
আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম পেটের একটি পরিচিত ও বিরক্তিকর সমস্যা। আমাদের আশপাশে অনেকেই এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। এর কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত দীর্ঘদিন কষ্ট পান, কোনো সুফল না পেয়ে একজনের পর একজন চিকিৎসক পরিবর্তন করতে থাকেন এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায়। আসলে রোগটির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানা থাকলে একে মোকাবিলা করা সহজ হয়। নয়তো অধৈর্য হওয়াটা স্বাভাবিক।
এটা আমাদের পরিপাকতন্ত্রের একটি ফাংশনাল বা কার্যগত সমস্যা। এখানে পরিপাকতন্ত্রের কোনো গঠনগত পরিবর্তন বা সমস্যা হয় না।
এই সমস্যা সাধারণত যুবা বয়সেই শুরু হয়ে থাকে। নারীরাই বেশি ভুগে থাকেন। যাঁরা সব সময় উদ্বিগ্ন বা মানসিক চাপে থাকেন, তাঁরা এতে বেশি ভোগেন।
এখন পর্যন্ত আইবিএসের সঠিক কারণ ভালোভাবে জানা যায়নি। তবে কিছু থিওরি রয়েছে। পরিপাকনালির পেশির অস্বাভাবিক সংকোচন, প্রসারণ, স্নায়ুর সংকেতজনিত সমস্যা, উদ্বেগ ও মানসিক চাপ, পরিপাকতন্ত্রের সহজাত ও উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিবর্তন ইত্যাদি কারণ শনাক্ত করা হয়েছে এর পেছনে। তবে অনেক খুঁজেও পরিপাকতন্ত্রে কোনো বড় সমস্যা পাওয়া যায় না বলে কারণ অনুসন্ধানে কোনো লাভ নেই।
এই রোগের কারণে মূলত দুই ধরনের সমস্যা হয়। একটি হলো পেটে ব্যথা অনুভব করা, অন্যটি হলো মল ত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন। পেটের ব্যথা সাধারণত মলত্যাগের পর চলে যায় বা কমে যায়। এতে ওজনহ্রাস, জ্বর, রক্তশূন্যতা বা মলের সঙ্গে রক্তপাত ইত্যাদি দেখা যায় না। তবে সমস্যাটি খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে জড়িত। কিছু খাবার খেলে এই সমস্যা বেড়ে যায়। এটা একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম, কিন্তু দুধ ও দুধজাতীয় খাবার এবং শাকসবজি ও সালাদের মতো খাবারে সাধারণত বেশি বাড়ে। তবে ভালো বিষয় হলো যে এটা মারাত্মক কোনো রোগ নয়। এ থেকে বড় কোনো জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা নেই।
পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞরা আইবিএস নির্ণয় করতে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ বা রোম ক্রাইটেরিয়া ব্যবহার করে থাকেন। এই রোগ দুই রকম হতে পারে, যেমন আইবিএস ডি, যেখানে পেটে ব্যথার সঙ্গে পাতলা বা নরম পায়খানা হয় এবং আইবিএস সি, যেখানে পেটে ব্যথার সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে। কারও কারও দুটিই থাকতে পারে। রোগের লক্ষণ ও ইতিহাস শুনে রোগ শনাক্ত করা হয়, তবে এর সঙ্গে অনেক সময় কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে নিশ্চিত করতে হয় যে অন্য কোনো পরিপাকজনিত রোগ বা জটিলতা নেই। বেশির ভাগ পরীক্ষারই রিপোর্ট স্বাভাবিক পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ
দুঃখজনক হলেও এটা সত্যি যে এই সমস্যার পুরোপুরি কোনো সমাধান নেই। তবে একে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা দরকার। দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, শাক ইত্যাদি যেসব খাবারে সমস্যা বাড়ে, সেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। রোজকার খাদ্যপঞ্জি মেনে চলার অভ্যাস থাকলে রোগী সহজেই বুঝতে পারবেন কবে কোন খাবারে তাঁর সমস্যা হয়েছিল। এ ছাড়া মানসিক চাপ কমাতে হবে। প্রয়োজন হলে উপসর্গ বুঝে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিছু ওষুধ দিতে পারেন। তবে আইবিএসের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই আপনার নিজের হাতে। স্বাস্থ্যকর ও শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন যাপন করলে ভালো থাকবেন।
আরও পড়ুনঃ
যেসব খাবারে পেটের সমস্যা বাড়ে, সেসব এড়িয়ে চলুন। দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, শাক, অতিরিক্ত তেলে ভাজা বা ডিপ ফ্রাই খাবার, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, বেকারি, কৃত্রিম চিনি, ক্যাফেইন ইত্যাদি এড়িয়ে চলা ভালো।
নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটির চেষ্টা করুন। এতে পেটের গ্যাস বা ফাঁপা ভাব কমবে।
একসঙ্গে অনেক না খেয়ে সারা দিনে অল্প অল্প করে ভাগ করে খান। খাবারের টাইমটেবিল বজায় রাখুন।
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস কমাতে ব্যায়াম, যোগব্যায়াম, মেডিটেশন করতে পারেন। দরকার হলে বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন।