মস্তিষ্কের বার্ধক্য ঠেকাবেন কীভাবে

দিন দিন ব্রেন এজিংয়ে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ব্রেন এজিং মানে মস্তিষ্কের বার্ধক্য। বয়সের সঙ্গে মস্তিষ্কের আয়তন কমতে থাকে, অর্থাৎ ব্রেন শুকিয়ে যেতে থাকে। এর মানে মস্তিষ্কে থাকা কোষগুলো আস্তে আস্তে অকার্যকর হচ্ছে এবং ব্রেনের আয়তন কমছে। কোষের আয়তন কমতে থাকলে তা স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধি ও দক্ষতার ওপর প্রভাব ফেলে।

• মস্তিষ্কের ব্যবহার কম হলে ব্রেন এজিংয়ের প্রক্রিয়াও আগে শুরু হবে। ব্রেন সক্রিয় থাকলে এজিংয়ের প্রক্রিয়া ধীরগতিতে হয়। যাঁরা অনেক পড়াশোনা করেন বা অন্যভাবে মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখেন, তাঁদের এজিং–প্রক্রিয়া দেরিতে শুরু হয়।

• বংশগত কারণেও ব্রেন এজিং হতে পারে। নিকটাত্মীয়দের মধ্যে অল্প বয়সেই মস্তিষ্কে বার্ধক্য আসার প্রবণতা থাকলে পরবর্তী বংশধরদের মধ্যেও এটা ঘটে।

• মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনপ্রক্রিয়া ও হরমোনাল কারণও এজিং–প্রক্রিয়া প্রভাবিত করে।

• প্রধান লক্ষণ স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া। প্রাথমিকভাবে কোনো ঘটনা, জিনিস বা কারোর নাম, ঠিক সময়ে ঠিক শব্দটা সহজে মনে পড়তে চায় না।

• পরবর্তী পর্যায়ে খুব সাধারণ কাজ যেমন কোনো একটি জিনিস বিছানা থেকে টেবিলে সরিয়ে রাখা, নিজের জামাকাপড় পরা—এগুলো করতেও অসুবিধা হতে পারে।

• বয়স্কদের প্রায়ই দেখা যায় জায়গার জিনিস জায়গায় রাখতে পারছেন না। কখন কী করা উচিত, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারেন না। এর হাত ধরে আসে ডিপ্রেশন।

কিছু অসুখেও সাময়িকভাবে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব থেকেও সাময়িক স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। মানসিক সমস্যা, অত্যধিক মানসিক চাপ, উদ্বেগ, হতাশা থেকেও ভুলে যাওয়া, বিচার করার ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে। অসুখজনিত কারণে স্মৃতিলোপ পেলে চিকিৎসা সম্ভব।

ব্রেন এজিংয়ের তেমন চিকিৎসা নেই। তবে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে এর গতি কমিয়ে দেওয়া সম্ভব। এ জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন-এ, ওমেগা–থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড–সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে। মস্তিষ্ক সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে দুটি জিনিস মেনে চলতে হবে—চিনি এড়িয়ে চলা এবং কম কার্বোহাইড্রেটের খাবার খাওয়া (লো কার্বোহাইড্রেট ডায়েট)। আর কাজের মাধ্যমে মস্তিস্ক সচল রাখা জরুরি।

• অধ্যাপক ডা. হারাধন দেব নাথ, নিউরো সার্জারি বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা