পুরুষের ফ্যাশনে এক বড় পরিবর্তনের বছর ২০২৫। এ বছর পুরুষের পোশাকে প্রাধান্য পেয়েছে আরাম, ব্যবহারিকতা, সচেতনতা ও ব্যক্তিত্ব। ইউরোপ ও আমেরিকার রানওয়ে থেকে শুরু করে এশিয়ার স্ট্রিট স্টাইল—সবখানেই যে ট্রেন্ড বা ধারাগুলো দাপট দেখিয়েছে, সেগুলোর প্রতিফলন বাংলাদেশের ফ্যাশন বাজারেও দেখা গেছে।

২০২৫ সালে আঁটসাঁট ফিট দেখা যায়নি বললেই চলে। ঢিলেঢালা কিন্তু পরিপাটি কাটের ব্লেজার, শার্ট, ওয়াইড-লেগ ট্রাউজার ও লুজ-ফিট প্যান্ট চলেছে বেশি। এই রিলাক্সড টেইলারিং একদিকে যেমন আরামদায়ক, অন্যদিকে স্টাইলেও কোনো আপস করে না। শার্টের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে কর্ড কাপড়ের ঢিলেঢালা ও অতিরিক্ত বড় আকারের ক্যাজুয়াল শার্ট। তরুণেরা অফিস, ক্যাজুয়াল আড্ডা বা ইভেন্ট—সব ক্ষেত্রেই এই সিলুয়েট বেছে নিয়েছেন।
২০২৫ সালে আরও শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে ব্যবহারিক ফ্যাশন। কার্গো জগার, রিপস্টপ প্যান্ট ও মাল্টি-পকেট জ্যাকেট—সবখানে দেখা গেছে একাধিক পকেট, টেকসই কাপড়। জিপারের মতো সাধারণ জিনিসেও দেখা গেছে নকশার নানা ভাবনা। শহুরে জীবনের প্রয়োজনের সঙ্গে মানানসই হওয়ায় বাংলাদেশের তরুণদের কাছেও এই ইউটিলিটি স্টাইল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
চোখে পড়েছে নব্বইয়ের দশক ও ২০০০-এর শুরুর ফ্যাশনের প্রতি নস্টালজিয়া। নতুন রূপে ফিরেছে ব্যাগি জিনস, রাগবি শার্ট, গ্রাফিক টি-শার্ট, বাকেট হ্যাট ও রেট্রো স্পোর্টসওয়্যার। আগের চেয়ে উন্নত কাপড় ও ক্লিন কাটের কল্যাণে এই ধারা এখন আরও পরিশীলিত। বাংলাদেশের তরুণদের স্ট্রিট স্টাইলেও এই প্রভাব স্পষ্ট।
২০২৫ সালে জ্যাকেট হয়ে উঠে পুরো লুকের মূল আকর্ষণ। ইনসুলেটেড বোম্বার জ্যাকেট, ক্ল্যাসিক লেদার ব্লুজ এবং অতিরিক্ত বড় আকারের ট্রেঞ্চ কোট বিশ্বজুড়ে পেয়েছে জনপ্রিয়তা। শীতকালে ঢাকার রাস্তায় বা সন্ধ্যার আড্ডায় এই আউটারওয়্যারগুলো স্টাইল স্টেটমেন্ট হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
এই বছর লেয়ারিং শুধু প্রয়োজন নয়, হয়ে উঠে স্টাইলের অংশ। হালকা নিটওয়্যার, অতিরিক্ত বড় আকারের সোয়েটার, নিট হুডি—সবকিছু মিলিয়ে তৈরি হয়েছে টেক্সচার সিলুয়েট। বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই এই লেয়ারিং ট্রেন্ড তরুণদের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য হয়েছে। গরমের সময় পাতলা কাপড়ের কোটিও পরতে দেখা গেছে অনেক।
গরম মৌসুমের শর্টসেও এসেছে পরিবর্তন। হাঁটুর একটু ওপরে কাটা শর্টস একই সঙ্গে স্টাইলিশ ও ব্যবহারিক। ক্যাজুয়াল আউটিং বা ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্যে এই ট্রেন্ড অনুসরণ করছেন বাংলাদেশের তরুণেরা।
২০২৫ সালে পুরুষ ফ্যাশনে মাটিরং ও নিউট্রাল রঙের আধিপত্য দেখা যায়। যেমন বাদামি, বেজ, জলপাই, টোপাজ, নেভি ও স্টোন গ্রে পোশাককে দিয়েছে শান্ত ও পরিণত লুক। পাশাপাশি বারগান্ডি, ফরেস্ট গ্রিন, পিংক কিংবা ডিপ চেরি রেডের মতো বোল্ড রংও দেখা গেছে, যা আত্মবিশ্বাসী স্টাইল প্রকাশের সুযোগ তৈরি করে।
স্ট্রেচ, ঘাম শোষক ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক পারফরম্যান্স ফেব্রিক ২০২৫ সালের বড় ধারা। একই সঙ্গে অর্গানিক কটন, রিসাইকেলড পলিয়েস্টার ও নৈতিকভাবে সংগ্রহ করা উলের মতো টেকসই উপকরণের চাহিদাও বেড়েছে। বাংলাদেশের ফ্যাশন বাজারেও সচেতন ক্রেতাদের মধ্যে এই প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।
পায়ে জায়গা করে নিয়েছে স্টেটমেন্ট স্নিকার্স, স্লিম ‘টর্পেডো’ শু। আনুষ্ঠানিক ও ক্যাজুয়াল—দুই ক্ষেত্রেই দেখা গেছে আধুনিক লোফার, লাগ সোল বা ভিন্ন হার্ডওয়্যারের ব্যবহার। ক্রসবডি ব্যাগ, ইউনিক বাকলের বেল্ট, বাকেট হ্যাট এবং মিনিমাল চেইন বা বিডেড জুয়েলারিও পুরুষের স্টাইলে ব্যক্তিগত ছোঁয়া যোগ করেছে।
বলা যায়, ২০২৫ সালে পুরুষের ফ্যাশন কোনো একক নিয়মে বাঁধা ছিল না। এটি আরাম ও স্টাইলের ভারসাম্য, পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার এবং নিজের মতো করে ট্রেন্ড ব্যাখ্যা করার স্বাধীনতা দিয়েছে। বিশ্ব ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের পুরুষেরাও এখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজের স্টাইল গড়ে তুলছেন।