
সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয় সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এক নারী। একই সঙ্গে এত সন্তান জন্মের ঘটনা সচরাচর ঘটে না। আর ঘটলেও অনেক সময়ই এই সন্তানদের পরিণতি হয় বেদনাদায়ক। কেন একাধিক সন্তান গর্ভে আসে? আর তাতে সন্তান ও মা কী ধরনের ঝুঁকিতে পড়েন, এমন সব বিষয়ে জানান স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. আনিকা তাবাসসুম।
প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে যত নারী মা হন, তাঁদের মধ্যে প্রতি ২৫০ জনের মধ্যে একজনের যমজ সন্তান হয়। অর্থাৎ দুটি সন্তান গর্ভে আসে। একই সঙ্গে তিন সন্তান গর্ভে আসার ঘটনা ঘটে আরও কম, প্রতি ১০ হাজার জনে একজন।
একই সঙ্গে চার সন্তান জন্মের ঘটনা বিরল। প্রতি সাত লাখ মায়ের মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে এমনটা হয়। একবারে এর বেশি সন্তান জন্মের হার আরও কম। তবে একটির বেশি সন্তান গর্ভে থাকলেই তা মা ও সন্তানদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
স্বাভাবিক নিয়মে একজন নারীর মাসিক চক্রে একটিমাত্র ডিম্বাণুই পূর্ণতা পায়। এই ডিম্বাণু একটি শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ফলে একটি ভ্রুণ সৃষ্টি হয়। এটিই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ব্যতিক্রম হতে পারে দুইভাবে।
১. একাধিক ডিম্বাণু পূর্ণতা পেলে সে ক্ষেত্রে সেগুলো একাধিক শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে একাধিক ভ্রুণ সৃষ্টি হতে পারে। প্রকৃতির নিয়মেই অল্প কিছু নারীর গর্ভে এভাবে একাধিক সন্তান আসে। আবার বন্ধ্যত্বের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের প্রভাবেও একাধিক ডিম্বাণু পূর্ণতা পেতে পারে এবং ঘটতে পারে এমন ঘটনা।
২. একটি ডিম্বাণুর সঙ্গে একটি শুক্রাণু মিলিত হয়ে যে ভ্রুণ তৈরি হয়েছে, প্রাকৃতিকভাবেই তা বিভাজিত হয়ে দুটি ভ্রুণ তৈরি হতে পারে। তখন যমজ সন্তান হয়। এ ক্ষেত্রে সন্তানদের চেহারা ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য থাকে একই রকম।
একাধিক সন্তান গর্ভে এলে গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
গর্ভকাল পূর্ণ হওয়ার আগেই প্রসববেদনা শুরু হয়ে যেতে পারে, পানি ভাঙতে পারে।
প্রসবের সময় আগে মাথা না বেরিয়ে শরীরের অন্য অংশ, এমনকি নাড়িও বেরিয়ে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রসব হয় না।
অপরিণত অবস্থায় জন্মানো শিশুর ওজনও থাকে কম, শ্বাসপ্রশ্বাসও ব্যাহত হতে পারে।
দীর্ঘদিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখতে হতে পারে এই শিশুদের, হতে পারে মৃত্যুও।
জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকিও থাকে এসব শিশুর।
গর্ভে থাকার সময়েও মারা যেতে পারে এই শিশুরা।
গর্ভফুলজনিত জটিলতা দেখা দিতে পারে।
একাধিক সন্তান গর্ভে থাকলে বমি বমি ভাব, বমি, দুর্বলতা, রক্তস্বল্পতা, ওজন বৃদ্ধি—সবই হয় অতিরিক্ত মাত্রায়।
তাই স্বাভাবিক চলাফেরা, এমনকি ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
হতে পারে শ্বাসকষ্ট।
রক্তচাপজনিত মারাত্মক জটিলতার ঝুঁকি বাড়ে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেশি থাকে এই মায়েদের।
একাধিক সন্তান গর্ভে আসা মানেই উচ্চ ঝুঁকি। তাই এমনটা হলে হবু মায়ের চাই বাড়তি যত্ন। অবশ্যই বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে মাকে। পরিবারের সদস্যদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে তাঁর প্রতি। পর্যাপ্ত পুষ্টি, পানি, বিশ্রাম ও হালকা ব্যায়াম—রোজকার জীবনে এসব বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। মায়ের মনেরও যত্ন নিতে হবে। প্রসবের পরিকল্পনা করা উচিত এমন হাসপাতালে, যেখানে প্রয়োজন হলে নবজাতকদেরকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখার সুযোগ আছে।