
দুরন্ত এক কিশোরীর গল্প বলি। ছোট্ট এক শহরতলির বুকে প্রকৃতির কন্যা হয়ে হেসেখেলে বেড়ে উঠছিল। আচমকা এক সকালে দেখা দিল বিপত্তি। ব্যাপারটা বুঝে উঠতে বেশ সময় লাগল ওই একরত্তি মেয়ের। তবে ধীরে ধীরে বুঝতে পারল, এ ঘটনা প্রতি মাসেই ঘটবে এখন থেকে। অবশ্য সে জন্য তার দুরন্তপনায় বাধা পড়বে, তেমন কিছু বলেননি মা। কিন্তু বিশেষ সময়টাতে লাফঝাঁপ একটু কম করতে বলছিলেন মাতৃস্থানীয় আরেক নারী।
গল্পটা সেই কিশোরীর একার নয়। এ দেশের বহু কিশোরীকেই শেখানো হয়, মাসিকের সময় দৌড়ঝাঁপ করতে নেই। অভিভাবকদের মধ্য থেকে কেউ না কেউ তাকে তেমনটাই বলেন। অথচ সুস্থ থাকতে নারী-পুরুষ সবাইকেই শরীরচর্চার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কিশোরী কিংবা নারীর জীবনের সুস্থতার চর্চা থেকে কি তবে প্রতি মাসেই পাঁচ-সাতটা দিন হারিয়ে যাবে? সেটাই কি প্রকৃতির নিয়ম? বিজ্ঞান কী বলছে?
স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. আনিকা তাবাস্সুম জানালেন, মাসিকের সময় শরীরচর্চা করলে কোনো ক্ষতি নেই। বরং শরীরচর্চার অভ্যাস ধরে রাখা হলে মাসিকের সময়ের শারীরিক অসুবিধাগুলো মোকাবিলা করা সহজ হয়। আর শরীরচর্চার অন্যান্য উপকার তো মিলবেই। তবে কিছু ব্যতিক্রম আছে।
কোন ধরনের ব্যায়াম করা যাবে
যেকোনো ব্যায়ামই আপনি মাসিকের সময় করতে পারেন। হাঁটাহাঁটি, দৌড়ঝাঁপ, ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম, দড়িলাফ, ওজন উত্তোলন, সাইক্লিং—মন যা চায়। ক্রাঞ্চ, লাঞ্জ, পিলাটিস, যোগব্যায়াম—সবই করা যাবে। মাঝারি বা ভারী—যেকোনো ব্যায়ামই আপনি করতে পারেন, তবে আপনাকে শারীরিকভাবে সুস্থ অনুভব করতে হবে। মোটকথা, স্বস্তির সঙ্গে যে ব্যায়াম করতে পারবেন বলে মনে করবেন, সে ব্যায়ামই বেছে নিতে পারেন বিশেষ এই দিনগুলোর জন্য। খুব বেশি ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করলে পিরিয়ডের দিনগুলোয় ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলা ভালো।
ব্যায়ামে মিলবে বহু উপকার
শরীরচর্চায় কেবল শরীরেরই উপকার হয় না, ভালো হয় মনও। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে মানসিক চাপ সামলানো সহজ হবে, ভালো ঘুম হবে। আপনি থাকবেন চনমনে। শরীরচর্চার অভ্যাস ধরে রাখলে মাসিকের সময়ের মাথাব্যথা, কোমরব্যথা, তলপেটব্যথা প্রভৃতি সমস্যা মোকাবিলা করা সহজ হয়। এতে দেহের বিভিন্ন অংশে রক্ত সঞ্চালন ঠিকঠাক হয়। তাই মাসিকের সময় কেবল শুয়েবসে থাকার চেয়ে খানিকটা শরীরচর্চা করা সব দিক থেকেই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস।
কিছু ব্যতিক্রম
ডিম্বাশয়ের কিছু নির্দিষ্ট সমস্যা থাকলে কেবল তাঁদেরই নির্দিষ্ট ধরনের ব্যায়াম করতে নিষেধ করা হয়। এ ধরনের ব্যায়ামের মধ্যে আছে দড়িলাফ-জাতীয় ব্যায়াম। এমন ক্ষেত্রেও অবশ্য অন্যান্য ধরনের ব্যায়াম করা যায়। তবে এ–জাতীয় সমস্যা থেকে থাকলে ব্যায়ামের বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।