খেলতে গিয়ে শিশু যখন দুর্ঘটনায় পড়ে

খেলার সময় শিশুকে চোখে চোখে রাখা প্রয়োজন
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

শৈশব হলো খেলাধুলার সময়। শিশুরা খেলতে খেলতে শেখে। আর খেলতে গিয়ে ছোটখাটো কাটাছেঁড়া, ব্যথা পাওয়া খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনো বড় দুর্ঘটনা না ঘটে। প্রায়ই সংবাদপত্রে প্রকাশ হয় খেলতে খেলতে পুকুরে পড়ে গিয়ে বা খেলতে গিয়ে গলায় খেলনা বা খেলনার ব্যাটারি আটকে শিশুর মৃত্যু।

এ জন্য একদিকে যেমন খেলার সময় শিশুকে চোখে চোখে রাখা প্রয়োজন, তেমনই শিশুর খেলা এবং খেলনা নির্বাচনেও সতর্ক হতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে খেলার স্থান নিয়েও। খেয়াল রাখতে হবে শিশুর খেলনা টি যেন তার বয়সের উপযোগী হয়।

সতর্কতা

শিশুরা যে জায়গায় খেলবে সে স্থানটি সমান জায়গা হওয়া উচিত

খেলতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি যে দুর্ঘটনা ঘটে, তা হলো পড়ে গিয়ে ব্যথা পাওয়া। এতে হাড় ভেঙে যেতে পারে, শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে ছিলে যেতে পারে। এ জন্য শিশুর খেলনার স্থানটি সমান জায়গা হওয়া উচিত। শিশু পায়ে বেঁধে পড়ে যেতে পারে, কেটে যেতে পারে, এ রকম কিছু না থাকাই বাঞ্ছনীয়। প্রয়োজনে মাদুর পেতে দেওয়া যেতে পারে।

শিশুরা খেলার সময় বাড়ির কাছাকাছি পুকুর, নদী বা গর্তের মধ্যে পড়ে পানিতে ডুবে যেতে পারে। তাই খেলার স্থানের আশপাশে এ রকম জায়গা থাকলে অবশ্যই তার চারপাশ ঘিরে দিতে হবে এবং বড়দের সঙ্গে থাকতে হবে। শিশু যেন চোখের আড়াল না হয়, তা লক্ষ রাখতে হবে। আশপাশে পোকামাকড় থাকার আশঙ্কা থাকলে নিয়মিত প্রতিষেধক দিয়ে পোকামাকড় মারার ব্যবস্থা করতে হবে। আরও একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, যেন শিশুর খেলার জায়গাটি পর্যাপ্ত আলোকিত থাকে।

মাঠে খেলা করার সময় খেলার উপকরণ বা আশপাশে পড়ে থাকা ছেঁড়া বিদ্যুতের তারে স্পর্শ করে শিশুরা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে পারে। ঘরের মধ্যে খেলাধুলা করার সময় খেয়াল রাখতে হবে কাছে যেন ধারালো কিছু না থাকে। সরু কোনো কিছু থাকলে শিশু চোখে আঘাত পেতে পারে। মেঝে পিচ্ছিল হলে শিশু পিছলে পড়ে যেতে পারে। এ জন্য শিশুর খেলার জায়গার আশপাশে এ রকম কিছু থাকলে সেটা সরিয়ে ফেলতে হবে।

খেলনা নির্বাচনের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখা দরকার যে খেলনা যেন এমন আকৃতির না হয় যে শিশু মুখে দিয়ে গিলতে পারে। এতে খেলনা গলায় আটকে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। শিশুরা এমনিতেই সব জিনিস মুখে দিতে চায়। অনেক সময় খেলনার ব্যাটারি বা অন্য অংশ ও নাকে-মুখে দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ জন্য ব্যাটারি যেন ভালোমতো খেলনায় আটকে থাকে, সেটা খেয়াল করতে হবে। নিয়মিত খেয়াল রাখতে হবে খেলনার অংশগুলো যেন আলগা না থাকে, সুচালো অংশ যেন বের হয়ে না থাকে। খেলনার ধারগুলো যেন নরম এবং গোলাকার থাকে।

করণীয়

শিশুর খেলনা টি যেন তার বয়সের উপযোগী হয়

যদি শিশু সত্যিই কিছু গিলতে গিয়ে গলায় আটকে ফেলে সে ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছে দ্রুত হাসপাতালে নিতে নিতে ‘হেইমলিক কৌশল’ প্রয়োগ করা যায়। এতে শিশুটিকে বাঁ হাতে রাখতে হবে, পিঠের দিকটা যাতে ওপর দিকে থাকে আর মুখ মেঝের দিকে।

এরপর ডান হাতের চেটো দিয়ে পিঠের দিকে কাঁধের ওপর তিন-চারটি চাপড় মারতে হবে যাতে মুখ দিয়ে আটকানো খাবার বা বস্তুটি বেরিয়ে আসে। তখনো যদি না বের হয় তাহলে তাকে চিত করে শোয়াতে হবে এবং দুই আঙুল দিয়ে অল্প চাপে বুকের মধ্যস্থলে মালিশের মতো চাপ মুখের দিকে সঞ্চালন করতে হবে ।

তারপর আবার আগের মতো বাঁ হাতে রেখে তিন-চারটি চাপড় মারতে হবে। এতে শিশুর মুখ দিয়ে বস্তুটি বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যায়।

কোথাও কেটে গেলে দ্রুত জায়গাটি পরিষ্কার করে অ্যান্টিসেপটিক লাগিয়ে পরিষ্কার কাপড় জড়িয়ে হাসপাতালে নিতে হবে। প্রয়োজনে টিটেনাসের আক্রমণ যেন না হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।

কোথাও ছোটখাটো ব্যথা লাগলে বরফ লাগানো যেতে পারে। তবে আঘাতের মাত্রা বেশি হলে, বাচ্চা বেশি কান্নাকাটি করতে থাকলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।