
অতিথিপরায়ণ হিসেবে বাঙালির সুনাম আছে। নানা আয়োজনের মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় হয়। তবে চমৎকারভাবে নেমন্তন্নের পুরো ব্যবস্থা করার কৌশলও জানা থাকা চাই। জানা থাকা চাই আয়োজক হিসেবে আপনার দায়িত্ব। নইলে মনে হতে পারে, কেবল দায়সারা একটা আয়োজন করেছেন।
আয়োজনটাকে নিখুঁত করে তোলার চেয়ে অতিথিদের প্রতি আন্তরিক হওয়ার ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দিন। সুস্বাদু খাবার, নান্দনিক পরিবেশনা এবং পরিপাটি করে সাজানো ঘর নিঃসন্দেহেই আপনার রুচির পরিচয় বহন করে। তবে আতিথেয়তার মূল বিষয় হলো আন্তরিকতা।
আয়োজনকে নিখুঁত করার বাড়তি চাপ মাথায় নিয়ে আপনি যদি অতিথিকে সময়ই না দেন, তাহলে আয়োজনটা মেকি হয়ে দাঁড়াবে। অতিথির সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলুন। শরীরী ভাষা রাখুন ইতিবাচক।
হালকা, মিষ্টি ঘ্রাণের ব্যবস্থা করতে পারেন ঘরে। প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি সুগন্ধি মোমবাতি কাজে লাগাতে পারেন। স্বস্তিদায়ক, মৃদু সুরের ব্যবস্থাও রাখতে পারেন।
সময় থাকলে কোনো খেলাধুলা কিংবা বৈচিত্র্যময় অন্য কোনো আয়োজনও করতে পারেন। অতিথিদের বয়স ও পছন্দের ভিত্তিতে এ আয়োজন করুন। শিশুদের জন্য আনন্দের ব্যবস্থা রাখুন। বড়দের মধ্যে থেকে শিশুরা যেন বিরক্ত না হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
অতিথির কী প্রয়োজন, তা বুঝতে চেষ্টা করুন। ওয়েলকাম ড্রিংকের মাধ্যমে স্বাগত জানানোটা দারুণ উদ্যোগ। আলাদাভাবেও বিভিন্ন পানীয়ের আয়োজন রাখতে পারেন এক কোণে, যাতে তৃষ্ণা মিটবে অতিথির। স্বাদেও আসবে বৈচিত্র্য।
চিনি ছাড়া স্বাস্থ্যকর, সুস্বাদু পানীয়ের আয়োজন রাখার অর্থ হলো, আপনি অতিথির স্বাস্থ্যের ব্যাপারেও যত্নশীল। পানীয় বা হালকা স্ন্যাকসের ব্যবস্থা কোথায় কীভাবে করা হয়েছে, সবই দেখিয়ে দিন তাঁকে।
পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখুন। বসার ব্যবস্থা হোক আরামদায়ক। বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি থাকলে তাঁকে খুব নিচু আসনে বসতে দেবেন না।
অতিথির জন্য টিস্যুপেপার, ন্যাপকিন প্রভৃতির ব্যবস্থা রাখুন ঠিকঠাক। হঠাৎ একটা বাড়তি চামচ বা প্লেটের প্রয়োজন হতেই পারে। এগুলোর ব্যবস্থাও রাখুন হাতের কাছে।
অতিথির প্রার্থনার প্রয়োজন হলে সেই জায়গাও তাঁকে দেখিয়ে দিন। অতিথির প্রয়োজন বুঝেই ব্যবস্থাগুলো সম্পর্কে তাঁকে জানান। অতিথির প্রয়োজন থাকতে পারে বলে মনে হলে ওয়াই–ফাই নেটওয়ার্কে তাঁকে সংযুক্ত করে দিতে পারেন। ধরুন, খেলার মৌসুম চলছে। অতিথিকে আগ্রহী মনে হলে স্পোর্টস চ্যানেল দেখার সুযোগ সম্পর্কে তাঁকে জানিয়ে রাখতে পারেন।
কোনো কিছু করার জন্য অতিথিকে জোর করবেন না। কেউ চমৎকার আবৃত্তি করতে পারেন বলেই যে আপনার অনুষ্ঠানে তিনি আবৃত্তি করবেন, তা ধরে নেবেন না। আপনি বড়জোর আলাদা করে তাঁকে অনুরোধ করতে পারেন, তিনি সম্মতি না দিলে সবার সামনে তাঁকে বিব্রত করবেন না।
আপনার সন্তান যাতে কোনোভাবে অতিথিকে বিরক্ত না করে, সেদিকেও খেয়াল রাখুন। অনুষ্ঠানস্থলে আপনার পোষা প্রাণী থাকলে সেটি অতিথিকে আগেই জানিয়ে রাখুন।
যেকোনো পরিস্থিতিতেই পুরো আয়োজনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
কাউকে নেমন্তন্ন করে ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন করবেন না। বিব্রতকর যেকোনো বিষয় এড়িয়ে চলুন। অন্য কেউ একজন অতিথিকে বিব্রত করছেন বলে মনে হলে প্রসঙ্গ বদলে দিন দ্রুত।
ধরা যাক, অতিথির হাত থেকে পড়ে আপনার শখের গ্লাসখানা ভেঙে গেল কিংবা অতিথির সঙ্গে আসা শিশু আপনার ঘর ময়লা করে ফেলল। এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই খেয়াল রাখুন, আপনার শরীরী ভাষায় যেন বিরক্তি প্রকাশ না পায়।
আপনার সাফল্য, উদ্যাপন, ভ্রমণ প্রভৃতির গল্প সীমিত রাখুন। পুরো আলাপটাই ‘আমিময়’ হয়ে উঠলে অতিথি বিরক্ত হবেন। এমন কথা বলবেন না, যাতে অহংকার প্রকাশ পায়।
নেমন্তন্ন মানেই কেবল একটা নির্দিষ্ট ধরনের খাবারের আয়োজন নয়। খাবারে বৈচিত্র্য আনতে পারেন সহজেই। খেয়াল রাখুন আপনার অতিথির চাওয়ার দিকে। অতিথি যদি নিরামিষাশী হয়ে থাকেন, তাঁকে মাছ বা মাংস খাওয়ার জন্য জোর করবেন না কিংবা কেন তিনি এসব খাবার খাবেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন করবেন না।
রোগের কারণেও কেউ নির্দিষ্ট খাবার এড়িয়ে চলতে পারেন। তাই আয়োজনের আগেই এসব বিষয়ে জেনে নেওয়া ভালো। সব অতিথির চাওয়া সম্পর্কে আপনার যদি না-ও জানা থাকে, তাহলে এমনভাবে আয়োজন করুন, যাতে মোটামুটিভাবে সব ধরনের খাদ্যাভ্যাসের মানুষই কিছু না কিছু খেতে পারেন।
নানা রকম আয়োজন করতে গিয়ে কোনো কিছুর আধিক্য যাতে হয়ে না যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখুন। অনেক বেশি পদের আয়োজন করাটা ক্লান্তিকর। আর তা অতিথির জন্যও অস্বস্তিকর হতে পারে।
ভেবেচিন্তে ব্যবস্থা করলে কম আয়োজনেই অতিথিকে সুন্দরভাবে আপ্যায়ন করতে পারবেন। তাতে আপনার পক্ষে নিজেকে সতেজ রাখাও সহজ হবে। অবশ্যই এমনভাবে নেমন্তন্নের আয়োজন করুন, যাতে জায়গার তুলনায় মানুষের সংখ্যা বেশি হয়ে না যায়।
সূত্র: রিডারস ডাইজেস্ট