প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ২৫ লাখের বেশি মানুষ নিউমোনিয়া আক্রান্ত হন, যার অর্ধেকের বেশি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু।
প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ২৫ লাখের বেশি মানুষ নিউমোনিয়া আক্রান্ত হন, যার অর্ধেকের বেশি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু।

শীতের এ সময় শিশুর কাশি কি নিউমোনিয়া না ব্রঙ্কিওলাইটিস

বাংলাদেশে এখনো শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। দেশে ১৮ শতাংশ শিশুর মৃত্যুর কারণ এই নিউমোনিয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ২৫ লাখের বেশি মানুষ নিউমোনিয়া আক্রান্ত হন, যার অর্ধেকের বেশি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু।

নিউমোনিয়া হলো ফুসফুসের এমন একটি প্রদাহ, যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে হয়। এর ফলে ফুসফুসের বায়ুথলিগুলো তরল বা পুঁজে ভরে যায়। অক্সিজেন আদান-প্রদানে বাধা সৃষ্টি হয়ে শিশু শ্বাসকষ্ট অনুভব করে।

প্রতিবছরের মতো শীতের শুরুতেই এবারও ঠান্ডা-কাশি, শ্বাসকষ্টে শিশুরা আক্রান্ত হতে শুরু করেছে। সব ঠান্ডা-কাশি, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়া নয়, ভাইরাসজনিত হতে পারে। এ সময় রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাসজনিত (আরএসভি) ব্রঙ্কিওলাইটিসের প্রাদুর্ভাবও দেখা যায়। ফুসফুসে আক্রান্ত স্থানের ভিন্নতার জন্য রোগী বিভিন্ন রকম লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন। ব্রঙ্কিওলাইটিসে ফুসফুস সংলগ্ন শ্বাসনালির ছোট ছোট শ্বাসনালি আক্রান্ত হয়। নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কিওলাইটিস রোগের কিছু বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করলেই আমরা এই রোগগুলো সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি।

নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কিওলাইটিসের পার্থক্য

ব্রঙ্কিওলাইটিসে দুই মাস থেকে দুই বছরের শিশু আক্রান্ত হতে পারে, তবে দুই থেকে ছয় মাস বয়সের শিশু বেশি আক্রান্ত হয়। নিউমোনিয়া যেকোনো বয়সে হতে পারে। ব্রঙ্কিওলাইটিস হলে নাকে পানি ও নাক বন্ধ হয়ে যায়। তবে নিউমোনিয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ সমস্যা থাকে না। ব্রঙ্কিওলাইটিসে জ্বর সামান্য থাকলেও নিউমোনিয়া হলে জ্বর প্রায় ক্ষেত্রেই বেশি থাকে। খুব কাশি ও কাশতে কাশতে বমি ব্রঙ্কিওলাইটিসের লক্ষণ। নিউমোনিয়ায় কাশি হলেও তা তুলনামূলক

কম থাকে। ব্রঙ্কিওলাইটিসে শ্বাসকষ্ট খুব বেশি হয়। নিউমোনিয়ায়ও বিস্তৃতি অনুযায়ী শ্বাসকষ্ট বেশি হতে পারে।

ব্রঙ্কিওলাইটিসে বুকে চটচট শব্দ থাকতে পারে। নিউমোনিয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটা থাকে। ব্রঙ্কিওলাইটিস হলে শরীর নীল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা বেশি থাকে। নিউমোনিয়ায় রোগের তীব্রতাভেদে শরীর নীল হতে পারে। ব্রঙ্কিওলাইটিস হলে রক্তের শ্বেতকণিকা স্বাভাবিক থাকবে। নিউমোনিয়া হলে অবশ্য বেড়ে যাবে। ব্রঙ্কিওলাইটিসের ক্ষেত্রে বুকের এক্স-রে করলে ফুসফুসকে প্রচণ্ড কালো দেখায় এবং পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যবর্তী স্থানের দূরত্ব বেড়ে যায়। ব্রঙ্কিওলাইটিসের প্রধান চিকিৎসা অক্সিজেন ও নেবুলাইজারের মাধ্যমে স্যালবিউটামল দেওয়া। নিউমোনিয়ার প্রধান ওষুধ অ্যান্টিবায়োটিক।

  • ডা. ইমনুল ইসলাম ইমন, অধ্যাপক, শিশু বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা