
বাড়িভাড়া, ইউটিলিটি বিল, বাজার খরচ, যাতায়াত ভাড়া, সন্তানের পড়ালেখার খরচ—নানা খাতেই বরাদ্দ রাখে একটি পরিবার। তবে এমন পরিবার কমই আছে, যেখানে রোজগারের একটা অংশ চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। কেউ দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগে ভুগলে অবশ্য আলাদা কথা। তবে পরিবারের সবাই যখন দিব্যি সুস্থ, তখন রোগবালাইয়ের কথা অধিকাংশ মানুষই ভাবেন না।
হুট করে পরিবারের কেউ বড় ধরনের অসুস্থতায় পড়লে খরচ মেটাতে অনেকেই হিমশিম খান। অথচ তাঁদের অনেকেরই আয়রোজগার মন্দ না, জীবনও চলে স্বাচ্ছন্দ্যে। আকস্মিক বিপদ সামলানোর খরচটা জোগাতে গেলেই হয় মুশকিল।
রাতবিরেতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন যে কেউ। আর ওই মুহূর্তে পাশে দাঁড়ানোর মতো কোনো বন্ধু আপনি খুঁজে না-ই পেতে পারেন। ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও পরিবারের মাথাতেই চাপে সেই ঋণের বোঝা।
এ দেশের বেশির ভাগ মানুষের স্বাস্থ্যবিমাও করা থাকে না। তাই হঠাৎ অসুস্থতার আর্থিক ধাক্কাটা সামলাতে মুশকিলে পড়ে বহু পরিবার। এমন বিপদ এড়াতেই প্রয়োজন হেলথ বাজেট।
জীবন যখন ছন্দে চলে, তখন খারাপ ভাবনা ভাবতে না চাওয়াটাই স্বাভাবিক। সুস্থ মস্তিষ্কের কেই–বা নিজের আপনজনদের অসুস্থতা কল্পনা করেন! তবে না ভাবতেও হাজির হতে পারে যেকোনো বিপদ। ঘটতে পারে আকস্মিক দুর্ঘটনা।
পথেঘাটে তো বটেই, বাড়িতেও হতে পারে বিপদ। ডেঙ্গু জ্বরের মতো রোগে বিপর্যস্ত হতে পারে শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী কিংবা পরিবারের অন্য কেউ। অন্তঃসত্ত্বা নারীকে নানা কারণেই যেকোনো সময় হাসপাতালে নিতে হতে পারে।
যেকোনো মারাত্মক পরিস্থিতিতে পরিবারের যে কাউকেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) কিংবা হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) ভর্তি করানোর প্রয়োজন হতে পারে। আর এসব ক্ষেত্রে হেলথ বাজেট হতে পারে বিপদের বন্ধু।
চিকিৎসা ব্যয় মানে তো কেবল ওষুধ আর হাসপাতালের বিছানা ভাড়াই নয়। মানসম্মত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যও বড় একটা অর্থ খরচ হয়। এ ছাড়া বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যরা সুস্থ থাকলেও বছরে অন্তত একবার কিছু পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। নিয়মমাফিক পরীক্ষা করালে ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগও প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়তে পারে। তাতে রোগটা জটিল হয়ে পড়ার ঝুঁকি কমে যায়। রোগী তুলনামূলক কম কষ্ট পান। চিকিৎসা ব্যয়ও কম হয়।
আপনার আপনজন অসুস্থ হলে মানসম্মত সেবা পেতে সেরা জায়গাতেই তাঁকে নিয়ে ছুটে যেতে চাইবেন আপনি। দেশের করপোরেট হাসপাতালগুলোর তালিকায় অগ্রণী এক নাম ল্যাবএইড। খরচ প্রসঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হলো।
রোগীর জীবন বাঁচাতে দ্রুততম সময়ে জরুরি সেবা দিতে প্রস্তুত থাকেন তাঁরা। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে চলে আধুনিক চিকিৎসা। তবে এই সেবা পেতে তাঁদের এখানে যে খরচ হয়, তা উন্নত দেশগুলোর চেয়ে অনেক কম।
ভারতে এই সেবা পেতে একজন ব্যক্তির তিন গুণ খরচ হয়, ব্যাংককের বামরুনগ্রাদের মতো হাসপাতালে খরচ হয় ছয় গুণ, আর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে গুনতে হয় দশ গুণ খরচ।
হেলথ বাজেট রাখার অর্থ হলো আপনি আপনার পরিবারের কারও অনাকাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা ব্যয়ের কথা ভেবে কিছুটা সঞ্চয় করবেন। রোজগার যতই হোক না কেন, একজন দায়িত্বশীল মানুষের কাজ হলো সেখান থেকে কিছুটা অংশ কেবল এই উদ্দেশ্যেই আলাদা করে রাখা। চাইলে কেউ এই অংশ ফিক্সড ডিপোজিট করেও রাখতে পারেন।
আরও জেনে রাখা প্রয়োজন পরিবারের সব সদস্যের রক্তের গ্রুপ। জানা উচিত, পরিবারের কোন সদস্য কোন ওষুধ সেবন করে, কার কিসে অ্যালার্জি আছে। পরিবারের সবার এই সাধারণ বিষয়গুলো জানা থাকলে এবং একটা হেলথ বাজেট থাকলে হঠাৎ অসুস্থতার বিপদ সামলানো সহজ হয়।