শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সেরা ৮ খাবার

জন্ম থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত সময়টা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে শিশুর মস্তিষ্কের প্রায় ৯০ শতাংশ বিকাশ হয়। প্রথম ৫ বছরে প্রতি সেকেন্ডে কোটি কোটি সংযোগ তৈরি হয়। আর এই বিকাশই পরবর্তী সময়ে শেখা ও বুদ্ধিমত্তার জন্য ভিত্তি স্থাপন করে। বাকি ১০ শতাংশ বিকাশ পরবর্তী প্রায় ২০–২৫ বছর পর্যন্ত ধীরগতিতে চলতে থাকে। ২৫ বছরের পর মস্তিষ্কের বিকাশ হয় না বললেই চলে। নিচে দেওয়া হলো এমন কিছু খাবারের তালিকা, যা নিয়মিত খেলে শিশুদের স্মৃতি, মনোযোগ, শেখার ক্ষমতা ও মস্তিষ্কের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে পারে।

১. ডিম

ডিম প্রোটিন ও পুষ্টির চমৎকার উৎস
ডিম প্রোটিন ও পুষ্টির চমৎকার উৎস

প্রোটিন ও পুষ্টির চমৎকার উৎস। মস্তিষ্কের গঠনে সাহায্য করে দারুণভাবে। মস্তিষ্কের কোষগুলোর মধ্যে সংযোগ ও স্মৃতি গঠনের জন্য জরুরি। ডিমের প্রোটিন দীর্ঘ সময়ের শক্তি দেয়। ক্লাস বা পড়াশোনায় মনোযোগ রাখতে সাহায্য করে।

২. মাছ

ইলিশ মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ

ইলিশের তো অভাব নেই দেশে। প্রশ্ন হলো, স্যামন কি দেশি মাছ। এ ক্ষেত্রে দেশি স্যামন ‘তাইল্যা’ও হতে পারে ভালো বিকল্প। টুনা সামুদ্রিক মাছ। কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ দেশের প্রায় সব সুপারশপে পাওয়া যায়। এসব মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। মস্তিষ্কের বৃদ্ধি, কোষের গঠন ও শেখার ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। তবে অনেক শিশুই মাছ খেতে চায় না। সে ক্ষেত্রে বাদাম, ফ্ল্যাক্স সিড তিসির বীজ ও চিয়া সিডের মতো উদ্ভিজ্জ খাবারও ওমেগা-৩–র ভালো উৎস।

৩. দুধ ও দই

দুধ প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনের ভালো উৎস

প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনের ভালো উৎস। এসব মস্তিষ্কের বিকাশে অপরিহার্য। দুধ-দই প্রোটিন, ভিটামিন বি১২, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি দিয়ে স্নায়ু, হাড় ও দাঁতের বিকাশে সহায়ক।

৪. সবুজ শাকসবজি

সবুজ শাকসবজি মস্তিষ্কের টিস্যুকে রক্ষা করে

বিশেষ করে পালংশাক ও ব্রকলি আয়রন, ফলিক অ্যাসিড ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। মস্তিষ্কের টিস্যুকে রক্ষা করে।

৫. বাদাম, বীজ ও বিভিন্ন ধরনের ডাল

বাদাম, বীজ ও বিভিন্ন রকমের ডাল স্মৃতিশক্তি বাড়ায়

বিশেষ করে আখরোট ও তিসি, চিয়া বীজ স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন, জিঙ্ক ও ভিটামিন ই-র ভালো উৎস। স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। মস্তিষ্কের কোষ রক্ষা করে, শক্তি বজায় রাখে, মনোযোগ ও শেখার ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। আর বিভিন্ন ধরনের ডাল প্রোটিন, আয়রন ও ফলিক অ্যাসিডের ভালো উৎস।

৬. ফলমূল

ফলের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন মস্তিষ্ককে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে

বিশেষ করে কলা, ও বেরি–জাতীয় ফল দিন শিশুকে। এসবে প্রাকৃতিক চিনি, পটাশিয়াম ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট পাবে সে। এসব ফলের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন মস্তিষ্ককে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। স্মৃতি ও কোষ-সংযোগ উন্নত করতে সহায়ক।

অ্যাভোকাডো বিদেশি ফল হলেও সুপারশপগুলোয় পাবেন। এতে আছে শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য ভালো মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ও কোষের স্বাভাবিক কার্যকলাপে সহায়তা করে।

৭. গোটা শস্য

লাল চাল, লাল আটার রুটি ও ওটসের মতো হোল গ্রেইন বা গোটা শস্য থেকে আসা খাবার ধীরগতিতে গ্লুকোজ ভাঙতে থাকে

লাল চাল, লাল আটার রুটি ও ওটসের মতো হোল গ্রেইন বা গোটা শস্য থেকে আসা খাবার ধীরগতিতে গ্লুকোজ ভাঙতে থাকে। ফলে শিশুর মস্তিষ্ক সারা দিন ধরে এনার্জি ও মনোযোগ পায়। এ ছাড়া এসবে ভিটামিন বি পাওয়া যায়, যা স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের জন্য জরুরি।  

৮. খিচুড়ি

সুষম খাবার বলতে যা বোঝায়, খিচুরি ঠিক তা–ই

আমাদের অতি প্রিয় খাবার। সুষম খাবার বলতে যা বোঝায়, খিচুরি ঠিক তা–ই। শিশুরা নতুন খাওয়া শেখার সময় মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, শাকসবজি আলাদাভাবে সহজে খেতে চায় না। এতে তাদের পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে খিচুড়ি হতে পারে সহজ ও সেরা সমাধান।

কিন্তু খিচুড়ি কি প্রথম শ্রেণির প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম

উত্তর হলো, হ্যাঁ। কীভাবে? কেননা খিচুড়ি তো মূলত উদ্ভিজ্জ খাবার। প্রথম শ্রেণির প্রোটিন হলো সেই প্রোটিন, যাতে প্রয়োজনীয় ৯টি অ্যামিনো অ্যাসিডের সবই থাকে।

প্রাণিজ প্রোটিন বা আমিষ মূলত মাছ, মাংস, ডিম, দুধ। ডালকে দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিন বলা হয়; কারণ, ডালের মধ্যে লাইসিন নামক একটি অতিপ্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে না।

জন্ম থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত সময়টা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

অন্যদিকে চালের মধ্যে ওই লাইসিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড বেশি থাকে। আমরা যখন চাল আর ডাল একসঙ্গে রাঁধি, তখন চালের অধিক অ্যামিনো অ্যাসিড ভারসাম্য আনে।

হাতের কাছে আলু, গাজর, মটরশুঁটি, ফুলকপি, ব্রকলি, শিম, টমেটো, বাঁধাকপি, পালংশাক—সবই একটু একটু করে দিয়ে দিতে পারেন খিচুড়িতে। তাতে সেই খাবার শিশুর জন্য হয়ে উঠবে সুপারফুড।

সূত্র: হার্ভার্ড হেলথ