
বর্তমান সময়ে ঘাড়ব্যথা খুব পরিচিত সমস্যা। অফিসে দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা মুঠোফোন ব্যবহার বা হঠাৎ কোনো আঘাত—এসব কারণে আমাদের ঘাড়ে ব্যথা হয়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে এই ব্যথা শুধু ঘাড়েই সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং কাঁধ হয়ে হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। কখনো ব্যথা না হয়ে ঝিনঝিন করে বা অন্য রকম অনুভূতি হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে বলে সারভাইক্যাল রেডিকুলোপ্যাথি। এর কারণ ঘাড়ের হাড় বা সারভাইক্যাল স্পাইন থেকে বেরিয়ে আসা স্নায়ুতে চাপ দেয়।
এটা হওয়ার একটা কারণ ডিস্ক প্রোলাপ্স বা হার্নিয়েশন। অর্থাৎ হাড়ের মাঝখানের ডিস্ক ফুলে গিয়ে বা ছিঁড়ে স্নায়ুতে চাপ দেয়।
দ্বিতীয়ত, হাড়ের স্পার বা অস্টিওফাইট। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ধারালো গজানো অংশ স্নায়ু চেপে ধরে।
তৃতীয়ত, আঘাতজনিত পরিবর্তন। দুর্ঘটনা বা ট্রমায় স্নায়ুতে চাপ পড়তে পারে। চতুর্থত, খারাপ ভঙ্গি। দীর্ঘ সময় নিচু হয়ে মুঠোফোন দেখা বা একটানা ডেস্কে বসা।
এ ব্যথার অন্যতম উপসর্গ ঘাড় থেকে কাঁধ হয়ে হাত ও আঙুল পর্যন্ত ছড়িয়ে যাওয়া। ঝিনঝিনে অনুভূতি, অবশ ভাব হয়। হাত বা বাহু দুর্বল হয়ে যায়। ঘাড় নড়াচড়া করলে ব্যথা বেড়ে যায়। কখনো হাতের গ্রিপ দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
সম্পূর্ণ বিশ্রামের দরকার নেই। তবে অতিরিক্ত পরিশ্রম ও ভারী কাজ এড়িয়ে চলতে হবে।
গরম বা ঠান্ডা সেঁক নেওয়া যায়।
ব্যথা তীব্র হলে অস্থায়ীভাবে সারভাইক্যাল কলার ব্যবহার করা যেতে পারে।
টেনস (ট্রান্স কিউটেনিয়াস ইলেকট্রিক্যাল নার্ভ স্টিমুলেশন) ব্যথা কমায়।
আইএফটি (ইন্টারফেরেনশিয়াল থেরাপি) স্নায়ুর ব্যথা উপশমে কার্যকর।
থেরাপিউটিক আলট্রাসাউন্ড প্রদাহ ও পেশির সংকোচন কমাতে সহায়ক।
চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক, মাংসপেশি শিথিলকারী ওষুধ খেতে পারেন।
ব্যথা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে ঘাড়ের স্বাভাবিক নড়াচড়া ফিরিয়ে আনতে মোশন এক্সারসাইজ করা যেতে পারে।
মাংসপেশি শক্তিশালী করতে আইসোমেট্রিক নেক এক্সারসাইজ করা যায়।
মুঠোফোন বা ট্যাব ব্যবহারের সময় মাথা নিচু না করে চোখের সমান উচ্চতায় ধরুন।
কম্পিউটারের মনিটর চোখের সমান্তরালে রাখুন, চেয়ারের উচ্চতা ঠিক করুন।
উঁচু বালিশে শুবেন না।
মাঝারি উচ্চতার শক্ত বালিশ ব্যবহার করুন।
মাথায় ভারী জিনিস বহন করবেন না।
এক হাতে ভারী জিনিস না নিয়ে দুই হাতে ভাগ করে তুলুন।
আধা ঘণ্টা পরপর কাজের বিরতি নিয়ে একটু দাঁড়িয়ে হাঁটুন।
গাড়ি চালানোর সময় লম্বা সফরে ঘাড়ের জন্য ছোট কুশন ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডা. সাকিব আল নাহিয়ান, সহকারী অধ্যাপক, ফিজিক্যাল মেডিসিন, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ