এই ৪ পানীয় আর্টারি প্লাক দূর করতে সহায়ক, শুনুন চিকিৎসকের পরামর্শ

অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা আর্টারি প্লাক দূর করার নানান উপায় খোঁজে মানুষ। এমনটাও শোনা যায়, স্বাস্থ্যকর পানীয় খেলে আর্টারি প্লাক কমানো সম্ভব। আদতে কি তা ঠিক? এ বিষয়ে স্কয়ার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন–এর সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন রাফিয়া আলম

অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস ও আর্টারি প্লাকের অর্থ কী

অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বলতে রক্তনালির ভেতর চর্বি জমা হয়ে রক্তনালি শক্ত হয়ে যাওয়াকে বোঝায়
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বলতে রক্তনালির ভেতর চর্বি জমা হয়ে রক্তনালি শক্ত হয়ে যাওয়াকে বোঝায়। এতে রক্তনালির ভেতর যা জমা হচ্ছে, সেটার নামই প্লাক। আর্টারি অর্থাৎ ধমনির ভেতর প্লাক সৃষ্টি হয় বলে একে আর্টারিয়াল প্লাক বা সাধারণভাবে আর্টারি প্লাক বলা হয়।

আর্টারি প্লাক হওয়ার অর্থ হলো ওই ধমনিতে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কারও হৃৎপিণ্ডের একটি রক্তনালিতে শতকরা ৯০ শতাংশ প্লাক থাকার অর্থ হলো তাঁর ওই রক্তনালির রক্তপ্রবাহের ৯০ শতাংশই বাধা পাচ্ছে। এর মানে রক্তনালিটি দিয়ে কেবল ১০ শতাংশ রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে।

হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে প্লাক হলে হৃৎপিণ্ড নিজের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় না। আর এভাবেই একসময় হয় হার্ট অ্যাটাক। একইভাবে মস্তিষ্কে যে রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন হয়, সেসবের কোনোটিতে প্লাক হলে স্ট্রোক হতে পারে। তাই এই প্লাক কমানো কিংবা প্লাক প্রতিরোধের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়।

যে ৪ পানীয় আর্টারি প্লাক দূর করতে সহায়ক

আর্টারি প্লাক রাতারাতি সৃষ্টি হয় না। এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহের ফল। তাই এমন কিছু পানীয় খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন, যা প্রদাহ কমায়। এমন চারটি পানীয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

পানি ও ডিটক্স পানীয়

স্বাদ বাড়াতে পানির সঙ্গে খানিকটা পুদিনাপাতা বা লেবু যোগ করে খেলেও উপকার মিলবে

রোজ পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেলে প্রদাহ থেকে বাঁচা যায়। ডিটক্স পানীয় খেলেও সেই উপকারটাই মিলবে। কিংবা স্বাদ বাড়াতে পানির সঙ্গে খানিকটা পুদিনাপাতা বা লেবু যোগ করে খেলেও উপকার মিলবে। রোজই খেতে পারেন এ ধরনের পানীয়।

টাটকা ফলের রস

টাটকা ফলের রস খেতে পারেন সপ্তাহে দুই-তিন দিন

টাটকা ফলের রস খেতে পারেন সপ্তাহে দুই-তিন দিন। অবশ্যই এমন ফলের রস খাবেন, যাতে বাড়তি চিনি বা লবণ যোগ করা হয়নি। তবে ফলের রসের চেয়ে রোজ গোটা ফল বা ফলের টুকরা খাওয়া বেশি উপকারী। এতে প্রচুর আঁশও পাবেন। এই আঁশও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। সম্ভব হলে খোসাসহ ফল খান।

বিটরুটের রস

বিটরুট মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়

বিটরুটের রসও স্বাস্থ্যকর। তবে সারা বছর বিটরুট পাউডার থেকে পানীয় তৈরি করে খাওয়া জরুরি নয়। বিটরুটের মৌসুমে আপনি টাটকা বিটরুট খেতে পারেন নানাভাবেই। কিন্তু পাউডার হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হওয়া বিটরুট পাউডারে আপনি সব পুষ্টি উপাদান না-ও পেতে পারেন। তাই রক্তনালির জন্য তা উপকারী কি না, নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। বরং টাটকা বিটরুট বা এর থেকে তৈরি করা রস কাজে আসবে।

গ্রিন–টি

গ্রিন–টি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে

গ্রিন–টিও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তবে দুই–এক কাপে খুব একটা উপকার পাওয়া যায় না। প্রদাহ কমাতে রোজ চার কাপ গ্রিন–টি খেতে হবে আপনাকে। তাতে ওজনও কমবে। কমে যাবে বাড়তি চর্বি।

তবে জীবনধারাই মূল বিষয়

আর্টারি প্লাক সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টির সঙ্গে জীবনধারা গভীরভাবে যুক্ত। আপনি কী খাচ্ছেন, কতটা কায়িক শ্রম করছেন, এমনকি কতটা চাপে আছেন, তা–ও যুক্ত এর সঙ্গে।

খাওয়াদাওয়ার দিকটা নিয়েই একটু জেনে রাখা যাক। শুধু পানীয়ই নয়, বরং এমন সব খাবার বেছে নেওয়া উচিত, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। উদ্ভিজ্জ খাবার এবং হোল গ্রেইন বা গোটা শস্য থেকে তৈরি করা খাবার বেছে নেওয়া ভালো।

চর্বি বা ক্রিমজাতীয় খাবার, চিনি এবং বাড়তি লবণ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। আপনি যদি কোনো পানীয় খান, আদতে তা রক্তনালির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে কি না, তা–ও নির্ভর করবে এসব বিষয়ের ওপর।

তার মানে গ্রিন–টি বা ফলের রসের মতো উপকারী কোনো পানীয়তেও যদি চিনি, লবণ বা ক্রিম যোগ করা হয়, তা আর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে না। ফলে আর্টারি প্লাক সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েই যাবে।

হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ব্যায়ামের মতো কায়িক শ্রমসহ জীবনধারার অন্যান্য দিকের প্রতিও গুরুত্ব দিন

শেষ কথা

  • নিয়মমাফিক স্বাস্থ্যকর তরল গ্রহণের অভ্যাস মন্দ নয়। তবে কেবল কিছু স্বাস্থ্যকর পানীয় খেলেই আপনি সুস্থ থাকবেন, এমনটা ধরে নেওয়ার সুযোগ নেই।

  • আর এ–ও মনে রাখবেন, গোটা ফলমূল বা গোটা সবজি থেকে আপনি সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন।

  • কায়িক শ্রমসহ জীবনধারার অন্যান্য দিকের প্রতিও গুরুত্ব দিন।

  • সময়মতো ঘুমান। পর্যাপ্ত ঘুমান।

  • মানসিক চাপ সামলে চলতে শিখুন।

  • যাঁদের রক্তনালির প্রবাহ এরই মধ্যে বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদের জন্য খুব জরুরি হলো বিশেষজ্ঞের পরামর্শমাফিক চিকিৎসা নেওয়া। কেবল স্বাস্থ্যকর পানীয়র ভরসায় থাকার সুযোগ নেই।