
লবঙ্গ শুধু খাবারের স্বাদ বা সুবাস বাড়ায় না, এটা হৃদ্যন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এতে থাকা ইউজেনল ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমায়, ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়ায়, পাশাপাশি প্রদাহ কমায় ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন মাত্র একটি লবঙ্গ খেলে হৃদ্রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। লবঙ্গের আরও কিছু গুণ জেনে নিন।
লবঙ্গ মূলত ফুলের কুঁড়ি। এটি হৃদ্যন্ত্রসহ সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
লবঙ্গের ইউজেনল ও অন্যান্য বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল কমায়।
রক্তনালিকে সুরক্ষিত রাখে এবং প্রদাহ কমায়।
প্রতিদিন মাত্র একটি লবঙ্গ খেলে রক্তে চর্বির ভারসাম্য থাকে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমে, হৃদ্যন্ত্র ভালো থাকে, রক্তসঞ্চালন ঠিক থাকে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
১. এলডিএল কোলেস্টেরল কমে
‘জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ডায়াগনসিস রিসার্চ’-এ প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, হাইপারলিপিডেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি বা যাঁদের রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ছিল, তাঁরা লবঙ্গ খাওয়ার পর মোট কোলেস্টেরল ও এলডিএলের মাত্রা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমেছে। এ ক্ষেত্রে লবঙ্গের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক গুণই রেখেছে মূল ভূমিকা।
২. কার্ডিওভাসকুলার বায়োমার্ক উন্নত করে
‘জার্নাল অব ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড প্রিজারভেশন’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, লবঙ্গ ও আদার নির্যাসের সংমিশ্রণ প্রাণীর ওপর করা পরীক্ষায় মোট কোলেস্টেরল এবং এলডিএল কোলেস্টেরল কমিয়েছে। এই ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, লবঙ্গ স্বাস্থ্যকর লিপিড লেভেল বজায় রাখতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা হৃৎস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
৩. ধমনিতে প্লাক তৈরি করতে বাধা দেয়
লবঙ্গের প্রধান সক্রিয় উপাদান ইউজেনল এলডিএল কোলেস্টেরলের অক্সিডেশন প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। অক্সিডাইজড এলডিএল ধমনিতে প্লাক তৈরি করতে পারে, যা পরে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই নিয়মিত লবঙ্গ খেলে অ্যাথেরোসক্লেরোসিসের (ধমনিতে চর্বি জমা হওয়া) বিরুদ্ধে সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ
লবঙ্গ শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি আর্থ্রাইটিস ও বিপাকজনিত অসুস্থতার মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগে উপকারী হতে পারে।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, লবঙ্গ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, যা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য উপকারী। খাবারে বা চায়ে লবঙ্গ খেলে এটি গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে উন্নতি ঘটাতে ও ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।
হজমে সহায়তা
লবঙ্গ হজমজনিত সমস্যা, যেমন গ্যাস, পেট ফাঁপা ও অম্লতা কমাতে সাহায্য করে। এটি ডাইজেসটিভ এনজাইমের কার্যকারিতা বাড়ায়। ফলে খাবার সহজে হজম হয় এবং শরীর পুষ্টি উপাদান ভালোভাবে শোষণ করতে পারে।
মুখের যত্নে
লবঙ্গের ইউজেনল প্রাকৃতিকভাবে ব্যথানাশক ও জীবাণুনাশক। এটি দাঁতের ব্যথা ও মাড়ির সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক। এ ছাড়া লবঙ্গ মুখের জীবাণু দূর করে এবং প্রাকৃতিকভাবে নিশ্বাসে সতেজতা আনে।
অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট শক্তি
লবঙ্গ প্রচুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্টে ভরপুর, যা শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এসব অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান কোষের বার্ধক্য ধীর করে দেয়, পাশাপাশি হৃদ্যন্ত্র ও যকৃতের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
রান্নায় ব্যবহার: আমরা আস্ত লবঙ্গ রান্নায় নিয়মিতই ব্যবহার করি। এ ছাড়া গুঁড়া লবঙ্গ তরকারি ও স্যুপে ব্যবহার করা যায়।
লবঙ্গ চা: এক কাপ গরম পানিতে একটি লবঙ্গ ৫–১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এই চা প্রতিদিন খেলে হৃৎস্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
লবঙ্গ তেল: রান্নায় বা প্রাকৃতিক ফ্লেভার হিসেবে কয়েক ফোঁটা লবঙ্গ তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সতর্ক থাকতে হবে; কারণ, লবঙ্গ তেল অত্যন্ত ঘন।
সাধারণভাবে পরিমিত পরিমাণে লবঙ্গ খাওয়া নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত খেলে (বিশেষত লবঙ্গ তেল) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন লিভারের ক্ষতি বা হজমে সমস্যা। অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী নারী, অথবা যাঁদের শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে, তাঁদের নিয়মিত লবঙ্গ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সূত্র: এমএসএন