অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার পর হঠাৎ করে নিউরনগুলো মিষ্টি খাবারের প্রতি ঝোঁক বাড়ায়
অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার পর হঠাৎ করে নিউরনগুলো মিষ্টি খাবারের প্রতি ঝোঁক বাড়ায়

পেট ভরা থাকলেও কেন আমরা মিষ্টি খাবার এড়াতে পারি না

ভরপেট খাওয়ার পর মিষ্টি খাবার খাওয়ার চল আমাদের এই অঞ্চলে বহু প্রাচীন। মূল খাবারের পর পেটে জায়গা নেই নেই বলেও মিষ্টি পদ দেখলে ঠিকই আবার জায়গা বের হয়ে যায়। আর যাঁরা মিষ্টিপ্রেমী, তাঁদের কাছে তো মিষ্টিবিহীন কোনো ভোজই ঠিক পূর্ণ নয়। বিজ্ঞানে কিন্তু এর ব্যাখ্যা আছে। ক্ষুধা না থাকলেও মিষ্টি দেখলেই খাওয়ার ইচ্ছা জাগার পেছনে কাজ করে আপনার মস্তিষ্ক। তবে মানবমস্তিষ্ক বোঝার আগে দুই দল ইঁদুরের মস্তিষ্কের ওপর বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। যেখানে নিয়মিত খাবার দেওয়ার পাশাপাশি মিষ্টিজাতীয় খাবার দেওয়া হয় একদলকে। ফলাফলে দেখা যায় মিষ্টি খাওয়ানো ইঁদুরের দলটি ৬ গুণ ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতে চায় পরবর্তী সময়ে। একই পদ্ধতিতে যখন মানুষের ওপর পরীক্ষাটি করা হয়, ফলাফল আসে একই।

যাঁরা মিষ্টিপ্রেমী, তাঁদের কাছে তো মিষ্টিবিহীন কোনো ভোজই ঠিক পূর্ণ নয়

কেন মিষ্টির জন্য সব সময় আমাদের পেটে জায়গা থাকে

বৈজ্ঞানিক তথ্য অনুসারে, প্রধান ‘অপরাধী’ হলো প্রো-অপিওমেলানোকর্টিন (পিওএমসি) নামক বেশ কিছু নিউরন, যা মস্তিষ্কের আর্কুয়েট নিউক্লিয়াসে পাওয়া যায়। এই জায়গাটি ক্ষুধা এবং তৃপ্তির অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এখানেও ‘কিন্তু’ আছে। অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার পর হঠাৎ করে নিউরনগুলো মিষ্টি খাবারের প্রতি ঝোঁক বাড়ায়। মূলত এটি প্রমাণ করে যে মিষ্টির প্রতি আমাদের যে ভালোবাসা, তা কেবল অভ্যাস বা স্বাদের জন্য নয়, বরং এটি জীববিজ্ঞান।

আগেই বলেছি, পিওএমসি নিউরনগুলো তৃপ্তির যে অনুভূতি সেটা নিয়ন্ত্রণ করে। আপনাকে বলে দেয় কখন খাওয়া বন্ধ করতে হবে। কিন্তু একবার পেট ভরে গেলে, ক্ষুধা নিবারণের পরিবর্তে, এসব নিউরন মস্তিষ্কে একটি ওপিওয়েড প্রতিক্রিয়া সক্রিয় করে তোলে। এই ওপিওয়েড নিঃসরণ আপনার চিনির আকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে দেয়, ফলে হঠাৎ করে মিষ্টিকে অপরিহার্য বলে মনে হতে থাকে।

চিনি আদতে পাকস্থলীকে শিথিল করে এর খাবার গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ায়

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ব্যারিয়াট্রিক সার্জন (যাঁরা ওজন কমানোর সার্জারি করেন) মীর আলী মিষ্টি খাবারের প্রতি আমাদের এই ঝোঁকের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। চিনি আদতে পাকস্থলীকে শিথিল করে এর খাবার গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে আপনি কেবল মিষ্টি খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষাবোধই করেন না, সঙ্গে আপনার পূর্ণ পাকস্থলী আরও খাবার গ্রহণ করে। আর এভাবেই আমরা অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলি। মীর আলী আরও বলেন, শেষ পর্যন্ত চিন্তা করলে এটি শারীরবৃত্ত এবং মনোবিজ্ঞানের সংমিশ্রণ। আমরা মানসিকভাবে খাবারের পরে মিষ্টি কিছু চাইতে যেন বাধ্য।

বাকিরা কী বলছেন

চিনি যেভাবে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করতে পারে, অন্য খাবার সেটা পারে না। পেট ভরা থাকলেও চিনি সেটাকে টপকে যেতে পারে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত কোষ বিপাকসংক্রান্ত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য। গবেষকেরা দেখেছেন, চিনি আমাদের ডোপামিন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে, ফলে পেট ভরা থাকলেও আমরা আরও বেশি কিছু চাই। মাসিক বৈজ্ঞানিক জার্নাল ‘অ্যাপেটাইটে’ ২০১৮ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে যে অতিরিক্ত খাবার খেয়ে পেট ভরা থাকলেও মিষ্টির জন্য ঠিকই জায়গা বের হয়ে যায়। ‘ফ্লেভার-অ্যাসোসিয়েটেড অ্যাপ্লিকেশনস ইন হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস ফুড প্রোডাক্টস’ বইয়ে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, কিছু খাবার, বিশেষ করে যেসব খাবারে চর্বি, চিনি ও লবণ বেশি থাকে (যেসবকে ডেজার্টের সেরা উপাদানও বলা হয়), সেসব মস্তিষ্কে তৃপ্তির সংকেতকে অগ্রাহ্য করতে পারে। ফলে পেট ভরা থাকার পরও আমরা খেতেই থাকি খেতেই থাকি।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট