অনেকেই গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে খান। লেবুপানি নিঃসন্দেহে একটি স্বাস্থ্যকর পানীয়, যার আছে অনেক উপকারিতা। তবে গরম পানিতে লেবুর রস মেশালে অনেক গুণাগুণই হারিয়ে যায়। কেন নষ্ট হয়, টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শম্পা শারমিন খান–এর সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন রাফিয়া আলম।
আসলে কতটা গরম পানিতে লেবুর রস মেশাচ্ছেন, তার ওপর ব্যাপারটা নির্ভর করে। সাধারণভাবে গরম পানি বলতে যা বোঝায়, তাতে মেশানো হলে লেবুর রসের অধিকাংশ ভিটামিন সি–ই নষ্ট হয়ে যায়।
তাই ভিটামিন সি পেতে হলে খুব বেশি গরম পানিতে লেবু মেশাবেন না। একেবারেই হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। সবচেয়ে ভালো হয়, স্বাভাবিক তাপমাত্রার যে পানি আমরা পান করি, তার সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিন।
আরও মনে রাখতে হবে, লেবুর রসের তুলনায় খোসায় ভিটামিন সি-এর পরিমাণ বেশি। তাই পানীয়ের পুষ্টিগুণ বাড়াতে চাইলে লেবুর রস পানিতে মিশিয়ে লেবুর খোসাটিও সেই পানিতে ছেড়ে দিতে পারেন। মিনিট পাঁচেক পর খোসাটি সরিয়ে তরলটুকু খেয়ে নিন।
নিয়ম মেনে লেবুপানি তৈরি করা হলে ভিটামিন সির উপকারগুলো মিলবে ঠিকঠাক।
দেহকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখতে, দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি কার্যকর ভূমিকা রাখে। দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমাতেও ভিটামিন সি প্রয়োজন।
ঠান্ডা-কাশি এবং ত্বকের ক্ষত সারাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে এই ভিটামিন।
ত্বকের কোলাজেন তৈরির জন্য ভিটামিন সি আবশ্যক। লেবুপানি খেলে তাই ত্বক থাকবে মসৃণ। চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ কম পড়বে।
বিভিন্ন খাবারের মধ্যে থাকা আয়রন শোষণে ভিটামিন সি প্রয়োজন হয়।
পানীয়তে লেবুর খোসা মেশালে তিতকুটে লাগতে পারে। তাই বলে এই ভাব কাটাতে লেবুপানিতে চিনি মেশাবেন না। চিনি মেশালে তা আর স্বাস্থ্যকর পানীয় থাকবে না। কৃত্রিম চিনিও স্বাস্থ্যকর বিকল্প নয়। তিতকুটে ভাব কাটাতে সামান্য মধু যোগ করে নিতে পারেন।
লেবুপানি হজম সহায়ক পানীয়। তবে খালি পেটে লেবুপানি খেলে কারও কারও অ্যাসিডিটিও হতে পারে। যাঁদের এ ধরনের সমস্যা হয়, তাঁরা খাবার খাওয়ার মিনিট কুড়ি পর লেবুপানি খেতে পারেন।
দীর্ঘ সময় ধরে অল্প অল্প করে লেবুপানি খাবেন না। একবারে বসেই খেয়ে নিন। আর লেবুপানি খাওয়ার পর ভালোভাবে কুলকুচি করুন। এসব নিয়ম না মানলে লেবুর রস দাঁতের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। দাঁতের সুরক্ষায় স্ট্র দিয়ে লেবুপানি খাওয়া যেতে পারে। তবে প্লাস্টিকের স্ট্র নয়, বরং ধাতু, কাচ বা বাঁশের স্ট্র ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো টেকসই, পরিবেশবান্ধব এবং স্বাস্থ্যকর।