তরুণদের ফ্যাশন জগতে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ক্লাব

ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ভবিষ্যতের ফ্যাশন ডিজাইনারদের সংযোগ তৈরি করতে কাজ করে চলেছে দেশের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ক্লাব। সম্প্রতি বুটেক্স ও বিইউএফটি-এর ফ্যাশন ক্লাবের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফ্যাশন শো।

গত ২২ অক্টোবর আয়োজন করা হয় ‘জেনরা ফ্যাশন অডিসি ২০২৫’
তরুণদের ফ্যাশন জগতে বুটেক্স ও বিইউএফটির ফ্যাশন ক্লাব

বুটেক্স ফ্যাশন সোসাইটি

২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ফ্যাশন শো দিয়ে শুরু হয় বুটেক্স ফ্যাশন সোসাইটির যাত্রা। ভবিষ্যতের ফ্যাশন ডিজাইনারদের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিতেই ক্লাবটির সূচনা হয়েছিল। যেখানে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা কাজে লাগাতে পারবেন নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আর সৃজনশীতলতা।

দুই বছরের মাথায় তাঁরা এখন বাংলাদেশের ক্যাম্পাসভিত্তিক সবচেয়ে বড় ফ্যাশন প্রতিযোগিতার সহ-আয়োজক। প্রায় দুই মাসের দীর্ঘ প্রস্তুতি শেষে ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান ‘জেনরা’র সহযোগিতায় ‘জেনরা ফ্যাশন অডিসি ২০২৫’ শীর্ষক সেই আয়োজনই হয়ে গেল গত ২৫ অক্টোবর। আয়োজনের থিম ছিল ‘ট্রেডিশন অব টুমরো’।

বাংলার ঐতিহ্যকে কীভাবে আধুনিক ফ্যাশনে পরিণত করা যায়, কীভাবে দুটি ধারার মেলবন্ধন ঘটানো যায়, সেটিই ছিল লক্ষ্য। উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা আফজাল হোসেনসহ খ্যাতিমান ফ্যাশন ডিজাইনাররা।

শুধু ফ্যাশন শো নয়, সারা বছরই সোসাইটির কোনো না কোনো কার্যক্রম চলতে থাকে। ফ্যাশন অলংকরণ, ড্রেস মেকিং, নকশা প্রতিযোগিতাসহ ক্যারিয়ার গ্রুমিং ও মেন্টরশিপ প্রোগ্রামেরও আয়োজন করে থাকে তারা। নিয়মিত ল্যাবওয়ার্কের অংশ হিসেবে আয়োজন করে প্যাটার্ন ড্রাফটিং, এমব্রয়ডারি মাস্টারিং, সারফেস অর্নামেন্টেশন ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন কর্মশালা।

‘জেনরা ফ্যাশন অডিসি ২০২৫’ এর থিম ছিল ‘ট্রেডিশন অব টুমরো’

আবার টেকসই ডিজাইন, ট্রেন্ড বিশ্লেষণ, উপস্থাপন কৌশল ও পোর্টফলিও উন্নয়ন বিষয়ে বিভিন্ন সেশনেরও আয়োজন করে তারা। শিক্ষকদের পাশাপাশি টেক্সটাইল জগতের অভিজ্ঞ লোকেরা সেখানে যুক্ত থাকেন। কারণ, ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির কাজ শুধু পোশাক তৈরিই না, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়া। আইডিয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপেই প্রয়োজন সৃজনশীলতা।

বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুন প্রজন্ম নিজেকে যাতে একাত্ম করতে পারে, ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পগুলোকে আধুনিক উপায়ে হাজির করছে বুটেক্স ফ্যাশন ক্লাব। জামদানি, নকশিকাঁথা, মসলিন, হ্যান্ডলুম ও রিকশাচিত্র নিয়ে বেশকিছু ফিউশনধর্মী কাজও ক্লাবটি করেছে।

বুটেক্স ফ্যাশন সোসাইটির বর্তমান চিফ সুদীপ্ত বনিক বলেন, ‘আমরা যা পরি, তা আমাদের মানসিক অবস্থা, আত্মবিশ্বাস ও দুর্বলতাকে প্রকাশ করে। কারও জন্য পোশাক নিজেকে আত্মপ্রকাশ করার মাধ্যম, কারও জন্য কমফোর্ট জোন, আবার কারও জন্য হতে পারে আত্মপরিচয় ফিরে পাওয়ার উপায়। আমরা নিজেকে যেভাবে দেখি, ফ্যাশনের মাধ্যমে সেভাবেই নিজেকে গড়ে তুলি। এক কথায়, আমাদের চিন্তাভাবনাই আমাদের পোশাকে ফুটে ওঠে।’

দেশের ফ্যাশনকে আরও সমৃদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছে এই ক্লাব। কয়েক বছর পর ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে স্টুডেন্ট প্ল্যাটফর্মের কথা উঠলে যেন বুটেক্স ফ্যাশন সোসাইটির নাম সবার আগে থাকে, এটাই তাদের চাওয়া।

ডিজাইন, মডেলিং এবং প্রোডাকশন টিমের সমন্বয়ে ‘র নেশন’ ছিল পেশাদার মানের একটি ফ্যাশন শো

বিইউএফটি ফ্যাশন ক্লাব

ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংযোগ তৈরি এবং তাঁদের প্রতিভা প্রদর্শনের সুযোগ করে দিতেই ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট যাত্রা শুরু করে বিইউএফটি ফ্যাশন ক্লাব। ছোট পরিসরে শুরু করলেও ক্লাবটির লক্ষ্য ছিল বিশাল। বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা যাতে তাঁদের সৃষ্টিশীল চিন্তা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা উন্নত করতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে বিইউএফটি ফ্যাশন ক্লাব।

বিইউএফটি ফ্যাশন ক্লাবের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ফ্যাশন শো ও রানওয়ে ইভেন্ট, কর্মশালা ও ট্রেনিং সেশন, ফটোগ্রাফি ও স্টাইলিং এক্সিবিশন, ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং সেমিনার, আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সহযোগী প্রকল্প ইত্যাদি। ক্লাবটির কার্যক্রম এখন আর শুধু বিশ্ববিদ্যালয়েই সীমাবদ্ধ নেই। বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ড, ডিজাইনার, ফটোগ্রাফার এবং ইভেন্ট অর্গানাইজারদের সঙ্গেও নিয়মিত কাজ করছে তারা।

সম্প্রতি বিইউএফটি ফ্যাশন ক্লাব, যেমন একটি ফ্যাশন শোতে ‘র নেশন’-এর কিছু ডিজাইন উপস্থাপন করে। ডিজাইন, মডেলিং এবং প্রোডাকশন টিমের সমন্বয়ে এটি ছিল পেশাদার মানের একটি ফ্যাশন শো। এভাবে অন্যান্য ফ্যাশন ব্র্যান্ডের সঙ্গে সরাসরি নেটওয়ার্কিং করার সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি আয়োজন শিক্ষার্থীদের নতুন নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ করে দিচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের প্রকৃত ফ্যাশন প্রোডাকশন, ইভেন্ট প্ল্যানিং, টিমওয়ার্ক, মিডিয়া কমিউনিকেশন এবং প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিংয়ের বাস্তব অভিজ্ঞতা দেয় এই ক্লাব। ক্লাবটিতে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট টিম, ক্রিয়েটিভ মিডিয়া টিম, ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং টিম সক্রিয়ভাবে কাজ করে। এসব টিমের সদস্যরা এই সেক্টরগুলোতে কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।

২০১৫ সালের ৬ আগস্ট যাত্রা শুরু করে বিইউএফটি ফ্যাশন ক্লাব

ক্লাবের বর্তমান সহসভাপতি নাইম চৌধুরী বলেন, ‘নিজস্ব ডিজাইন, থিম ও সৃজনশীল ধারণা তৈরিতে শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয় ক্লাব। প্রতিটি প্রজেক্ট বা ইভেন্টে শিক্ষার্থীরাই মূল পরিকল্পনা ও কনসেপ্ট তৈরি করে, পরে দলগতভাবে যা উন্নত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মেন্টররা এসব কার্যক্রমে নিয়মিত দিকনির্দেশনা, কারিগরি পরামর্শ ও বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সহায়তা দেন। তাঁদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা ফেব্রিক নির্বাচন থেকে শুরু করে কালার থিওরি, গার্মেন্ট কনস্ট্রাকশন, প্রেজেন্টেশন ও স্টাইলিং—সবকিছুতেই পেশাদার মানের কাজ করতে শেখে।’

ভবিষতে বৃহত্তর আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফ্যাশন সপ্তাহ, কর্মশালা এবং টেকসই ফ্যাশন নিয়ে কাজ করতে চায় বিইউএফটি ফ্যাশন ক্লাব।