প্রতিবছর যে হাজারো শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী বিদেশে পাড়ি দেন, তাঁদের অনেকেরই এই যাত্রার প্রথম ধাপটা শুরু হয় আইইএলটিএস দিয়ে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইংরেজি ভাষাদক্ষতার একটি পরীক্ষা। এ ধরনের আরও কিছু পরীক্ষা এখন প্রচলিত। তাই প্রশ্ন আসতে পারে, কেন আইইএলটিএস-ই দেব? আইইএলটিএস কী, কেন গুরুত্বপূর্ণ? কেন প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ এ পরীক্ষা দেন? উত্তর জেনে নিন খোদ ব্রিটিশ কাউন্সিলের কাছ থেকে।

একাডেমিক লেখা পড়া থেকে শুরু করে দৈনন্দিন আলোচনা—বাস্তব জীবনে ইংরেজি ভাষা যথাযথভাবে ব্যবহারের দক্ষতা আছে কি না, তা যাচাই করা হয় আইইএলটিএসের মাধ্যমে। এ পরীক্ষার চারটি অংশ।
লিসেনিং বা শোনা: বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আপনি অন্যের কথা বা মতামত বুঝতে পারছেন কি না, আলাপচারিতা ধরতে পারছেন কি না, সেটিই যাচাই করা হয়।
রিডিং বা পড়া: কোনো একটা লেখার মূল ধারণা, বিস্তার বা লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি আপনি কতটা বুঝতে পারছেন, তা পরিমাপ করা।
রাইটিং বা লেখা: একটা ধারণা আপনি কতটা গুছিয়ে ও যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করতে পারেন, ব্যাকরণ ও ইংরেজি শব্দভান্ডারে আপনার দখল কেমন, তা মূল্যায়ন করা।
স্পিকিং বা বলা: একজন পরীক্ষকের সঙ্গে সরাসরি বা ভিডিও কলে আলাপ। এখানে আপনি মূলত দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা, মতামত তুলে ধরবেন, দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করবেন।
২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের পরীক্ষা। লিসেনিং, রিডিং ও রাইটিং—এই তিন অংশ একসঙ্গে পরপর অনুষ্ঠিত হবে। ‘স্পিকিং’ অংশটি একই দিনে অথবা এক সপ্তাহের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়।
একাডেমিক: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, পেশাগত স্বীকৃতি বা উচ্চশিক্ষার জন্য।
জেনারেল ট্রেনিং: চাকরি ও অভিবাসনের জন্য।
কাগজ অথবা কম্পিউটারে—দুই ভাবেই পরীক্ষা দেওয়া যায়।
অন্যান্য ‘ইংরেজি দক্ষতা যাচাই’ পরীক্ষার তুলনায় আইইএলটিএস যে কারণে আলাদা—
১. বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত: ১৪০টির বেশি দেশের সাড়ে ১২ হাজারের বেশি সংস্থা আইইএলটিএস গ্রহণ করে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়, সরকার কিংবা পেশাগত সংস্থাও আছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ অনেক দেশের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ আইইএলটিএসকে গুরুত্ব দেয়।
২. মানুষের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া: হোক সরাসরি বা ভিডিও কলে, ‘স্পিকিং’ অংশটি সব সময়ই একজন প্রশিক্ষিত পরীক্ষকের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। ফলে আলাপচারিতাটা হয় স্বতঃস্ফূর্ত, যথাযথ। পরীক্ষক সম্পূরক প্রশ্ন করতে পারেন, কোনো একটা বিষয় ব্যাখ্যা করতে বলতে পারেন। মোটকথা একটা মানবিক দিক যোগ করতে পারেন, যা অ্যালগরিদম পারে না। লিসেনিং অংশেও নানা ধরনের উচ্চারণ বোঝার সক্ষমতা যাচাই হয়, যা পরীক্ষার্থীকে সত্যিকার পরিস্থিতির জন্য তৈরি হতে সাহায্য করে।
৩. নিরপেক্ষ ও সহজপ্রাপ্য: আইইএলটিএসে নিরাপত্তা বেশ কঠোরভাবে মানা হয়। কেবল প্রশিক্ষিত পরীক্ষকেরাই পরীক্ষা নেন। পরীক্ষাকেন্দ্রগুলো সবার জন্যই সুবিধাজনক। এমনকি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্যও আছে বিশেষ ব্যবস্থা।
অনেক শিক্ষার্থী ও পেশাদারদের মতে, আইইএলটিএস শুধু একটি ‘নম্বর’ দেয় না; বরং এমন একটা স্বীকৃতি দেয়, যা সর্বত্র গ্রহণযোগ্য।
আইইএলটিএসে সাফল্যের মূল চাবিকাঠিই হলো প্রস্তুতি। এ প্রস্তুতির জন্য সঠিক পন্থা বেছে নেওয়া জরুরি। প্রস্তুতি সহায়তার জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলেরও একটি বিশেষ উদ্যোগ আছে, যাকে বলা হচ্ছে ‘আইইএলটিএস রেডি’। দুটি সুযোগের মধ্যে সুবিধামতো যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন—
১. ‘আইইএলটিএস রেডি’ সদস্যপদ (বিনা মূল্যে)
চারটি অংশের ছয়টি করে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা।
পরীক্ষার ধরন বোঝার জন্য ‘পরিচিতি পরীক্ষা’।
শিক্ষকদের ভিডিও, অনুশীলনী, ও পরামর্শ।
উন্নতি পর্যবেক্ষণের সুবিধা।
২. ‘আইইএলটিএস রেডি’ প্রিমিয়াম (পরীক্ষা বুক করলে ফ্রি)
৪০টি প্র্যাকটিস টেস্ট। লিসেনিং ও রিডিংয়ের নম্বর দেখা যাবে সঙ্গে সঙ্গেই।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ‘রাইটিং’ ও ‘স্পিকিং’ অংশের মূল্যায়ন (চাইলে আরও ‘আপগ্রেড’ করা যাবে)।
বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে লাইভ ও রেকর্ডেড ক্লাস।
অনলাইন দক্ষতাভিত্তিক কোর্স।
ব্যক্তিগত ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে উন্নতি পরিমাপের সুযোগ।
১৭০ ডলার সমমূল্যের এ প্রস্তুতি সুবিধা আপনি বিনা মূল্যেই পেতে পারেন শুধু ব্রিটিশ কাউন্সিলে টেস্ট বুক করে।
ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ও একটি বৈধ পরিচয়পত্র থাকলে সহজেই আপনি অনলাইনে আইইএলটিএস পরীক্ষার তারিখ বুক করতে পারবেন। বাংলাদেশের ৩২টি ব্যাংকের মাধ্যমে শূন্য শতাংশ ইএমআইতে কিস্তিতে টাকা পরিশোধের সুযোগও দিচ্ছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। কোনো বাড়তি খরচ ছাড়াই পরীক্ষার্থীরা তিন মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ অন্যান্য শহরের পরীক্ষাকেন্দ্র আছে।
অনেক সময় সার্বিকভাবে ভালো স্কোর পেলেও একটি অংশে পরীক্ষার্থীরা কম নম্বর পান। এসব ক্ষেত্রে ‘ওয়ান স্কিল রিটেক’ সুবিধা আছে। অর্থাৎ লিসেনিং, রিডিং, রাইটিং অথবা স্পিকিং—যেকোনো একটি অংশের পরীক্ষা পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে আপনি আবার দিতে পারবেন। ফলে সময় ও টাকা—দুটোরই সাশ্রয় হবে।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে শুধু যে আইইএলটিএস পরীক্ষা দেওয়া যায়, তা নয়। বিশ্বজুড়ে ইংরেজি শেখানো ও পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রেও এ প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা কয়েক দশকের। আরও নানাভাবেই পরীক্ষার্থীরা উপকার পেতে পারেন।
আইইএলটিএস রেডির মাধ্যমে প্রস্তুতির নির্ভরযোগ্য উপকরণ।
অনলাইনে নিরাপদ বুকিং, সুবিধামতো নিবন্ধন।
৩২টির বেশি ব্যাংকের মাধ্যমে শূন্য শতাংশ ইএমআইতে টাকা জমা দেওয়ার সুবিধা।
দেশজুড়ে নানা জায়গায় পরীক্ষাকেন্দ্র।
কম্পিউটারে পরীক্ষা দিয়ে দ্রুত ফল পাওয়ার সুবিধা।
একটি অংশের পরীক্ষার দ্বিতীয়বার দেওয়ার সুযোগ ছাড়াও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা।