আসছে গরমের দিন। এ সময় শরীর ও মনে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেবে শরবত। গরম কালের বিভিন্ন ধরনের ফল বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এগুলোর মধ্যে বেল, তরমুজ, আনারস, লেবু উল্লেখযোগ্য। যেকোনো ফল দিয়েই বানিয়ে নিতে পারেন আপনার পছন্দের শরবত। প্রতিটি ফলের আছে নিজস্ব গুনাগুণ। ফলে শরবতেও পাবেন সেসব। শরবত খাওয়ার মৌসুম আসার আগেই তাই জেনে নিন কোন শরবতে কোন গুণ আছে।
উপকরণ
লেবু দুটি, আদার রস ২ টেবিল চামচ, পুদিনা পাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, চিনির সিরাপ এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ, বরফ কুচি পরিমাণমতো।
একটি পাত্রে ২ টুকরো লেবু চিপে সিরাপ দিয়ে শরবত তৈরি করে নিন। আদা কিউব করে কেটে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। অথবা থেঁতলে নিন। এরপর আদা ছেঁকে পানি আলাদা করে রাখুন। সিরাপ দেওয়া লেবুর পানির সঙ্গে আদার পানি মিশান। শেষে বরফ কুচি, পানি, পুদিনা পাতা ও লেবু চারকোনা করে কেটে গ্লাসে দিয়ে আধঘণ্টা রেখে দিন।
আদা-পানি রোজায় গ্যাসের সমস্যা দূর করে। দীর্ঘ সময় রোজা রাখার ফলে হাতে-পায়ে ব্যথা হয়, আদার পানি শরীরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ক্যানসার, বমি বমি ভাব, রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এই পানি। ইফতারে ভাজাপোড়া খাবার বেশি খাওয়া হয়। তাই লেবুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চর্বি কমাতে সাহায্য করে। অনেক সময় অতিরিক্ত গরম আর বৃষ্টির জন্য ঠান্ডা হতে পারে, তাই এই সময় লেবু-আদা শরবত শরীরকে রাখে ঠান্ডা। এ ছাড়া ব্রণ আর ত্বকের কালচে দাগ কমাতে লেবু-আদা শরবত উপকারী।
উপকরণ
শসা ২৫০ গ্রাম, ধনেপাতা কুচি আধা টেবিল চামচ, বিট লবণ সামান্য, চিনি সামান্য, কাঁচামরিচ ১টি এবং পানি সামান্য।
শসার খোসা ছাড়িয়ে এবং বীজ ফেলে কুচি করে নিন। এরপর সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এবার সুদৃশ্য একটা শরবতের গ্লাসে বরফ কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন শসার শরবত।
প্রতিদিন ইফতারে এক গ্লাস শরবত পানে শরীরে ক্যানসার প্রতিরোধের শক্তি বৃদ্ধি পায়। শসায় লারিসিরেসিনল, পিনোরোসিনল ও সেইকসলারিসিরেসিনল রয়েছে, যা ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে পানি, সিলিকা, ভিটামিন-এ, সি, কে ও ক্লোরোফিল রয়েছে, যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। শসা মুত্রাশয়ের পাথরও প্রতিরোধ করে। এটি শরীরের সব বিষাক্ত পদার্থ তাড়াতে সাহায্য করবে। আবার যাদের হজমে সমস্যা আছে, তারা শসার শরবতে উপকার পেতে পারেন। যেভাবেই শসা খান না কেন, এটি ওজন কমাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
উপকরণ
পাকা আম কুচি এক কাপ, চিনি স্বাদমতো, পানি আধা কাপ, লবণ এক চিমটি, পরিমাণ মতো বরফ কুচি।
বরফ কুচি বাদে সব উপকরণ একসঙ্গে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এবার বরফ কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন আমের শরবত।
আমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও উচ্চ পরিমাণে খাদ্য আঁশ থাকায় এটি কোলন ক্যানসার, স্তন ক্যানসার, রক্তস্বল্পতা, লিউকোমিয়া ও প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমে প্রচুর খাদ্য আঁশ থাকায় তা হজমে সাহায্য করে। এতে বিদ্যমান উচ্চ বিটা ক্যারোটিন অ্যাজমা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত আম খাওয়া ক্ষতিকর। তারা আম পরিমিত খাবেন। সুস্থ মানুষের জন্য পাকা বা কাঁচা হোক সব আমই উপকারী।
উপকরণ
তরমুজ কুচি দুই কাপ, চিনি ২ টেবিল চামচ, বিটা লবণ আধা চা-চামচ, পাতি লেবুর রস ২ চা-চামচ।
তরমুজ কুচিসহ সব উপকরণ মিশিয়ে ব্লেন্ড করে ফ্রিজে রেখে দিন আধঘণ্টা। প্রয়োজনীয় ঠান্ডা হলে নামিয়ে এনে পরিবেশন করুন রঙিন ঠান্ডা তরমুজ শরবত।
তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, শর্করা, ভিটামিন সি পাওয়া যায়। সারা দিনের ক্লান্তি ও দুর্বলতা কাটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই শরবত। আবার টাইফয়েড জ্বরের তীব্রতা কমাতেও ভূমিকা রাখে তরমুজ। পুরুষের বন্ধ্যত্ব ঘুচাতেও তরমুজের জুড়ি মেলা ভার।
উপকরণ
আনারস কুচি ১ কাপ, বিট লবণ আধা চা-চামচ, চিনি ২ চা-চামচ, গোলমরিচের গুঁড়ো ২ চা-চামচ, পানি পরিমাণমতো।
আনারস কুচির সঙ্গে বিট লবণ, চিনি গোল মরিচের গুঁড়ো ও পানি ভালোভাবে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল আনারসের শরবত। সুন্দর গ্লাসে ঢেলে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
আনারস পুষ্টির এক বড় উৎস। এতে প্রচুর ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। এসব উপাদান মানবদেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এতে প্রচুর ফাইবার ও অনেক কম চর্বি থাকায় তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। আনারস জ্বর ও জন্ডিস রোগের জন্যও বেশ উপকারী।
উপকরণ
পাকা বেল, চিনি পরিমাণমতো, দুধ পাউডার আধাকাপ ও ঠান্ডা পানি।
প্রথমে বেল ফাটিয়ে নিন। এরপর চা চামচ দিয়ে ভেতরের সবটুকু বের করে নিন। এবার সামান্য পানি দিয়ে মাখিয়ে নরম করুন। বেলের আঠা ও বিচি ফেলে ভালোভাবে চালনিতে ছেঁকে নিন। খেয়াল রাখবেন বেলের বিচি যেন থেঁতলে না যায়। বিচি থেঁতলে গেলে কিছুটা তেতো ভাব আসতে পারে। এবার ঠান্ডা পানি যোগ করুন। এই পর্যায়ে দুধ পাউডার মেশাতে পারেন। চিনি যার যেমন ইচ্ছা মিশিয়ে নিন। আর ডায়াবেটিস রোগী হলে নিজের জন্য নির্ধারিত চিনি ব্যবহার করুন। বরফ কুচি বাদে অন্য সব উপকরণ একসঙ্গে ব্লেন্ড করুন। এখন গ্লাসে ঢেলে বরফ কুচি মিশিয়ে ঠান্ডা পরিবেশন করুন।
সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে ইফতারে বেলের শরবতের জুড়ি মেলা ভার। এর পুষ্টিগুণ অন্যান্য ফলের চেয়ে অনেক বেশি। বেলের ভিটামিন সি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে, যা বসন্ত গ্রীষ্মকালীন ছোঁয়াচে রোগ প্রতিরোধ করে। এর ফলে আঁশের পরিমাণ অনেক বেশি থাকায় তা হজমশক্তি বাড়ায়, গ্যাস-অ্যাসিডিটির পরিমাণ কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এ ছাড়া ভিটামিন এ চোখের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে পুষ্টি জোগায়। আবার যারা নিয়মিত বেল খান, তাদের কোলন ক্যানসার, গ্লকোমা, জেরোসিস, জেরোপথ্যালমিয়া (ইত্যাদি চোখের অসুখ) হওয়ার প্রবণতা থাকে তুলনামূলকভাবে কম।