
ঝুলিতে আছে ‘নয়া দামান’, ‘ঝুমকা’, ‘বেণি খুলে’র মতো জনপ্রিয় সব গান। ‘এফসি ২৬’-এর প্লেলিস্টেও জায়গা করে নিয়েছে ‘কী করি’ গানটি। লম্বা সময়ের জন্য ঢাকায় এসেছেন সেই মুজা। ভক্তদের জন্য নতুন গানের সঙ্গে নিজেকেও নতুন করে তৈরি করছেন। তাঁর সঙ্গে আড্ডায় বসেছিল ‘নকশা’।
২০২৩ সালের কথা, নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারের বিশাল বিলবোর্ডে স্পটিফাইয়ের বিজ্ঞাপনে ভেসে উঠল বাংলাদেশি এক শিল্পীর ছবি। তাতে লেখা ‘দেশি গান শুনুন স্পটিফাইয়ে।’
উপমহাদেশের বাঘা বাঘা শিল্পীকে টপকে দেশি গানের ট্রেন্ডে থাকা সেই আর্টিস্টের নাম মুজা।
সনদে নাম মুজাহিদ আবদুল্লাহ। ফোক ও আধুনিক গানের সংমিশ্রণে তৈরি করেছেন বাংলা গানের নতুন এক ধারা। সেই ধারার প্রতিটি গানই যেন এখন ট্রেন্ড।
মুজার জন্ম সিলেটের ওসমানী নগরে। চার বছর বয়সে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেই জন্মে গানের প্রতি ভালোবাসা। মার্কিন র্যাপার ক্রিস ব্রাউনের গান শুনে সিদ্ধান্ত নেন নিজেও গান করবেন। কিন্তু নিজের গলার ওপর খুব একটা ভরসা ছিল না। তাই শুরুটা গানের প্রোডাকশন দিয়েই করেন।
স্প্যানিশ গানের জিঙ্গেল, হিন্দি গানের প্রোডাকশনে কাজ করে করে গানের খুঁটিনাটি শিখেছেন। আস্তে আস্তে বন্ধুদের অনুপ্রেরণায় নিজেই শুরু করেন গান। কিছুদিন কাভার করার পর সিদ্ধান্ত নেন বাংলায় গান করবেন। কিন্তু এত দিন দেশের বাইরে থাকায় বাংলায় যে কিছুটা মরচে পড়ে গেছে।
নতুন করে শেখা শুরু করলেন বাংলা, ‘বাসায় মা-বাবা নিয়মিত বাংলা নাটক দেখত, সেখান থেকে একটু একটু করে বাংলা শিখতাম। বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের নাটক আমার অনেক পছন্দের ছিল। তারা তিনজন, যমুনার জল দেখতে কালো, উড়ে যায় বকপক্ষী, হাবলংগের বাজারে বাংলা শিখতে সাহায্য করেছে।’
২০১৮ সালে প্রথম ‘বন্ধুরে’ দিয়ে বাংলা গানের জগতে পা রাখেন মুজা। তবে মুজাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয় ‘নয়া দামান’। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে এসেছে ‘ঝুমকা’, ‘বেণি খুলে’, ‘ঢোলের তালে’, ‘হারালে আড়ালে’র মতো গান। প্রতিটিই তরুণদের মুখে মুখে আলাদা করে স্থান করে নিয়েছে।
কয়েকটি গানের কাজ নিয়ে এবার লম্বা সময়ের জন্য ঢাকায় এসেছেন মুজা। একদিকে চলছে নতুন গানের প্রস্তুতি, অন্যদিকে নতুন করে নিজেকে ফিট করে তোলার লড়াই, ‘বেশ কয়েক বছর ধরেই লক্ষ করছিলাম, শরীরে মেদ একটু বেড়ে গিয়েছে। প্রতিদিনের কাজ করার সময় শরীর থেকে যে সহায়তা পেতাম, তা পাচ্ছি না। তখনই সিদ্ধান্ত নিই শরীর কমাতে হবে।’
শরীর কমাতে প্রতিদিনের একটি রুটিন বানিয়ে নিয়েছেন মুজা, ‘আমার প্রতিদিনের রুটিনে আছেই তিনটি জিনিস—মিউজিক, জিম আর কফি।’ ঘড়ি ধরে ঠিক সকাল ৮টায় ঘুম থেকে ওঠেন।
এরপর এক ঘণ্টা জিম। জিম শেষে আধঘণ্টা সনা ও পুলে। এরপর চলে যান স্টুডিওতে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে টানা কাজ। কাজ শেষে ভিডিও গেমে মশগুল হয়ে পড়েন। সবশেষে ডিনার শেষে রাত ১১টার মধ্যে বিছানায়।
দিনে এখন মাত্র এক বেলা খান মুজা, ডিনারে; সেটাও পরিমিত। যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করেন। তেল, চর্বি, চিনি একেবারে বাদ। নিয়মিত খাবার টেবিলে তাঁর পছন্দ বাঙালি খাবার।
ভাত, ডাল, ভর্তার সঙ্গে মুরগির গ্রিল কিংবা মাছভাজা। আর ‘চিট ডে’তে পছন্দ পুরান ঢাকার তেহারি। জিম শেষে কাজের ফাঁকে থাকে এক কাপ কফি। চিনি ছাড়া দুধ–কফিতেই স্বাচ্ছন্দ্য।
শখের বশে রান্না শিখেছিলেন মুজা। বিদেশি কোনো পদ নয়, একেবারে খাঁটি বাঙালি রান্না। ভাত-ভর্তা-ডাল যেমন রান্না করতে পারেন, তেমনই বারবিকিউ তৈরিতেও পাকা হাত। বাসায় থাকলে বেশির ভাগ সময় রাতের খাবার নিজেই তৈরি করেন।
মুজার ফ্যাশন পুরোপুরি মর্জিনির্ভর। তবে বাংলাদেশে এলে লিনেন কাপড়েই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, ‘ঢাকায় তুলনামূলক একটু বেশি গরম পড়ে, তাই লিনেনের টি-শার্ট পরতেই ভালো লাগে।’ সুতির শার্টও পরেন।
আবার জিমের জন্য আলাদা পোশাক-আশাক রয়েছে, ‘মন ও কাজের ওপর নির্ভর করে আমার স্টাইল।’ টি-শার্ট, ট্রাউজারের বাইরে বিজনেস ক্যাজুয়াল পোশাকে স্বচ্ছন্দ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, এমনকি কনসার্টেও তাঁকে ক্যাজুয়াল পোশাকেই দেখা যায়।
এ ছাড়া অলংকারের প্রতি আলাদা একটা ভালো লাগা আছে। সংগ্রহে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গলায় চেইন, কানের দুল ও হাতের আংটি।
স্নিকার্সের প্রতি আলাদা আগ্রহ আছে। আছে নাইকির বেশ ভালো সংগ্রহ। এ ছাড়া যেটা স্টাইলের সঙ্গে মানানসই, যেটায় আরাম পান, সেটাই পছন্দ করেন, সেটাই কেনেন।
কাজের বাইরে ফুটবলের প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা আছে। ছোটবেলায় তাঁর খেলা দেখে ইতালি নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল এক এজেন্ট। কিন্তু মা–বাবা রাজি না হওয়ায় তাঁর আর ফুটবলার হয়ে ওঠা হয়নি।
না হলে হয়তো হামজা-শমিতদের সঙ্গী হতেন মুজা। মাঠে সঙ্গী না হতে পারলেও বাংলাদেশি ফুটবলারদের সঙ্গে মুজার বেশ সখ্য। নিয়মিত মাঠে থাকেন, খেলাও দেখেন।
মাঠে খেলার স্বপ্ন পূরণ না হলেও ভিডিও গেমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফুটবল খেলে কাটান মুজা। সময় পেলেই কন্ট্রোলার নিয়ে বসে পড়েন ‘ইএ স্পোর্টস এফসি’ খেলতে।
ফুটবলভিত্তিক ভিডিও গেমটি অবশ্য পুরোনো ‘ফিফা’ নামেই পরিচিত বেশি। পছন্দের গেমের প্লেলিস্টে জায়গা করে নিয়েছে নিজের গান। প্রথম বাংলাদেশি আর্টিস্ট হিসেবে মুজার গান ‘কী করি’ জায়গা করে নিয়েছে ‘এফসি ২৬’-এর প্লেলিস্টে।
মুজা নিজেও জানতেন না, ‘গানটি মূলত মামজি স্টুডিওসের। তাই ওর সঙ্গেই প্রথম যোগাযোগ করে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠি, দেখি ওর মেসেজ, “আমাদের গান জায়গা করে নিয়েছে ভিডিও গেমে”।’
ফুটবলভিত্তিক এই ভিডিও গেমের প্লেলিস্টে পুরো বিশ্বের ইন্ডি–আর্টিস্টদের গান স্থান পায়। মূলত গেমের ব্যাকগ্রাউন্ডে গানগুলো চলতে থাকে। এই ৮ নভেম্বরে মুক্তি পেয়েছে মুজার নতুন গান ‘মাইয়া’। সানজানার সঙ্গে জুটি করে কাওয়ালি ঘরানার এই গান ইতিমধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।