
আজ ২৫ আগস্ট বিকেল। নারায়ণগঞ্জের তল্লা সবুজবাগ এলাকায় পৌঁছাতেই হাশিম মাহমুদের বাড়ির খোঁজ করলাম। জিজ্ঞেস করতেই একদল কিশোর হেসে উঠল, আর কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়ে উঠল ‘হাওয়া’ সিনেমার সেই জনপ্রিয় গান ‘সাদা সাদা কালা কালা’। গান শেষ হওয়ার আগেই তারা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল দোতলা একটি বাড়ি, প্রধান ফটকের পাশে বড় একটি বকুলগাছ, সেখানেই শিল্পী হাশিম মাহমুদের বাস।
এই বাড়িই এখন এলাকার গর্বের প্রতীক। গীতিকার ও সুরকার হাশিম মাহমুদকে নিয়ে হইচই পড়ে যায় মূলত ‘হাওয়া’ সিনেমার ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি প্রকাশের পর। এই গানের মাধ্যমেই তিনি পরিচিত পান সারা দেশে, এমনকি দেশের বাইরেও।
এরপর কোক স্টুডিও বাংলায় প্রকাশ পায় তাঁর ‘কথা কইয়ো না’ গানটি। ইউটিউবে এখন পর্যন্ত গানটির ভিউ ৯৩ মিলিয়নের বেশি। এটিই কোক স্টুডিও বাংলার সবচেয়ে বেশি ভিউ এনে দেওয়া গান। প্রায় দুই বছর পর আবার ২৩ আগস্ট কোক স্টুডিও বাংলায় ‘বাজি’ গানটি নিয়ে এলেন হাশিম মাহমুদ। এবার শুধু লেখা ও সুর নয়, গানটি গেয়েছেনও তিনি।
‘বাজি’ শিরোনামের গানের সুর ও কথায় এসেছে নতুন স্বাদ। আগের গান ‘সাদা সাদা কালা কালা’ যেভাবে দেশ-বিদেশে আলোড়ন তুলেছিল, এবারও সেই ধারাবাহিকতায় ভক্তদের হৃদয়ে নাড়া দিলেন হাশিম মাহমুদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গানটি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
বসার ঘরে ঢুকতেই দেখা গেল সোফায় আধশোয়া হয়ে টেলিভিশন দেখছেন হাশিম মাহমুদ। নতুন গান প্রসঙ্গে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে মৃদু হেসে বললেন, ‘গান আমার ভালোবাসা। লিখতে আর গাইতে ভালো লাগে। “সাদা সাদা কালা কালা” গানটির পর মানুষ আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছে, তার জন্য কৃতজ্ঞ। নতুন গান “বাজি” নিয়েও ভক্তদের সাড়া পাচ্ছি। আশা করি, এই গানও সবাইকে আনন্দ দেবে। তবে তরুণ প্রজন্মসহ সবাই আমার গান শোনেন, তাঁরা আমার গান শুনতে আগ্রহী—এটা খুব ভালো লাগে।’
কথার মধ্যেই পাশে বসা তাঁর মা জমিলা খাতুন যোগ করলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ও গানবাজনা করে। ওর “সাদা সাদা কালা কালা” যেমন মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছিল, “বাজি” গানেও সাড়া ফেলেছে। দোয়া করি, হাশিম আরও বড় হোক।’
সন্তানের এই সাফল্যে কেমন লাগছে? জমিলা খাতুন বললেন, ‘“সাদা সাদা কালা কালা”র পর মানুষ যেভাবে হাশিমকে ভালোবেসেছে, সেটা আমাদের জন্য আনন্দের। নতুন গান “বাজি” প্রকাশের পর আবারও একই উচ্ছ্বাস দেখতে পাচ্ছি। চারপাশের মানুষের মধ্যে আনন্দ দেখছি। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’
শোবার ঘরে নজর পড়ল ওয়ার্ডরোবের ওপর বেশ কিছু নোটবুক। তাতে গান, কবিতা আর সুরের খসড়া। হাশিম বললেন, আমি নিজেই গান করি। হঠাৎ মনে এলেই গান ও সুর লিখে রাখি। অনেক গান ও সুর ছিল, যেসব লেখা হয়নি।’
‘বাজি’ গানটি ২০০১/২০০২ সালে লিখেছিলেন বলে জানালেন হাশিম মাহমুদ, ‘কোক স্টুডিওতে গানটি রেকর্ডিং শেষে ইউটিউবে প্রকাশ পাওয়ার পর খুব ভালো লাগছে। যেদিন গানটি ইউটিউবে রিলিজ হয়, ওই দিন গানের সঙ্গে শিল্পীসহ সবাই আমরা একসঙ্গে ঢাকায় খাওয়াদাওয়া করেছি। সেখানে আমরা গানও গেয়েছি। খুব ভালো লেগেছে।’
‘বাজি’ গানটিও শ্রোতার মনে চিরদিন বাজবে বলে আশা হাশিম মাহমুদের। তবে গানটিতে তাঁর নিজের জীবনের কোনো গল্প নেই বলেই জানালেন। তবে বললেন, ‘অনেকের জীবনের গল্প এমন হয়। ওটা ভেবেই গানটি লিখেছিলাম। মানুষ জীবনে বাজি ধরে।
শিল্পীর ছোট ভাই বেলাল আহমেদ গর্বভরে বললেন, ‘আমার ভাই বৈষয়িক কিছু চান না। নির্লোভ একজন। তিনি কেবল ভালো লাগা থেকেই গান করতেন, লিখতেন। তিনি মনের দিক থেকে চিরসবুজ। তাঁর কারণে আমাদের পরিবার গর্বিত। আমরা চাই, সবাই তাঁর গান শুনুক। সবার ভালোবাসা নিয়ে তিনি বেঁচে থাকুক, এটাই কামনা।’
এলাকাবাসীও উচ্ছ্বসিত। কলেজশিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম বললেন, ‘হাশিম ভাই আমাদের এলাকার গর্ব। নতুন গানটা ইউটিউবে আসতেই শুনেছি, দেখেছি। একেবারেই ভিন্ন ধাঁচের।’
তরুণী সোনিয়া আক্তার বললেন, ‘আমরা আগে থেকেই তাঁর ভক্ত। নতুন গানে তাঁকে আরও বেশি দারুণ লেগেছে। এই গান অনেক দিন মানুষের মনে থাকবে।’
গানের ভুবনে হাশিম মাহমুদের যাত্রা শুরু হয়েছিল নিছক ভালোবাসা থেকে। সেই ভালোবাসাই আজ তাঁকে এনে দিয়েছে জনপ্রিয়তা। সাধারণ একজন থেকে জনপ্রিয় শিল্পীতে রূপান্তরের পেছনে হাশিম মাহমুদের ছিল নিরলস পরিশ্রম ও ভালোবাসা।