এই বয়সে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির ঝুঁকিতে থাকেন একজন নারী
এই বয়সে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির ঝুঁকিতে থাকেন একজন নারী

৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে

জীবনের পাঁচটি দশক পেরিয়ে আসা একজন নারীর সামনে জীবনটা দেখা দেয় এক ভিন্ন রূপে। শারীরিক পরিবর্তন তো ঘটেই, মনের জগতেও ঘটে অদলবদল। অনেকের ধারণা, এই বয়সে এসে খাবারদাবারের প্রতি তেমন গুরুত্ব না দিলেও চলে। বাস্তবতা হলো, এই বয়সে দেহের চাই আরও বেশি যত্ন, আরও বেশি মনোযোগ। সুস্থ থাকতে বিশেষ কিছু পুষ্টি উপাদান যেমন প্রয়োজন, তেমনি নির্দিষ্ট ধরনের খাবার বাদ দেওয়াও জরুরি। পরিবারের ৫০ পেরোনো নারীর সুস্থতা নিশ্চিত করতে সেসব দেখভালের দায়িত্ব নিতে হবে বাকিদেরও।
এই বয়সে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির ঝুঁকিতে থাকেন একজন নারী। ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড় ক্ষয়ে যায়, ভেঙে যায় সহজেই। পড়ে গেলে তো ভাঙেই, জোরে টান লাগলেও হাড় ভেঙে যেতে পারে কারও কারও। টাঙ্গাইলের সরকারি কুমুদিনী কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শম্পা শারমিন খান বলেন, ‘৫০ পেরোনোর পর একজন নারীর ক্যালসিয়ামের চাহিদা বাড়ে। হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি এড়াতে এই বয়সেও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে রোজ। পরিবারের খুদে সদস্যটির জন্য যেমন, তেমনি বয়োজ্যেষ্ঠ নারীর জন্যও রোজ এক গ্লাস দুধ বরাদ্দ রাখতে হবে। এই ক্যালসিয়ামকে পুরোপুরিভাবে দেহের কাজে লাগাতে প্রয়োজন ভিটামিন ডি। সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।’

৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানালেন শম্পা শারমিন খান—

ক্যালসিয়ামের বিকল্প নেই

এক গ্লাস দুধ কিংবা তা দিয়ে তৈরি খাবার খেতে পারেন রোজ। দই বা লাচ্ছি খেতে পারেন। কাঁটাসহ ছোট মাছ খেতে পারলে তা থেকেও ক্যালসিয়াম মিলবে। গাঢ় সবুজ রঙের শাকসবজি, যেমন পালংশাক, ব্রকলি ও কাঠবাদামেও পাবেন কিছুটা ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়ামের উপকার পেতে অবশ্যই ভিটামিন ডি চাই। এর জন্য রোজ রোদে সময় কাটানোর অভ্যাস করুন। দেহের বেশ খানিকটা অংশে প্রতিদিন রোদ লাগান, অন্তত ২০ মিনিট ধরে।

রোজ দুধ খেলে শরীর ভালো থাকবে

বাড়তি লবণ নয়

পাতে কিংবা কোনো পানীয়তে বাড়তি লবণ নেবেন না। লবণ, বিট লবণ, পিংক সল্ট, টেস্টিং সল্ট—এসবই আপনার স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াবে। অতিরিক্ত লবণ আছে, এমন খাবারও খাবেন না। চিপস, চানাচুর, শুঁটকি ও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাবার, সস, সয়া সস, মেয়োনেজ, পনির, কাসুন্দি, ইনস্ট্যান্ট নুডলস প্রভৃতিতে বেশ খানিকটা বাড়তি লবণ থাকে। এসব এড়িয়ে চলুন। উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতার ঝুঁকি কমবে।

শর্করাও কম থাক

ভাত, রুটি, আলু কম খাবেন। চাল, আটা বা ময়দা দিয়ে তৈরি করা অন্যান্য খাবারও কম খেতে হবে। চিনি এড়িয়ে চলুন। মধু বা গুড়ও চিনির বিকল্প নয়। এভাবে সব দিক মেনে চলতে পারলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ডায়াবেটিস ও অন্য অনেক মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কমবে।

চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন

শরীর ঠান্ডা রাখার মতো খাবার খান

মেনোপজের পর নারীদের হুট করে বেশি গরম লাগার সমস্যা হতে পারে। তাই এমন খাবার খাওয়া ভালো, যাতে শরীর ঠান্ডা থাকে। পানি দেহকে ঠান্ডা রাখে। দেহের মোট পানির চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত পানি ও পানীয় প্রয়োজন। রসালো ফল এবং যেসব সবজিতে পানির পরিমাণ বেশি, সেসব গ্রহণ করুন। যেসব সবজির ভেতরটা সাদা, অর্থাৎ লাউ, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, চালকুমড়া, ধুন্দুল, পটোল প্রভৃতি সবজিতে সাধারণত প্রচুর পানি থাকে। ডাবের পানি, শসা, পাকা পেঁপে, পাকা বেল, তরমুজ, কলা, টক ফল, পুদিনাপাতা প্রভৃতি খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। পর্যাপ্ত পানি খেলে প্রস্রাবে সংক্রমণের ঝুঁকিও কমবে।

আঁশ চাই প্রচুর

নানা রকম শাকসবজি খাবেন রোজ। মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, বিভিন্ন ধরনের কপি ও শাকে প্রচুর আঁশ পাবেন। কলাতেও আঁশ আছে। তা ছাড়া খোসাসহ কিছু ফল খেতে পারেন। কিছু সবজির খোসা বিভিন্ন পদ তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। এসবেও প্রচুর আঁশ আছে। হোল গ্রেইন, অর্থাৎ গোটা শস্যের তৈরি খাবার বেছে নিন, যাতে আঁশের পরিমাণ বেশি। ডাল ও বাদাম থেকেও খানিকটা আঁশ পাবেন। আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেলে অন্যান্য উপকার তো পাবেনই, রক্তের খারাপ চর্বির পরিমাণও কমবে।