কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাভাবিক মলত্যাগের ধরনে পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনকেই আইবিএস ভেবে ভুল করেন কেউ কেউ। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএসের লক্ষণগুলো বেশ অস্বস্তিকর হলেও এটি কোনো ভয়াবহ রোগ নয়। অন্যদিকে কোলন ক্যানসার প্রাণঘাতী রোগ। তাই দুটি রোগের লক্ষণ গুলিয়ে ফেললে সৃষ্টি হতে পারে জটিলতা।
আইবিএস ও কোলন ক্যানসারের কিছু উপসর্গ বেশ কাছাকাছি ধরনের। সাম্প্রতিক সময়ে কমবয়সী মানুষের মধ্যে কোলন ক্যানসারের হার বাড়ছে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসায় নিরাময় হয় এই মারাত্মক রোগ।
আইবিএসে আক্রান্ত রোগী বেশ লম্বা সময় ধরে একই ধরনের সমস্যায় ভোগেন। নির্দিষ্ট ধরনের খাবার খেলে কিংবা মানসিক চাপে থাকলে শুরু হয় পেটব্যথা। ব্যথার সঙ্গে পেটে হয় অস্বস্তিকর অনুভূতি। মলত্যাগ করলে ব্যথা ও অস্বস্তি কমে।
আইবিএসে আক্রান্ত কেউ কেউ ভোগেন কোষ্ঠকাঠিন্যে, কারও কারও মল হয় নরম। অন্যদিকে কোলন ক্যানসারের মূল উপসর্গ কিন্তু ব্যথা নয়। বরং কোলন ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাভাবিক মলত্যাগের ধরনে পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনকেই আইবিএস ভেবে ভুল করেন কেউ কেউ। এ প্রসঙ্গে জানালেন সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালের কনসালট্যান্ট সার্জন ডা. রেজা আহমদ।
আইবিএসের ক্ষেত্রে দুধ বা শস্যদানার তৈরি খাবার (যাতে গ্লুটেন আছে) খেলে কিংবা মানসিক চাপে পড়লে পেটব্যথা হতে পারে। পেট কামড়ে ধরার মতো অনুভূতি হতে পারে। কোলন ক্যানসারের ক্ষেত্রে ব্যথা হয় কম। হলেও তা সাধারণত হয় চিনচিনে ধরনের।
আইবিএস ও কোলন ক্যানসার দুই রোগেই ব্যক্তি মলত্যাগের পর আবার মলত্যাগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারেন।
দুই রোগেই পেট ভার অনুভব করতে পারেন রোগী।
এসব উপসর্গের কোনোটি যদি আপনার মধ্যে থাকে এবং ক্রমাগত সেটির তীব্রতা বাড়তে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মলের সঙ্গে রক্ত আসা মারাত্মক কোনো উপসর্গ হতে পারে। পাইলস, অন্ত্রের প্রদাহ বা অন্য কোনো সমস্যায়ও রক্ত আসতে পারে, তবে এসব রোগেরও চিকিৎসা প্রয়োজন।
মলের সঙ্গে রক্ত এলে কিংবা টয়লেট পেপারে রক্ত দেখা গেলে চিকিৎসা নিন অবশ্যই, রক্তের রং যেমনই হোক। সঠিক কারণ না জেনে বিষয়টিকে সাধারণ কোনো উপসর্গ ভেবে নেবেন না।
ওজন কমে যাওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ, যখন আপনি ওজন কমানোর জন্য বিশেষ কোনো কিছুই করছেন না।
হুট করে মলত্যাগের ধরন বদলে গেলে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিন। বেশ কিছুদিন ধরে বদলে যাওয়া ধরনটি রয়ে গেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
এমনটা হতে পারে যে আগের চেয়ে বেশি বা কমবার মলত্যাগ করছেন বেশ কিছুদিন ধরেই। কিংবা মল আগের চেয়ে নরম বা শক্ত হচ্ছে। এমন পরিবর্তন যদি অন্তত এক–দুই সপ্তাহ থাকে, তাহলে চিকিৎসা নিতে দেরি করবেন না।
ক্যানসার হলে পেটে চাকা অনুভব করতে পারেন। তা ছাড়া শৌচকর্মের সময়ও কোনো চাকার একটা অংশের উপস্থিতি টের পেতে পারেন।
চেহারা ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে মনে হলে কিংবা কোনো কারণ ছাড়াই প্রায়ই ক্লান্ত বা অবসন্ন অনুভব করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতনতা জরুরি। জীবনযাত্রার ভুলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
বিশেষত যাঁদের পরিবারে কোলন ক্যানসারের ইতিহাস আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনচর্চা গড়ে তোলা প্রয়োজন সবারই।
পর্যাপ্ত শাকসবজি খান।
লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত মাংস এড়িয়ে চলুন।
কায়িক শ্রম না করা হলে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।
ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন।