
পরিপাকতন্ত্রের প্রধান অঙ্গ হলো লিভার বা যকৃৎ। আমরা ওষুধ থেকে শুরু করে যা কিছু খাই বা পান করি, সবকিছু পরিপাক হওয়ার পর রক্তে মেশার আগে লিভারে যায়। লিভারে একবার ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হলে আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না।
লিভারের প্রধান কাজ শরীরে দ্রুত শক্তির জন্য গ্লুকোজ সঞ্চয় করে রাখা। এটি বাইল নামে একধরনের তরল তৈরি করে, যা খাবার থেকে চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে। শরীরের দরকারি অনেক প্রোটিন ও রক্ত উপাদানও তৈরি করে লিভার।
লিভারের বড় শত্রু অতিরিক্ত মদ্য পান। মদ্য পানে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত, ফ্যাটি লিভার এমনকি লিভার ক্যানসারের মতো গুরুতর রোগও হতে পারে।
এ ছাড়া অকারণে অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়ার কারণে লিভার কর্মক্ষমতা হারায়। ঠান্ডা ও জ্বরের জন্য বহুল ব্যবহৃত ওষুধের অনেকগুলোই লিভারের জন্য ক্ষতিকর। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
লিভারের ক্ষতির আর একটি কারণ হচ্ছে ধূমপান। সিগারেটের উপাদানগুলো সরাসরি লিভার টিস্যু নষ্ট করে। এ ছাড়া লিভারের স্বাভাবিক কাজে বাধা সৃষ্টি করে।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি হয়। এ ছাড়া যাঁরা রাতে ঘুমের সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগের পাশাপাশি লিভারসংক্রান্ত সমস্যায়ও ভোগেন।
পুষ্টিকর খাবারের অভাব বা খাবারে অনিয়ম লিভারের ক্ষতি করে থাকে। সকালে না খাওয়া, খারাপ তেল বা অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খাওয়া, পোড়া তেলের খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড খাওয়ার কারণে লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
কেমিক্যাল–সমৃদ্ধ যেকোনো খাবারই লিভারের জন্য ক্ষতিকর। আমরা অনেকেই প্রিজারভেটিভ, আর্টিফিশিয়াল ফুড কালার, আর্টিফিশিয়াল চিনিযুক্ত খাবার পছন্দ করি, যা লিভারের জন্য ক্ষতিকর।
এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, প্যারাসাইট, রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার অস্বাভাবিকতা, বংশগত কারণ কিংবা ক্যানসারের কারণেও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। স্থূলতা ও রক্তে বাড়তি চর্বি লিভারের ক্ষতির আরেক কারণ।
যদি ওজন বেশি হয়, তাহলে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। লিভার ফ্যাট কমিয়ে সুস্থ থাকতে ওজন কমাতে হবে।
সুষম খাদ্যাভ্যাস লিভারকে সুস্থ রাখে।
উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট যেমন—সাদা পাউরুটি, পাস্তা ও চিনি এড়িয়ে চলতে হবে।
কাঁচা ও আধা সেদ্ধ মাছ-মাংস খাওয়া যাবে না।
প্রতিদিনের খাবারে তাজা ফল, শাকসবজি, লাল চাল ও সিরিয়াল রাখতে পারেন।
এ ছাড়া, রসুন, জাম্বুরা, গাজর, গ্রিন টি, অ্যাভোকাডো, আপেল, অলিভ অয়েল, লেবু, বাঁধাকপি, হলুদ লিভারের জন্য বেশ উপকারী।
লিভার সুস্থ রাখার জন্য হাইড্রেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম লিভার ভালো রাখে।
অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হক, পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ, বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতাল