সাজ

গয়নায় বাঙালিয়ানা

সোনা, রুপা, হীরা, মুক্তার গয়নার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিন দিন বাড়ছে দেশি গয়নার জনপ্রিয়তা। সেই সঙ্গে বেড়েছে দেশি উপকরণ ও নকশাশৈলী নিয়ে নিরীক্ষা। মাটি, কাঠ, কড়ি, ঝিনুক, মেটাল, লতা, কাপড়, ফলের বীজ, তালপাতা, গামছা এমনকি কচুরিপানা থেকেও তৈরি হচ্ছে গয়না। অনবদ্য নকশার এসব গয়না ফ্যাশনে আনছে ভিন্ন মাত্রা। বিশেষ দিবস ছাড়াও নিত্যদিনের অফিস, ক্লাস, আড্ডা—সব পরিবেশেই মানিয়ে যায় এসব গয়না। শাড়ি, কুর্তা বা সালোয়ার–কামিজ—সবকিছুর সঙ্গেই দারুণ মানানসই এসব গয়না।

বৈচিত্র্যময় নকশার গয়নাগুলো তৈরি করা হয়েছে দেশজ উপকরণে। মডেল : পূর্বা, গয়না : খুঁত, শাড়ি : বিশ্বরঙ
ছবি : কবির হোসেন

মৃৎ-এর কর্ণধার ও নকশাকার মাধুরী দেবী বলছিলেন, প্রকৃতি থেকে উপকরণ নিয়ে তৈরি হয় মাটির গয়না। মাটি, কাঠ, কড়ি মাঝখানে হারিয়ে গিয়েছিল, যা এখন বিভিন্ন নকশার মাধ্যমে আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে। আগে বৈশাখ মানেই ছিল মাটির গয়না। সেই গয়নায় নতুনত্ব আনতে বিভিন্ন রকম পাতা, পাখি, ফুল কিংবা প্রজাপতির আদল তৈরি করা হয়।

গয়নায় বাড়ছে কড়ির ব্যবহার।

সঙ্গে তামা, কাঠ, রুদ্রাক্ষ বা কড়ি যোগ করে আনা হয় ভিন্নতা। মালার মতো গেঁথে ফুলের মালার মতো কড়ি দিয়ে তৈরি করা হয় মালা ও নানা রকম গয়না।

মেটালের গয়নাগুলো মূলত তৈরি হয় দস্তা, পিতল, কপার দিয়ে। তাতে যোগ হয় পুঁতি, পাথর, বাঁশ, সুতা, পাট, কাপড়সহ বিভিন্ন উপাদান, যা এ ধরনের গয়নার বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। মেটালের নানা রং ও ডিজাইনের এসব গয়না সব ধরনের পোশাকের সঙ্গেই দারুণ মানায় বলে এর চাহিদাও একটু বেশি। বিভিন্ন উৎসবের ক্ষেত্রে এসব গয়নার তুলনা নেই। একদিকে যেমন এটি আপনার বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, তেমনি তুলে ধরে আপনার রুচি।

পুঁতি দিয়ে তৈরি গয়না মানিয়ে যায় সব পোশাকের সঙ্গেই।

কাকতাড়ুয়ার কর্ণধার ও নকশাকার মাহমুদুল হাসান ঐতিহ্যবাহী গামছাকে মূল উপকরণ রেখে গয়নার ডিজাইন করেন। অনুষঙ্গ হিসেবে কখনো মুখোশ, কখনো কাপড়ের ফুল প্রাধান্য পায়। ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ছাত্র হওয়ার সুবাদে দেশি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে মাথায় রেখে গামছাকে গয়নার উপকরণ হিসেবে বেছে নিয়েছেন বলে জানান তিনি। গামছার সঙ্গে পাট, কড়ি, কাপড়, সুতা ইত্যাদি দেশি উপকরণ থেকেই একেকটি গয়না তৈরি করেন।

পুঁতি দিয়ে তৈরি গয়না অধিকাংশ পোশাকের সঙ্গেই মানায়। ছোট, বড়, গোল, চৌকোনা ইত্যাদি আকারের পুঁতির সঙ্গে কাঠি, কাচ, বিভিন্ন স্টোন ও মেটালের সমন্বয় করে নকশায় আনা হচ্ছে বৈচিত্র্য। কয়েক লহরের মালা একসঙ্গে করে তাতে কাঠ বা মেটালের বিডস দিয়ে তৈরি মালাগুলো বেশ আকর্ষণীয়। ক্রিস্টাল বিডসের সঙ্গে পুঁতি যোগ করে তৈরি হয় নানা নকশার গয়না।

দেশীয় উপকরণে তৈরি এসব গয়না ফ্যাশনে আনছে ভিন্ন মাত্রা।

সব ধরনের পোশাকের সঙ্গে কাঠের তৈরি গয়না মানানসই। কাঠকে নির্দিষ্ট আকারে কেটে বার্নিশ করে তৈরি হয় এসব গয়না। আঁকা হয় বিভিন্ন রকমের ছবি। কোনো কোনোটায় ফুটিয়ে তোলা হয় বিখ্যাত ব্যক্তিদের অবয়ব। ফ্রিদা কালো, নজরুল থেকে শুরু করে গ্রামবাংলার নারীও রয়েছেন এই তালিকায়। আবার কোনোটায় ফুটিয়ে তোলা হয় রিকশাচিত্র, বিভিন্ন ছবি, জ্যামিতিক নকশা। আবার একটা কাঠের টুকরোর সঙ্গে আরও কয়েকটি টুকরো বিভিন্ন মেটাল দিয়ে যুক্ত করে বানানো হয় কাঠের গয়না।