মেটে জন্ডিস সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত একটি শব্দ। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটি নির্দিষ্ট কোনো রোগের নাম নয়। মানুষ মেটে জন্ডিস বলতে সেই ধরনের জন্ডিসকে বোঝায়, যেখানে চোখ বা ত্বক হালকা কালচে বা ধূসর হলুদাভাব ধারণ করে। সচরাচর জন্ডিস হলে চোখ বা ত্বকে হলুদাভ ভাবটি তীব্র থাকে। কিন্তু মেটে জন্ডিসে এত তীব্র মাত্রার হলদে ভাব থাকে না। অনেকে হলদে ভাব ও খাবার খেতে অনীহা থাকলেও মেটে জন্ডিস হয়েছে বলে ধরে নেন।
সম্ভাব্য কারণ
আংশিক বিলিরুবিন বৃদ্ধি: রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যাওয়াকেই চিকিৎসার ভাষায় জন্ডিস বলে। অতিমাত্রায় বিলিরুবিন বাড়লে চোখ, ত্বক, ঘাড় হলুদ হয়ে যায়। আর বিলিরুবিন স্বাভাবিক মাত্রা থেকে অল্প বাড়লে মেটে জন্ডিসের মতো রং ধারণ করে।
দীর্ঘস্থায়ী লিভার ডিজিজ: লিভারের কিছু দুরারোগ্য ব্যাধি আছে, যেখানে লিভারে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন হয়ে ক্ষত হয়ে যায়। আগের অবস্থায় ফিরে আসার সুযোগ থাকে না, লিভারের কার্যক্ষমতা ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। এসব সমস্যায় মৃদু জন্ডিস হতে পারে।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই বেশি করে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। সহজপাচ্য পুষ্টিকর খাবার বেশি খেতে হবে।
রক্তকোষ ভাঙা রোগ: রক্তের হ্যামোলাইটিক অ্যানিমিয়া নামের একটি জটিল রোগ আছে। এ রোগে রক্তকোষ ভেঙে রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে তা বিলিরুবিন হিসেবে রক্তে ফিরে আসে। এ রকম রোগেও মেটে জন্ডিস হতে পারে।
এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি হেপাটাইটিস যেমন ক্রনিক হেপাটাইটিস বি ইনফেকশন এবং পিত্তথলির রাস্তায় বাধা যেমন পাথর আটকে গেলে এ রকম জন্ডিস হতে পারে।
উপসর্গ
মেটে জন্ডিস হলে সাধারণত কিছু উপসর্গ দেখা যেতে পারে, যেমন ক্ষুধামান্দ্য বা খাওয়ায় অরুচি, বমি বমি ভাব বা বমি হয়ে যাওয়া, ত্বকে বা চোখে মেটে রঙের পরিবর্তন, গাঢ় হলুদ প্রস্রাব হওয়া, ফ্যাকাসে মলত্যাগ, দুর্বলতা ও ওজন হ্রাস, পেট ফুলে যাওয়া (পেটে পানি আসা বা লিভার, প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া) ও শরীর চুলকানো।
করণীয়
লক্ষণগুলো দেখা দিলে বিলম্ব না করে অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক বিশেষ করে লিভার–সম্পর্কিত পরীক্ষা, পেটের আলট্রাসনোগ্রামসহ আরও কিছু পরীক্ষা করে থাকেন।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই বেশি করে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। সহজপাচ্য পুষ্টিকর খাবার বেশি খেতে হবে।
এ ধরনের জন্ডিস নিয়ে অনেক ধরনের কুসংস্কার প্রচলিত আছে। কেউ কেউ ঝাঁড়ান, ভেষজ ওষুধ সেবন করেন। এতে এ সমস্যা আরও জটিল হতে পারে। তাই মেটে জন্ডিস দেখা দিলে চিকিৎসকদের চিকিৎসার প্রতি আস্থা রাখা উচিত।
ডা. সাইফ হোসেন খান: মেডিসিন কনসালট্যান্ট পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা