কোনো উপসর্গ না থাকলেও কিডনির সমস্যায় ভোগেন বহু মানুষ। পরে কিডনির কার্যক্ষমতা অনেক কমে যায়, দেখা দেয় নানা জটিলতা। চিকিৎসাও হয়ে ওঠে কঠিন। ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। অথচ প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ধরা পড়লে এমন বহু জটিলতা এড়ানো সম্ভব। আপাতদৃষ্টে সুস্থ একজন ব্যক্তিরও তাই কিডনির পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হয়। এ সম্পর্কে রাফিয়া আলমকে জানালেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।
কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে যেকোনো বয়সেই। এমনকি শিশুরাও ঝুঁকিমুক্ত নয়। তবে তার মানে এমনটাও নয় যে সব বয়সী মানুষকেই কিডনির পরীক্ষা করাতে হবে নিয়মিত। বরং যাঁদের কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে কিংবা কোনো উপসর্গ আছে, কেবল তাঁদেরই পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন।
ডায়াবেটিস
উচ্চ রক্তচাপ
অতিরিক্ত ওজন
বারবার প্রস্রাবে সংক্রমণ
দীর্ঘদিন ধরে প্রস্রাব আটকে যাওয়ার সমস্যা (যেমন প্রোস্টেট বড় হয়ে গেলে এমন সমস্যা হয়)
হৃদ্রোগ
লিভার বৈকল্য
কখনো কিডনিতে পাথর হয়ে থাকলে
কখনো কিডনির নালি ব্লক (হাইড্রোনেফরোসিস) হয়ে থাকলে
পরিবারে এমন ধরনের কিডনি রোগের ইতিহাস থাকলে, যার জন্য জিনগত কারণ দায়ী
যাঁদের বয়স ৪০ বছরের বেশি কিংবা যাঁদের কোনো কারণে কিডনি রোগের ঝুঁকি বেশি, তাঁদের প্রতিবছর একবার করে কিডনি পরীক্ষা করাতে হয়। এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের তালিকায় খানিকটা ব্যতিক্রম কেবল টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের রোগী।
তাঁদের ক্ষেত্রে রোগটা ধরা পড়ার পাঁচ বছর পর থেকে এই বার্ষিক পরীক্ষা শুরু করতে হয়। টাইপ টু ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য সব ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলে তখনই শুরু করতে হয় এ পরীক্ষা।
কিডনির কার্যক্ষমতা বোঝার জন্য অনেক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাই করানো যায়। তবে যাঁদের কিডনি রোগের কোনো উপসর্গ নেই, তাঁদের জন্য সবচেয়ে কার্যকর দুটি পরীক্ষা হলো সিরাম ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিন অ্যালবুমিন-ক্রিয়েটিনিন রেশিও (এসিআর)। অর্থাৎ রক্ত আর প্রস্রাবের নমুনা থেকে দুটি পরীক্ষা করাতে হবে আপনাকে।
কেবল সিরাম ক্রিয়েটিনিন স্বাভাবিক মাত্রায় থাকাটাই কিন্তু কিডনি ভালো থাকার প্রমাণ নয়। বরং সিরাম ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা থেকে নির্ণয় করতে হবে এস্টিমেটেড গ্লোমেরুলার ফিলট্রেশন রেট (ইজিএফআর)। সহজভাবে বললে, কিডনি কত শতাংশ কাজ করছে, তা বোঝা যায় ইজিএফআর থেকে।
অনলাইন ইজিএফআর ক্যালকুলেটর থেকে এটি নির্ণয় করা যায়। আবার কিছু ল্যাবরেটরির সিরাম ক্রিয়েটিনিন রিপোর্টের সঙ্গেই ইজিএফআর দিয়ে দেওয়া হয়। ইজিএফআর কম থাকলে চিকিৎসক সেই অনুযায়ী পরামর্শ দেবেন।
সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও দেশের সব জায়গায় ইউরিন অ্যালবুমিন-ক্রিয়েটিনিন রেশিও (এসিআর) করানোর সুযোগ নেই। এ পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যায়, প্রস্রাবে প্রোটিন যাচ্ছে কি না।
তবে এই পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকলে বিকল্প হিসেবে ইউরিন রুটিন টেস্ট বা রুটিন এক্সামিনেশন (ইউরিন আরই) কিংবা প্রোটিনের মাত্রা বোঝার জন্য ইউরিন স্ট্রিপ টেস্ট করানো যায়।
জানামতে কিডনি রোগের কোনো ঝুঁকি না থাকলেও কারও কারও এসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে—
প্রায়ই পায়ে পানি আসা (বিশ্রাম নিলেও যা কমে না)
ঘুম থেকে ওঠার পর মুখমণ্ডল ফুলে থাকা
প্রতিবার প্রস্রাবের সময়ই অতিরিক্ত ফেনা যাওয়া
এ ধরনের উপসর্গ থাকলে অন্তত একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেবেন।