
রোজকার জীবনধারার ওপর আমাদের সুস্থতা নির্ভর করে অনেকাংশেই। সুস্থ থাকতে কিছু ক্ষেত্রে যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। কিছু রোগ প্রতিরোধে টিকা গ্রহণ করাও আবশ্যক। সুস্থতার চর্চা আদতে খুব কঠিন কিছু নয়। লিভার বা যকৃতের ব্যাপারটাও ঠিক তাই। জীবনযাপনের কিছু ভুলে লিভারের রোগের ঝুঁকি বাড়ে। জেনে নিন এসব ভুল সম্পর্কে।
হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস ই ভাইরাস খাবার ও পানীয়ের মাধ্যমে আমাদের দেহে প্রবেশ করতে পারে সহজেই। তাই পথের ধারের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া থেকে সবারই বিরত থাকতে হবে। হাতও পরিষ্কার করতে হবে নিয়মমাফিক। এসব বিষয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য বাড়তি সতর্কতা জরুরি। নইলে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
হেপাটাইটিস বি, সি এবং ডি ভাইরাস ছড়ায় রক্ত এবং দেহরসের মাধ্যমে। ব্যবহৃত সিরিঞ্জ পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না কখনোই। রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন হলে অবশ্যই নিরাপদ রক্তের ব্যবস্থা করতে হবে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্লেড। সেলুনে গেলে খেয়াল রাখুন, একজনের ব্যবহৃত ব্লেড যেন আপনার জন্য পুনরায় ব্যবহার করা না হয়। অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমেও এসব ভাইরাস ছড়ায়। এসব ভাইরাস থেকে বাঁচতে কনডম ব্যবহার করা প্রয়োজন। এ ছাড়া সতর্কতা হিসেবে বিয়ের আগে হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি ভাইরাস পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
টিকার মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রতিরোধের সুযোগ আছে। এই টিকা না নেওয়া এক বিরাট ভুল। আরও মনে রাখা প্রয়োজন, টিকা গ্রহণ সম্পন্ন হলেই যে সবার শরীরে সুরক্ষা অ্যান্টিবডি পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়। তাই টিকা নেওয়া শেষে সময়মতো অ্যান্টিবডির মাত্রাও পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাতে অনেকের ক্ষেত্রে বাড়তি ডোজের প্রয়োজন হতে পারে।
অপ্রয়োজনীয় ওষুধ আপনার লিভারের জন্য বিশাল হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। অযথা ভিটামিন–জাতীয় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ভুলটি অনেকেই করেন। ঘুমের ওষুধ, ব্যথার ওষুধ বা অতিরিক্ত প্যারাসিটামল সেবনও লিভারের ক্ষতি করতে পারে। নানা ধরনের কবিরাজি ওষুধ বা হারবাল লিভারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘদিন কোনো ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকুন।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আরেকটি বড় ভুল। যেসব খাবার খেলে রক্তে ক্ষতিকর চর্বি বাড়ে, সেসব কমিয়ে দিন। ভাজাপোড়া, তেলচর্বিজাতীয় খাবার কম খাবেন। অন্যদিকে আঁশজাতীয় খাবার রক্তের খারাপ চর্বি কমিয়ে দেয়। তাই শাকসবজি এবং ফলমূল খাবেন প্রচুর পরিমাণে। খোসায়ও থাকে প্রচুর আঁশ। সম্ভব হলে খোসাও খান। ভাতের মতো সাধারণ খাবারও খুব বেশি খাওয়া ঠিক নয়। ভাত রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়ায়; কারণ, এতে আছে শর্করা। তাই প্রয়োজনের বেশি শর্করাজাতীয় খাবার খাওয়া থেকেও বিরত থাকুন। ভাত, রুটি, আলু এবং চিনি মেশানো পানীয় ও খাবার—সবই আছে এই তালিকায়। অ্যালকোহল–জাতীয় যেকোনো পানীয় অবশ্যই বর্জন করুন। খাদ্যপণ্য ভালোভাবে না ধুয়ে খাওয়ার ভুলটিও করা যাবে না। খাদ্যপণ্যের মাধ্যমে লিভারের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন রাসায়নিক প্রবেশ করতে পারে দেহে।
শারীরিক পরিশ্রম বাদ দিয়ে কেবল অফিসে বা ঘরে বসে কাজ করা লিভারের জন্য ক্ষতিকর অভ্যাস। কারণ, শরীরচর্চার মাধ্যমে রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন আপনি। এই অভ্যাস গড়ে তুলুন কম বয়স থেকেই। কায়িক শ্রম হয়, এমন খেলাধুলা কিংবা দৌড়ঝাঁপ, হাঁটাহাঁটি, ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম—করতে পারেন সবই।
সূত্র: জনস হপকিনস মেডিসিন