লিভার সিরোসিস হলে লিভারের কোষ ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তন্তুময় টিস্যু দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় এবং নষ্ট হয় লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা
লিভার সিরোসিস হলে লিভারের কোষ ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তন্তুময় টিস্যু দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় এবং নষ্ট হয় লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা

লিভার সিরোসিস কেন হয়, কীভাবে নিরাপদ থাকবেন

লিভার সিরোসিস হলে লিভারের কোষ ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তন্তুময় টিস্যু দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দেশে প্রায় এক কোটি মানুষ এই রোগের ঝুঁকিতে। প্রতিবছর দেশে প্রায় ২৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় লিভার-সংক্রান্ত রোগে।

কেন হয়

হেপাটাইটিস বি, সি ও ডি ভাইরাসে লিভারে প্রদাহ হয়। দীর্ঘদিন ধরে প্রদাহ লিভারের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এতে লিভার সংকুচিত হয়ে যায়। ফ্যাটি লিভার অর্থাৎ লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হলে লিভার কোষে প্রদাহ হয়ে নষ্ট হতে থাকে এবং একসময় সিরোসিস হতে পারে।

সিরোসিস হতে পারে এসব কারণে—

  • অতিরিক্ত মদ্যপান

  • অটোইমিউন হেপাটাইটিস

  • কিছু বংশগত রোগ

  • পিত্তথলি বা পিত্তনালির ব্যাধি

  • ওষুধের বিষক্রিয়া

লক্ষণগুলো কী

সিরোসিসের শুরুতে তেমন উপসর্গ থাকে না। খাবারে অরুচি, বমিভাব, শরীর দুর্বলতা, ক্লান্তি ও ওজন কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় অন্য রোগের জন্য রক্ত পরীক্ষা, পেটের আলট্রাসাউন্ড বা সার্জারির সময় রোগটি ধরা পড়ে।

রোগের অগ্রসর পর্যায়ে জন্ডিস, পায়ে বা পেটে পানি, রক্তবমি বা কালো পায়খানা হতে পারে। রোগী চেতনা হারিয়ে কোমায় চলে যেতে পারেন।

চিকিৎসাপদ্ধতি

প্রাথমিক সিরোসিসে অন্তর্নিহিত কারণ অনুযায়ী চিকিৎসায় লিভারের ক্ষতি কমানো সম্ভব। মূল কারণ নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি ( হেপাটাইটিস বি, সি ও ডি), ওজন কমানো ও ব্যায়াম (ফ্যাটিলিভার), মদ্যপান বর্জন ও ক্ষতিকর ওষুধ বন্ধ করার দরকার পড়ে।

সিরোসিসের কারণে জটিলতা নিয়ন্ত্রণে পায়ে বা পেটে পানি হলে তার ওষুধ দিতে হয়। রক্তবমি হলে খাদ্যনালি এন্ডোস্কপির মাধ্যমে দেখা ও প্রয়োজনে ওষুধ ও রক্তনালি বন্ধনের প্রয়োজন পড়ে। বিভ্রান্তি বা কোমা হলে হাসপাতালে ভর্তি ও প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে।

জীবাণু সংক্রমণ হলে খেতে হবে অ্যান্টিবায়োটিক। লিভার ক্যানসার পর্যবেক্ষণের জন্য ছয় মাস পরপর আলট্রাসাউন্ড ও রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে। অতি অগ্রসর ক্ষেত্রে লিভার প্রতিস্থাপনের দরকার হতে পারে।

প্রতিরোধের উপায়

● হেপাটাইটিস বি-এর টিকা নিতে হবে। 

● হেপাটাইটিস সি স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা।

● ইনজেকশন নেওয়ার প্রয়োজন হলে ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার। শেভিংয়ের সময় অপরের ব্যবহৃত ব্লেড ব্যবহার না করা।

● নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন নিশ্চিত করা ও সুরক্ষিত যৌন জীবনচর্চা।

● সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা।

● অ্যালকোহল বর্জন ও ওষুধ সেবনে সচেতনতা।

অধ্যাপক ডা. বিমল চন্দ্র শীল, মেডিসিন, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা