ভারতীয় ক্রিকেটার সরফরাজ খান প্রায় ১৭ কেজি ওজন কমিয়েছেন মাত্র দেড় মাসে
ভারতীয় ক্রিকেটার সরফরাজ খান প্রায় ১৭ কেজি ওজন কমিয়েছেন মাত্র দেড় মাসে

মাত্র দেড় মাসে কীভাবে ১৭ কেজি ওজন কমালেন ক্রিকেটার সরফরাজ খান?

ভারতীয় ক্রিকেটার সরফরাজ খানের নাম এখন আলোচনায়। মজার বিষয় হলো, সেটা ক্রিকেট নিয়ে নয়, বরং তাঁর চোখে পড়ার মতো ওজন কমানো নিয়ে। মাত্র দেড় মাসে তিনি কমিয়েছেন প্রায় ১৭ কেজি ওজন। জিমে কঠোর ব্যায়াম বা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাম ঝরিয়ে নয়, এই রূপান্তরের মূল চাবিকাঠি ছিল ডায়েট। জেনে নিন সরফরাজ খান কীভাবে এই ওজন কমালেন।

শুরুটা যেভাবে করেছিলেন

সরফরাজ খান ১৭ কেজি ওজন কমিয়েছেন ভাত, রুটি, চিনি, ময়দা ও বেকড খাবার একেবারে বাদ দিয়ে। এর পরিবর্তে খাদ্যতালিকায় তৃপ্তির জন্য রেখেছিলেন বেশি আঁশসমৃদ্ধ ফল ও সবজির সালাদ, ব্রকলি, শসা। প্রোটিনের জন্য রেখেছিলেন গ্রিল করা মাছ ও মুরগি, সেদ্ধ ডিম আর গুড ফ্যাটের জন্য রেখেছিলেন অ্যাভোকাডো। চা ও কফির পরিবর্তে খেয়েছেন গ্রিন টি ও গ্রিন কফি।

৮০ শতাংশ ওজন কমে সঠিক ডায়েটে

ভারতের হলিস্টিক হেলথ এক্সপার্ট ড. মিকি মেহতা বলেন, ‘আপনি যত কঠোর ব্যায়ামই করুন না কেন, ওজন কমানোর ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ শতাংশ ভূমিকা রাখে খাদ্যনিয়ন্ত্রণ, আর বাকি ২০ শতাংশ ব্যায়াম। প্রতিদিন কী খাবেন, সেটাই ঠিক করে দেবে শরীর কত দ্রুত বদলাবে।’

সরফরাজ খান ১৭ কেজি ওজন কমিয়েছেন ভাত, রুটি, চিনি, ময়দা ও বেকড খাবার একেবারে বাদ দিয়ে

সব শর্করা কি বাদ দেওয়া যায়

আমাদের শরীর দ্রুত শক্তি পায় শর্করাজাতীয় খাবার, বিশেষত পলিশ করা চালের ভাত, সাদা ময়দা, চিনি থেকে। এসব অতিরিক্ত খেলে ইনসুলিন বেড়ে যায়, এর ফলে ফ্যাট জমে, বিপাকক্রিয়া ধীর হয় এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়।

তবে শর্করা একেবারে বাদ না দিয়ে ‘ভুল সময়ের ভুল শর্করা’ বাদ দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। দৈনিক মোট ক্যালরির ৪৫-৬৫ শতাংশ আসা উচিত শর্করা থেকে। যেমন ২ হাজার ক্যালরির ডায়েটে সর্বোচ্চ ৩০০ গ্রাম শর্করা রাখুন। তবে যদি আপনি ক্যালরি-ডেফিসিট ডায়েট (যতটা ক্যালরি পোড়াবেন, তার চেয়ে কম ক্যালরি গ্রহণ করার ডায়েট) অনুসরণ করেন, তাহলে দৈনিক শর্করার পরিমাণ নেমে আসবে প্রায় ১৫০ গ্রাম বা তারও কমে।

পুষ্টিকর শস্য বাজরা (মিলেট), মুগ ডালের খিচুড়ি, গরম স্যুপ আর হারবাল চায়ের মতো কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট খেলে সহজে হজম হয় এবং চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। এর সঙ্গে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলে শরীর শক্তির জন্য চিনি নয়, জমে থাকা চর্বি পোড়াতে শুরু করে।

এক মাস ভাত-রুটি-ময়দা বাদ দিলে কী হয়

এক মাস ভাত-রুটি বা ময়দাজাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করলে ওজন বেশ কমে যেতে পারে। কারণ, শরীরে জমা থাকা গ্লাইকোজেন (যা শর্করা থেকে তৈরি হয়) কমে যায়, আর গ্লাইকোজেন পানি ধরে রাখে। এই গ্লাইকোজেন কমলে পানি-ওজনও কমে। শর্করা না পেলে শরীর শক্তির জন্য চর্বি পোড়াতে শুরু করে, তবে এতে দুই-তিন সপ্তাহ সময় লাগে। এই সময় নিয়মিত ব্যায়াম করলে ফল আরও ভালো পাওয়া যায়।

কোন কোন ওয়ার্কআউট বা ব্যায়াম করবেন

ওজন কমানোর পাশাপাশি শরীরের গঠন ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে চাইলে এমন ব্যায়াম করতে হবে, যা পুরো শরীরে কাজ করে। এ জন্য একসঙ্গে কয়েক ধরনের ওয়ার্কআউট করা ভালো। শুরুতে কার্ডিও ওয়ার্কআউট, যেমন—অ্যারোবিকস, দৌড়, সাঁতার, সাইক্লিং বা নাচলে ভালো ফল মেলে। কারণ, এসব ব্যায়াম শরীর গরম করে এবং গ্লুকোজ ছাড়াই শরীরকে সক্রিয় করে।

এ ছাড়া ঘরে বসেই বডিওয়েট ওয়ার্কআউট করতে পারেন, যেমন স্কোয়াট, প্ল্যাঙ্ক, পুশআপ। এসব সহজেই দ্রুত ফ্যাট পুড়িয়ে ফেলে, পেশি গঠন করে এবং ফিটনেস বাড়ায়। দ্রুত ওজন কমাতেও খুব ভালো। এসব ব্যায়াম একটু গতি বাড়িয়ে বা বিরতি কমিয়ে করলে একসঙ্গে কার্ডিও ও শক্তি বাড়ানো—দুই কাজই হয়।

শুরু করুন সাবম্যাক্সিমাল ওয়েট দিয়ে

সাবম্যাক্সিমাল ওয়েট এমন ধরনের ব্যায়াম, যেখানে একজন ব্যক্তি তাঁর সর্বোচ্চ সামর্থ্যের চেয়ে কম ওজন তোলেন। শুরুতে বডি ওয়েট স্কোয়াট খুব ভালো ব্যায়াম। এটা সহজ হলেও শরীরের নিচের অংশের শক্তি ও সহনশীলতা বাড়াতে দারুণ কাজ করে। পা একটু বেশি ফাঁক করে স্কোয়াট করলে (অন্য নাম সুমো স্কোয়াট) কোমরের নিচের পেশি (গ্লুটস) আর ঊরুর ভেতরের দিকের পেশিতে বেশি কাজ করে।

সাধারণ স্কোয়াটের তুলনায় এ ধরনের স্কোয়াট একসঙ্গে একাধিক পেশিতে ভালোভাবে কাজ করে। স্কোয়াট শরীরের গঠন উন্নত করে এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে। বৈচিত্র্য আনতে চাইলে আপনি স্কোয়াট করার সময় হাত ওপরে তুলতে পারেন, সাইড বেন্ড, টুইস্ট বা সাইড কিক করতে পারেন।

স্কোয়াট ছাড়াও কিছু সহজ ব্যায়াম করতে পারেন, যেমন পেট ও বুকের শক্তি বাড়াতে পুশআপ ও প্ল্যাঙ্ক। পুরো শরীরের জন্য মাউন্টেন ক্লাইম্বার, বার্পিস আর জাম্পিং জ্যাকস। পাশাপাশি ফাংশনাল ব্যায়াম আর ক্যালিসথেনিকস একসঙ্গে করলে শরীরের শক্তি, নমনীয়তা আর ভারসাম্য বাড়বে, ওজনও কমবে।

আপনি চাইলে প্রতিদিন দুবার ব্যায়াম করতে পারেন, কিন্তু মনে রাখবেন অতিরিক্ত কঠিন ব্যায়ামের চেয়ে হালকা, ছন্দময় ও নিয়মিত ব্যায়ামই বেশি উপকারী। এতে লো-কার্ব ডায়েটে ভালো ফল পাবেন।

সবশেষে

সরফরাজ খানের এই রূপান্তর প্রমাণ করে যে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। আর নিয়মিত ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের যেকোনো বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস