বায়োফিলিক আসবাব আজকাল শোভা পাচ্ছে পরিবেশসচেতন মানুষের অন্দরে।
বায়োফিলিক আসবাব আজকাল শোভা পাচ্ছে পরিবেশসচেতন মানুষের অন্দরে।

বায়োফিলিক আসবাবের ধারা কেন জনপ্রিয় হচ্ছে

‎একসময় প্রকৃতির সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় কাটত মানুষের। এরপর ধীরে ধীরে এল বোকাবাক্স, মুঠোফোনসহ নানা প্রযুক্তি। আর মানবজীবন হয়ে উঠতে থাকল প্রযুক্তিনির্ভর। মানুষ প্রকৃতির অংশ হওয়া সত্ত্বেও আজকাল শহুরে জীবনে প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া কঠিন।

আর তাই নানাভাবে নাগরিক জীবনে প্রকৃতিকে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। এই চাওয়ার জায়গা থেকেই অন্দরসজ্জায় বায়োফিলিক ডিজাইনের দিকে ঝুঁকছেন অনেকে। এ বছর বিশ্বজুড়ে আসবাবে বায়োফিলিক ডিজাইন রয়েছে ট্রেন্ডে। এ ধারার প্রধান উদ্দেশ্য প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করা।

বায়োফিলিক ধারা

বায়োফিলিক ডিজাইনের অন্দরসজ্জায় মানুষ ঘরে থেকেও প্রকৃতির সঙ্গে এক দৃঢ় বন্ধন অনুভব করতে পারে। এ ধারার নকশায় ঘরে আলো, কাঠ, পাথর, বাঁশ, বেত, মাটিসহ যথাসম্ভব প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতির মতোই সবুজ রঙের প্রাধান্য দেখা যায় এ ধারার অন্দরসজ্জায়। ঘরে থাকতে পারে উলম্বভাবে নানা ধরনের

সবুজ গাছের স্তর দিয়ে সাজানো সবুজ দেয়াল। থাকে ছোট জলাধার বা পানির প্রবাহ। এ ছাড়া থাকে আলো-বাতাস আসা-যাওয়ার জন্য যথাযথ খোলা স্থান। অন্দরের প্রতিটি জায়গায় যেন প্রকৃতির ছোঁয়া থাকে, তা নিশ্চিত করাই এই ধারার মুখ্য বিষয়। বায়োফিলিক ডিজাইনের আসবাব এ ধারার অন্দরসজ্জায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

‎এই ডিজাইনের আসবাব আজকাল শোভা পাচ্ছে পরিবেশসচেতন মানুষের অন্দরে। নিজেদের প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে আসার ইচ্ছা থেকেই এ ধরনের আসবাব ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন অনেকে।

প্রকৃতির অনুপ্রেরণায় নকশা

আসবাবের ব্র্যান্ড হাতিলের পরিচালক শফিকুর রহমান বলেন, বায়োফিলিক ডিজাইন এমন একটি ধারণা, যেখানে মানুষের বাসস্থান বা কর্মস্থলে প্রকৃতির উপস্থিতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ঘরের ভেতরেও যেন প্রকৃতির প্রশান্তি অনুভব করা যায়, সেই লক্ষ্যে তৈরি করা হয় আসবাব।

প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে দূষণমুক্ত প্রক্রিয়ায় তৈরি করার কারণে বায়োফিলিক আসবাব ঘরের বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখে, যা মনোযোগ ও মানসিক স্বস্তি দেয়।

প্রকুতি ও আসবাবের সহাবস্থান

‎বায়োফিলিক ডিজাইনের আসবাব যে শুধু প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি, তা-ই নয়; এসব আসবাব তৈরির অনুপ্রেরণাও প্রকৃতি থেকে নেওয়া। গোলাকৃতি বা বক্রাকৃতির আসবাব, আসবাবে ঢেউখেলানো নকশা কিংবা গাছের পাতার মোটিফ ইত্যাদি দেখা যায় এ ধারায়, যা আমাদের প্রকৃতির সান্নিধ্যের অনুভূতি দেয়।

মানুষ এখন ঘরের ভেতরেই খুঁজছে প্রকৃতির ছোঁয়া। এই প্রবণতা থেকেই ডিজাইনাররা এখন এমন আসবাব বানাচ্ছেন, যা দেখতে শুধু আধুনিকই নয়, বরং পুরোপুরি প্রাকৃতিক উপাদাননির্ভর ও পরিবেশবান্ধব।

শফিকুর রহমান জানান, আসবাব তৈরিতে আন্তর্জাতিক সংস্থা ফরেস্ট স্টুয়ার্ডশিপ কাউন্সিলের (এফএসসি) সনদপ্রাপ্ত কাঠ, পুনর্ব্যবহার করা পার্টিকেল বোর্ড ও ইউভি ল্যাকার ফিনিশিং ব্যবহার করা হয়।

এতে যেমন পরিবেশের ক্ষতি কম হয়, তেমনি আসবাবের স্থায়িত্ব বাড়ে। তাই আসবাবের বাজারে বায়োফিলিক ডিজাইন যেমন দেখতে সুন্দর, ঠিক তেমনি সময়োপযোগী।

বায়োফিলিক আসবাব

কাঠের স্বাভাবিক রং ও গঠন অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা থাকে বায়োফিলিক ধারায়

‎বায়োফিলিক ডিজাইনের আসবাবে সাধারণত ওক বা বিচ কাঠ ব্যবহার করা হয়। এতে কাঠের স্বাভাবিক রং ও গঠন অক্ষুণ্ন থাকে। এ ছাড়া জার্মান প্রযুক্তির সাহায্যে কাঠের অপচয় কমিয়ে বাড়তি অংশ ব্যবহার করে বানানো হয় পুনর্ব্যবহারযোগ্য পার্টিকেল বোর্ড। এতে অন্য কাঁচামাল ব্যবহারের প্রয়োজন কমে যায়। ফলে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস পায়। এ ছাড়া পরিবেশে বর্জ্য জমার পরিমাণও কমে আসে।

‎এ ধরনের আসবাবের গড়নে থাকে নরম বাঁক ও ফাঁকা জায়গা, যাতে আলো-বাতাস সহজে চলাচল করতে পারে। এমনকি কাপড় ও ফোমের অপচয় কমাতে তৈরি হয় রিবন্ডেড ফোম, যা ব্যবহৃত হয় সোফার ভেতরের অংশে। এসব উপাদান আসবাবকে করে টেকসই।

‎তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আজকাল পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা বাড়ছে। তাঁরা এমন আসবাব বেছে নিতে চাইছে, যা একই সঙ্গে টেকসই, স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর।

(লেখাটি প্রথম আলোর বিশেষ ম্যাগাজিন ‘বর্ণিল বসত’ জুন ২০২৫ সংখ্যায় প্রকাশিত)