ডিম। আমাদের কাছে পরিচিত আদর্শ খাদ্য বা সুপার ফুড হিসেবে। প্রায় প্রয়োজনীয় সব কটি পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান আছে ডিমে। একটি সাধারণ আকৃতির ডিমে ৭০-৮০ গ্রাম ফ্যাট ছাড়াও আছে ভিটামিন এ, বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন ডি, ই এবং কে। ফলেট, ক্যালসিয়াম, জিংক, ফসফরাস, সেলেনিয়ামও রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।
ডিমে আছে কোলেস্টেরল। তবে তা আমাদের রক্তের ভালো কোলেস্টেরল, অর্থাৎ এইচডিএল বাড়াতে সাহায্য করে। কোলিন ডিমের একট গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে। বিশেষ করে শিশুদের মস্কিষ্কের সিগন্যাল মলিকিউলকে সতেজ করে। ডিমে থাকা লুটেইন ও জিজেনজিন অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। এ ছাড়া দৃষ্টি উন্নত করতে এতে রয়েছে ভিটামিন এ।
ডিমকে মূলত আদর্শ প্রোটিন বা আদর্শ খাদ্য বলা হয়। কারণ, এতে আছে প্রয়োজনীয় সব কটি অ্যামিনো অ্যাসিড। ডিম আমাদের ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। ফলে ডিম সফল ভূমিকা রাখে স্থূল ব্যক্তির ওজন কমাতে। একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি দৈনিক দুটি ডিম খেতে পারেন, একটি কুসুমসহ ও একটি কুসুম ছাড়া। তবে অবশ্যই তা যথেষ্ট তাপ দিয়ে প্রস্তুত করা জরুরি। দুই বছর বয়স থেকে একটি শিশু যার ডিমজনিত এলার্জি নেই, তার খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন এক-দুটি ডিম রাখা যায়। ঠিক একইভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও তাঁর খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন ডিম।
কিডনি রোগী যাদের ডায়ালাইসিস চলছে, তাদের দৈনিক ডিমের চাহিদা থাকে ন্যূনতম তিন থেকে চারটি। পুড়ে যাওয়া রোগী দৈনিক পাঁচ-সাতটি ডিম খেতে পারবে। কারণ, তার পোড়ার ক্ষত নিরাময়ে সহায়ক হয় ডিম। জটিল অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, দীর্ঘদিনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ইত্যাদি কারণে শরীরের ক্যাটাবলিজমের মাত্রা বেড়ে গেলে ডিম দিয়ে খুব সহজেই দেহের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা যায়, যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাংসপেশি, হাড়ের গঠন ও পূণর্গঠনে সহায়তা করে।
চলমান বৈশ্বিক মহামারিতে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে ডিম অতুলনীয়। এ ছাড়া যাঁরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং রিহ্যাবিলিটেশনে আছেন, তাঁদের জন্য আদর্শ প্রোটিন তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ডিম। চুল ও ত্বকের সুস্থতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডিমের ভিটামিন এ ও ফ্যাটি অ্যাসিড। স্কুলের কিশোর-কিশোরীদের দৈনিক প্রোটিন চাহিদার অন্তত এক তৃতীয়াংশ পূরণ করতে হবে ডিম দিয়ে। প্রসূতি ও গর্ভবতী মায়েদের দৈনিক ডিমের চাহিদা এক-দুটি।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ডিম সহজলভ্য এবং কোনো রকম আনুষঙ্গিক উপাদান ছাড়াই একে খাদ্যোপোযোগী করে তোলা যায়।
লেখক: ইনচার্জ, ডায়াটেটিক্স ও নিউট্রিশন বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল