ভালো থাকুন

গর্ভধারণ হওয়া চাই পরিকল্পিত

যতবারই গর্ভধারণ করুন না কেন, গর্ভধারণ যেন কখনো অবাঞ্ছিত বা অপরিকল্পিত না হয়। এই মূলমন্ত্র সামনে রেখে প্রতিবছর ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ব গর্ভনিরোধ দিবস বা কন্ট্রাসেপশন ডে পালিত হয়।

আদিকাল থেকেই কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গর্ভরোধ পদ্ধতির নানা বিবর্তন হয়েছে। সরল, সহজ, জটিলতামুক্ত পদ্ধতির জন্য গবেষণা চলছে এখনো। কন্ট্রাসেপশনের জন্য বহুবিধ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।

পরিকল্পিত গর্ভধারণ নারীর প্রজননস্বাস্থ্যের জন্য দরকারি। একটি মেয়ের মা হওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া, পরপর সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে সময় নেওয়া এবং মায়ের শারীরিক–মানসিক ফিটনেস অর্জনের পর সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় নারীর নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকে না। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বাবা–মা উভয়ে মিলেই নেবেন। তাঁদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ও নিরাপদ পদ্ধতি কোনটি, সেটা বাছাই করার অধিকারও থাকা উচিত। এ জন্য দরকার নতুন দম্পতিদের সঠিক শিক্ষা এমনকি আরও আগে থেকেই এই শিক্ষা নেওয়া উচিত।

সাধারণ বোধগম্য ভাষা ব্যবহার করে স্বামী, স্ত্রী, পরিবার, স্কুল–কলেজসহ সর্বস্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে জন্মরোধ, জন্মদান সম্পর্কে আলাপচারিতা ও মতবিনিময় করে বোঝাতে হবে এই বিষয়গুলো।

স্বাস্থ্যকর্মী, পরিবার পরিকল্পনাকর্মী, মিডিয়াকর্মীরাও এতে ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাঁদের উচিত সহজ ও সাধারণ ভাষায়, দরকার হলে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করে বোধগম্য করে তোলা।

কেউ নিজের জন্য পরামর্শ নিতে চাইলে উচিত হলো জন্মনিয়ন্ত্রণের সব কটি পদ্ধতি বুঝে নিয়ে নিজের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ও সহজ পদ্ধতি বেছে নেওয়া।

প্রজননসুস্বাস্থ্য শুধু যে নারীর জন্য দরকার তা নয়, এর প্রভাব পড়ে পরিবারের এবং সমাজের ওপর। এই সচেতনতার মূল চেষ্টা হবে নানা ধরনের যৌনরোগ, এইচআইভি সংক্রমণ, অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ, অনিরাপদ গর্ভপাত, ভ্রূণহত্যা বা শিশুহত্যা ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো।

নিরাপদ গর্ভধারণ ছাড়াও জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির আরও কিছু উপকারিতা আছে, যেমন অনিয়মিত মাসিককে নিয়মিত করে, তলপেটের সংক্রমণ বা পেলভিক ইনফ্লামাটোরি ডিজিজ নিয়ন্ত্রণে রাখে, মাসিক–পূর্ববর্তী ব্যথা কমায়। এতে ব্যবহৃত হরমোনগুলো হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়, অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করে, অপুষ্টি ও ক্রনিক রোগবালাইকে দূরে রাখে, হরমোন প্রজেস্টেরন ওভারি ও জরায়ুর ভেতরের ক্যানসার রোধ করতে সহায়ক। পিসিওএস, এন্ডোমেট্রিওসিস, চকলেট সিস্ট, এডিনোমায়োমা, ফাইব্রয়েড চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। আবার এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে, যেমন ওজন বৃদ্ধি, রক্তে চর্বি বাড়া, ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি ইত্যাদি।

বাংলাদেশে এখনো এ নিয়ে সচেতনতার অভাব আছে, কুসংস্কার ও ট্যাবু আছে, এমনকি জাতীয় পর্যায়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর বিরাট ঘাটতি আছে। এই সমস্যাগুলো দূর করতে সচেষ্ট হতে হবে এখনই।

  • শাহলা খাতুন, জাতীয় অধ্যাপক স্ত্রীরোগ প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ