ্রাণও দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাখির ডাক ও প্রকৃতির অন্যান্য শব্দ ঝিমিয়ে আসতে থাকে এই সময়ে। কর্মব্যস্ত দিনের পড়ন্ত বেলায় মানবদেহও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় এমন হলুদ-সোনালি আলোর প্রভাব পড়ে মনে। এদিকে বিকেলের ধুলা চারপাশের আর সবকিছুর সঙ্গে মিলেমিশে গিয়ে একটা অন্য রকম ঘ্রাণেরও সৃষ্টি হয়। আলো, শব্দ আর ঘ্রাণ—এই তিনের মধ্যেই লুকিয়ে আছে গোধূলির মায়ার রহস্য। এমনটাই বলছিলেন আলোকচিত্রী হাসান সাইফুদ্দীন চন্দন।
চন্দন আরও জানান, গোধূলিবেলার উজ্জ্বল আভায় ফুটে ওঠে সৌন্দর্য। এই সময়ের কৌণিক আলোয় যে কারও চেহারার গড়ন এবং গঠন ভালোভাবে বোঝা যায়। ছবিও হয় দারুণ। নিঝুম হয়ে আসা প্রকৃতির কোলে মন চাঙা হয়ে ওঠে।
সৌন্দর্যপিপাসু মন খুঁজে নেয় সুন্দরকে। গোধূলিবেলার নান্দনিকতাই এই সবকিছুর উৎস। এই সময়ে কনে দেখার বিষয়টির প্রচলনও ছিল ঠিক এ কারণেই। বর-কনে উভয় পক্ষে একটা ইতিবাচকতা বিরাজ করে এই সময়ে।
দিন ও রাতের সন্ধিক্ষণ এই গোধূলি। আবহমান গ্রামীণ জীবনে এই সময়ের একটা বিশেষ চিত্রই মোটামুটিভাবে নির্দিষ্ট। রাখাল গরুর পাল নিয়ে ফিরছে। পথ ধুলায় ধূসর। দিনের কাজ সেরে ঘরে ফেরার মুহূর্ত। নিজেকে হারিয়ে খুঁজে পাওয়ার মুহূর্ত।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং কবি খালেদ হোসাইন গোধূলির সঙ্গে সৌন্দর্যের সম্পর্কটাকে ব্যাখ্যা করলেন কাব্যের আঙ্গিকেই। অস্তগামী সূর্যের মায়াবী আলোয় চারপাশের মানুষ এবং দৃশ্যপটকে অনন্যসুন্দর দেখায়। এ যেন অনন্ত সুন্দরের সমাবেশ।
সে সৌন্দর্যের ব্যাপ্তি বিশাল, বলা যায় সর্ববিস্তারী সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্যে মানুষের মন মোহগ্রস্ত হয়। গোধূলির আকাশে মেঘের বিন্যাসও বৈচিত্র্যময়। একটি গোধূলিবেলা কখনোই আরেকটি দিনের গোধূলিবেলার মতো হয় না। আলোর এই বৈচিত্র্যময় রূপের মধ্যে আনন্দ-বেদনার অদ্ভুত এক অনুভূতি খেলে যায় হৃদয়জুড়ে।
এই অনুভূতির মনস্তাত্ত্বিক দিকটাও জেনে নেওয়া যাক। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক বলেন, মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই সুন্দরকে ভালোবাসে। গোধূলিবেলার প্রকৃতিকে ভীষণ মায়াময় দেখায়। এই সৌন্দর্য মানুষের আবেগীয় ভারসাম্যের সঙ্গে যুক্ত। তাই অনুভূতির জগতেও ঘটে এক অনন্য পরিবর্তন।