
হার্ট অবিরাম স্পন্দিত হচ্ছে কি না, হৃৎস্পন্দন বা হার্টবিট দিয়েই তা বোঝা যায়। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার। শিশুদের এই হার বেশি। তবে হৃৎস্পন্দন সব সময় স্বাভাবিক সীমার মধ্যেই থাকবে, এমন নয়। হাঁটাচলা, দৌড়ঝাঁপ, খেলাধুলা, পরিশ্রম, আবেগ ও উত্তেজনায় হৃৎস্পন্দন বাড়ে। আবার বিশ্রাম ও ঘুমের সময় হৃৎস্পন্দন কম থাকে। রোগবালাইয়ের কারণে কখনো ছন্দোবদ্ধ এই হৃৎস্পন্দনের অনিয়ম ঘটতে পারে। স্বাভাবিকের চেয়ে ধীর হতে পারে অথবা দ্রুত হতে পারে। অনিয়মিতও হতে পারে। হৃৎস্পন্দন যদি অস্বাভাবিক দ্রুত হয়, তাহলে বুক ধড়ফড় করে। আর যদি হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক ধীরগতির হয়, তাহলে মাথা ঘোরা, মাথা ঝিমঝিম, হালকা লাগা, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া বা অজ্ঞান হওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। কারও কারও মাঝেমধ্যে, কম সময়ের বিরতিতে অথবা দীর্ঘ বিরতিতে এমন উপসর্গ হতে পারে।
হৃৎস্পন্দনের সমস্যা ধরার জন্য চিকিৎসকেরা অনেক সময় ২৪ ঘণ্টার ইসিজি করে থাকেন। এর আরেক নাম হল্টার মনিটরিং। এটা ৪৮ ঘণ্টা, ৭২ ঘণ্টা অথবা আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য করা যায়।
২৪ ঘণ্টার ইসিজি কীভাবে করা হয়
ব্যাটারিচালিত ছোট একটি যন্ত্র নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শরীরে সংযুক্ত করে রাখা হয়। এতে কয়েকটি তার ও সেন্সর থাকে, যেগুলো বুকের ওপর লাগানো হয়। এরপর এটি একটানা ২৪ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে হার্টের স্পন্দন ও বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ রেকর্ড করে। যন্ত্রটি কোমরে বেল্ট দিয়ে বেঁধে বা গলায় ঝুলিয়ে রাখা যায়।
কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সাধারণ ইসিজি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের হৃৎস্পন্দনের তথ্য ধারণ করে। এই ইসিজিতে হৃদ্যন্ত্রের সব সমস্যা ধরা পড়ে না। অনেক সময় বুক ধড়ফড়, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দিনে এক থেকে দুইবার বা মাঝেমধ্যে ঘটে। তখন ২৪ ঘণ্টার ইসিজি হৃৎস্পন্দনের সমস্যা শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
কখন এই পরীক্ষা প্রয়োজন?
১. মাঝেমধ্যে সাময়িক বুক ধড়ফড় বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনের কারণ জানতে।
২. কখনো কখনো মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়ার ব্যাখ্যা পেতে।
৩. হার্ট অ্যাটাকের পর হৃৎস্পন্দনের কোনো সমস্যা হলে, তা পর্যবেক্ষণ করতে।
পরীক্ষাকালীন পরামর্শ
এই পরীক্ষার জন্য রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই। হল্টার মেশিন লাগানোর পর রোগীকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক কাজকর্মের মধ্যে থাকতে বলা হয়। শুধু গোসল করা যায় না। চিকিৎসক রোগীকে একটি ডায়েরি রাখতে বলেন, যেখানে লিখে রাখতে হয় দিনের কোন সময় কী করছিলেন, কোনো উপসর্গ হয়েছে কি না ইত্যাদি। পরে যন্ত্রের ও ডায়েরির তথ্য মিলিয়ে সমস্যার ধরন ও সময় নির্ধারণ করা যায়।
২৪, ৪৮ বা ৭২ ঘণ্টা, যে সময়ের ইসিজি মনিটরিংয়ের উদ্দেশ্যে হল্টার মেশিন লাগানো হয়, সে সময় পার হলে মেশিনটি খুলে নেওয়া হয়। তারপর পুরো সময়ের ইসিজি রেকর্ডিংয়ের তথ্য কম্পিউটারে নিয়ে ফলাফল বিশ্লেষণ করা হয়।
শেষের কথা
হৃৎস্পন্দনের সমস্যা অনেক সময় সহজে শনাক্ত করা যায় না। বিশেষ করে যখন এ ধরনের সমস্যা মাঝেমধ্যে হয় অথবা সুপ্ত থাকে। হৃদ্রোগের এমন সমস্যায় দীর্ঘ সময়ের ইসিজি রেকর্ডিং খুব সহায়ক। এটি একটি নিরাপদ পরীক্ষাপদ্ধতি। তাই এতে ভয়ের কিছু নেই।