
আধুনিক জীবনধারায় অভ্যস্তদের স্ট্রেস বা চাপও অনেক বেশি। অফিস, বাসা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অনেক কিছুই চাপের কারণ। মনের এই চাপ আমাদের হৃৎপিণ্ডের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই চাপের সঙ্গে আপস না করে চাপ জয় করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
চাপ সামলানোর প্রথম ধাপ হলো জীবনকে সহজভাবে নেওয়া। জীবনের সৌন্দর্যকে আবিষ্কার করা। রোজ একবার মাথার ওপরের আকাশটাই দেখুন নাহয়। দেখুন মেঘেদের আনাগোনা। বৃষ্টি হলে একটু নাহয় ভিজুন। একবেলা হেঁটে বেড়ান আনমনে। জীবন নিয়ে অতিরিক্ত ভাবনা ভালো নয়। অতীত আপনার হাতে নেই। ভবিষ্যতেও আপনি শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। তাই বর্তমানকেই সুন্দর করে তুলুন। নিজের খুঁতগুলোকে সহজভাবে গ্রহণ করুন। জেনে নিন মানসিক চাপ সামলানোর আরও কিছু উপায়।
হাসলে মনের চাপ কমে। চাপের সঙ্গে সম্পর্কিত হরমোনের মাত্রা কমে। হৃৎপিণ্ড থাকে সুস্থ। রোজকার কাজের চাপে অনেকে হাসতে ভুলে যান। হাসির খোরাক পেতে আপনি হাস্যরসাত্মক বই পড়তে পারেন। হাসির অনুষ্ঠান দেখতে পারেন। কমেডি ধাঁচের সিনেমা বা ভিডিও খুঁজে নিয়ে সেটাও দেখতে পারেন। তবে রিল নয়। রিল আপনার চাপ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
জাগতিক জটিলতা থেকে বিচ্ছিন থাকুন কিছু সময়ের জন্য। আধুনিক জীবনধারায় আমরা সব সময় সব সংবাদ পেয়ে যাই হাতের মুঠোয়, সবার সঙ্গে যুক্ত থাকি প্রযুক্তির সহায়তায়। এতে বহু উপকার মিললেও এভাবেই আমরা ভুগি এক অদৃশ্য চাপে। তাই রোজ কিছুটা সময়ের জন্য এসব থেকে বিরতি নিন। কাজ শেষ হলে একটু নিজের মতো সময় কাটান। নিজেকে সময় দিন। পরিবারকে সময় দিন। অন্তত ১০–১৫ মিনিটের জন্য হলেও ডিজিটাল স্ক্রিন এবং টেলিভশনের পর্দা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখুন। এই বিরতি যত লম্বা করতে পারবেন, ততই ভালো। ঘুমের সময় মুঠোফোন দেখা কিংবা ঘুম থেকে উঠেই মুঠোফোন দেখার অভ্যাসও বর্জন করুন।
শরীরচর্চা করলে যে শুধু শরীরটাই সুস্থ থাকে, তা নয়। মনের চাপও কমে। বুঝতেই পারছেন, শরীরচর্চার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাবে আপনার হৃৎপিণ্ড সুস্থ থাকবে। যেকোনো ধরনের শরীরচর্চা থেকেই এমন উপকার মিলবে।
মনের চাপ কমাতে দারুণ কাজে আসে ধ্যান। তাই ধ্যান করুন, প্রার্থনায় নিমগ্ন হোন। মাথার ওপর বিরাট চাপ হয়ে বসা বিশ্ব সংসারটাকে অনেকটাই হালকা মনে হবে। শ্বাসের ব্যায়ামও বেশ কাজে দেয়।
অবসরে সুন্দর একটা বই পড়তে পারেন। প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে পারেন। সুযোগ পেলে ঘুরতে যেতে পারেন প্রকৃতির কাছে। বাড়িতে গাছের যত্ন নিতে পারেন। পোষা প্রাণীর সঙ্গে খেলতে পারেন। পরিবারহীন শিশুদের পড়াতে পারেন। তাদের জন্য রান্না করতে পারেন, তাদের সঙ্গে একটু সময় কাটাতে পারেন। বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দাদের সঙ্গেও সময় কাটানো যেতে পারে। পথের প্রাণীদের খাবার দিতে পারেন। ছাদে কিংবা বারান্দায় একটা দোলনায় বসে একটু দোল খেতে পারেন। এমনকি ঠান্ডা পানিতে গোসল করেও প্রশান্তি পেতে পারেন। এমন কাজে সময় ব্যয় করুন, যাতে আপনি প্রশান্তি পান।
সূত্র: হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং (হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল)