বাবার লাঙল আর ট্রাক্টরই তাঁর অস্ত্র, যা দিয়ে তিনি লড়েছেন আমাদের ভবিষ্যতের জন্য

আজ বাবা দিবস। এ উপলক্ষে বাবাকে নিয়ে লিখেছেন প্রথম আলোর পাঠকেরা। পড়ুন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তাহসান আহমেদ–এর লেখা।

কৃষক বাবার সঙ্গে গর্বিত সন্তান
ছবি: সংগৃহীত

ঈদের মাত্র দুই দিন বাকি। জামা কিনতে বাবার সঙ্গে মার্কেটে গিয়েছি। দোকানের এক কোণে ঝুলে থাকা একটা জামায় চোখ আটকে গেল, একদম আমার মনের মতো। বাবাকে বলি, ‘এইটা চাই।’ বাবা জামার ট্যাগ দেখে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। তারপর বলেন, ‘আরেকটা দেখো, এটা একটু দামি।’ সেদিন মন খারাপ হলেও কিছু বলিনি। বুঝেছিলাম, আমাদের আর্থিক বাস্তবতা কী। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি পছন্দের সেই জামাটাই বিছানায় রাখা। চোখে পানি এসে গিয়েছিল। ছোট্ট মনে তখনই গভীরভাবে বুঝে গিয়েছিলাম, বাবা মানে কেবল একজন মানুষ নয়, বাবা মানে ত্যাগ, নিঃশব্দ ভালোবাসা, আর সন্তানের হাসির জন্য নিজের সমস্ত স্বপ্ন বিসর্জন দেওয়া এক নিরলস যোদ্ধা।

আমার বাবা একজন কৃষক। দিনের পর দিন সূর্যের তাপে পুড়িয়ে, গা মাটিতে মিশিয়ে তিনি শুধু ফসল ফলাননি, নিশ্চিত করেছেন তিনটি সন্তানের ভবিষ্যৎ। ঘামের বিনিময়ে গড়া সেই জীবনে কখনো ক্লান্তির ছাপ দেখিনি। স্কুল-কলেজে পড়তাম যখন, আমাদের সাফল্য নিয়ে বাবা গর্ব করতেন। অথচ নিজে এক শার্ট পরে কাটিয়ে দিয়েছেন বছরের পর বছর।

আমার দুই ভাই এখন সম্মানজনক জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। আমি এখনো শিক্ষার্থী। মাস শেষে যখন টাকার দরকার হয় আর ভাইয়েরা ব্যস্ত থাকে, তখন বাবাকে বলি, ‘আব্বু, কিছু টাকা লাগবে।’ তিনি সব শুনে শুধু বলেন, ‘লাগলে তো দিতে হবে।’ কখনো বলেন না, ‘পারব না।’ এই একটি বাক্যই যেন আমার জীবনের নিরাপত্তার দেয়াল।

বাবার লাঙল আর ট্রাক্টরই তাঁর অস্ত্র। এই অস্ত্র নিয়ে তিনি লড়েছেন আমাদের ভবিষ্যতের জন্য। জীবনে যতটুকু এগোতে পেরেছি, তার সবটুকু কৃতিত্ব আমার বাবার।

বাবা সব সময় বলেছেন, ‘শত্রুর সঙ্গেও ভদ্রভাবে কথা বলবে। মনে যা আছে, তা মনে রাখো, চেহারায় নয়।’ এমন গভীর শিক্ষা দিয়ে গেছেন জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে।