বাড়ির কোথায় কেমন টাইলস লাগাবেন

একটা সময় মোজাইক দিয়ে ঘরের সৌন্দর্য বাড়ানো হতো। সেই জায়গা ক্রমেই দখল করেছে টাইলস। নানা রকম টাইলসের ব্যবহারে একটি বাড়ির স্বাভাবিক চেহারাই বদলে দেওয়া যায়। বিস্তারিত জানাচ্ছেন জাহিদুল হক

সিঁড়িতেও এখন টাইলস ব্যবহার করেন অনেকে
ছবি: কবির হোসেন

ঘর সাজানোর কথা ভাবলে প্রথমেই মাথায় আসে দেয়ালের রং, নতুন সোফা, পর্দা বা আলোর ডিজাইন। কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রায়ই আমরা ভুলে যাই, আর তা হচ্ছে টাইলস। আমাদের ঘরের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড অথচ সবচেয়ে কার্যকর উপাদান হলো টাইলস। কারণ, বাড়ির মেঝে বা দেয়ালকে খুব সাধারণভাবে দেখলে চলবে না। বুঝতে হবে, ঘরের চেহারা বদলে দিতে মেঝে বা দেয়ালের টাইলসই হতে পারে ইন্টেরিয়রের মূল ভিত্তি। অনেক ইন্টেরিয়র ডিজাইনার বলেন, ঘরের মুড নির্ধারণ করে টাইলস। যেমন ঘরের থিম যদি হয় মডার্ন আর্ট ডেকো, আরবান বোহেমিয়ান, ন্যাচারাল বা ঠান্ডা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান—সব ধরনের মুডেই মিলিয়ে নেওয়া যায় টাইলস। শুধু মেঝে নয়, এখন টাইলস ঘরের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। দেয়ালে, সিলিংয়ে এমনকি আসবাবের অংশ হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে টাইলস, যা আপনার স্বপ্নের বাড়িকে  করে তোলে সত্যিকার অর্থেই অনন্য।

টাইলস শুধু মেঝে ঢেকে রাখে না, ঘরের সৌন্দর্যও প্রকাশ করে। এ বিষয়ে কথা হয় এক্সিস গ্লোবাল আর্কিটেক্টস, ঢাকা চ্যাপ্টারের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর মোহসিন রেজার সঙ্গে। তিনি বলেন, টাইলস কী এবং কেন, সে কথা মহানগর থেকে গ্রামগঞ্জে কারোরই এখন অজানা নয়। কিন্তু সবার সুপরিচিত এই ফিনিশড ম্যাটেরিয়াল তথা নির্মাণসামগ্রীর উপযুক্ত ব্যবহারই বরং অজানা থেকে গেছে। তাই টাইলসের নান্দনিকতা নিয়ে খুব মৌলিক কিছু ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করি। নান্দনিকতা, রুচি ইত্যাদির নির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ড হয় না বলে অনেকেই মনে করেন। তবে দিন শেষে আপনার বাড়ির দেয়াল বা  মেঝের টাইলস ঠিকই আপনার রুচির সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দেয়। যত দাম দিয়েই কেনা হোক, কোথায় কোন টাইলস মানায়, এ বোধ থাকা জরুরি।

আমাদের আশপাশে খেয়াল করলে দেখা যাবে, অতি উজ্জ্বল, অতি দৃষ্টিগ্রাহ্য, নজরকাড়া, অতি নকশাদার, উচ্চকিত রঙের টেক্সচার বা প্রিন্টের টাইলসের প্রতি কেন যেন একধরনের মানুষের ভীষণ পক্ষপাত। অথচ সেসব বাড়ির নির্দিষ্ট পরিসরে মানানসই নয়। ‘যত্রতত্র এমন টাইলস ব্যবহার করে আমরা মূলত ভিজ্যুয়াল পলিউশনই বাড়াচ্ছি’—মনে করেন এই অন্দরসজ্জাবিদ।

কেন এমন প্রবণতা? সম্ভবত শো অফ করা বা দেখিয়ে দেওয়ার স্পৃহা থেকে। তা থাকতেই পারে কারও। কিন্তু সমস্যাটা হয় তখন, যখন আপনার ঘরের দেয়ালটা আসলে আপনার ফ্যামিলি ফটোর ব্যাকগ্রাউন্ড, ফোরগ্রাউন্ড হচ্ছেন আপনি। ব্যাকগ্রাউন্ড যখন ফোরগ্রাউন্ডের চেয়ে লাউড হয়ে যায়, তখন তা দৃষ্টিকটু লাগে। তাই স্থাপনার টাইলসটা এমনভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন, যার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললে সামনের মানুষটাই মুখ্য হয়। পেছনের টাইলসটা নীরব থাকে। মানুষের জন্যই কিন্তু স্থাপনা, স্থাপনার জন্য মানুষ নয়।

টাইলস একবার ব্যবহার করলেই সেটা বছরের পর বছর চলতে পারে

টাইলস: ট্রেন্ড নয়, টাইমলেস ইনভেস্টমেন্ট

টাইলস একবার ব্যবহার করলেই সেটা বছরের পর বছর চলতে পারে। কারণ, টাইলসের ডিজাইন এতটাই বহুমুখী যে সময়ের ফ্যাশন বদলালেও এটা নিজের জায়গা ধরে রাখে। টাইলস মানেই এখন আর শুধু রেকট্যাঙ্গল বা চারকোনা ডিজাইন নয়। নানান আকার, রং ও টেক্সচারে তৈরি এই ডিজাইন উপকরণ আপনার ঘরে এনে দিতে পারে সত্যিকারের পরিবর্তন।

আপনার ঘরকে আলাদা করতে চাইলে নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি—

  • ম্যাটেরিয়াল: সিরামিক, পোরসেলিন, টেরাকোটা, স্টোন। প্রতিটির আছে নিজস্ব লুক ও ফিল।

  • কালার প্যালেট: সাদা-কালো ছাড়াও মিউটেড ব্লু, সেন্ডি টোন, অলিভ গ্রিন বা ডিপ টেরাকোটা এখন আছে চলতি ধারায়।

  • প্যাটার্ন ও শেপ: হেরিংবোন, হেক্সাগন, ফিশস্কেল, মরোক্কান প্রিন্ট। এসবে ঘর হয়ে উঠবে চোখজুড়ানো।

  • অ্যাপ্লিকেশন স্পেস: রান্নাঘর, বাথরুম তো আছেই, এখন টাইলস ব্যবহার করা হচ্ছে বেডরুমের অ্যাকসেন্ট ওয়াল, ডাইনিংয়ের কার্ভ, এমনকি সিঁড়িতেও।

এ ছাড়া নজর দেওয়া যেতে পারে কিছু ট্রেন্ডি ও ইনোভেটিভ দেয়াল বা মেঝের টাইলস
ডিজাইনের দিকে।

নানান আকার, রং ও টেক্সচারে তৈরি টাইলস আপনার ঘরের চেহারা বদলে দেবে

হেরিংবোন প্যাটার্ন

যাকে বলা হচ্ছে ক্ল্যাসিক অথচ রুচিশীল ডিজাইন। ক্ল্যাসিক সিনেমার বাড়িগুলোর দিকে যাঁদের নজর আটকে যায়, তাঁদের জন্য হেরিংবোন প্যাটার্নের ফ্লোর টাইলস সবচেয়ে মানানসই। আয়তাকার টাইলগুলো ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বসিয়ে তৈরি হয় এই ডিজাইন। এটি এন্ট্রি ও হলওয়ের মতো জায়গাগুলোকে দেয় রেট্রো লুক।

শেভরন প্যাটার্ন

হেরিংবোনের মতো দেখতে হলেও শেভরন প্যাটার্নে অ্যাঙ্গেল হয় ৪৫ ডিগ্রি। যা মেঝে বা দেয়াল—উভয় জায়গায় ব্যবহার করা যায়। এটি ট্রেন্ডি ও মডার্ন লুক তৈরি করে। লিভিংরুম বা বড় জায়গাগুলোতে এই ডিজাইন বেশি আকর্ষণীয়।

মরোক্কান প্যাটার্ন টাইলস

বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় টাইলস এটি। যাঁরা বাড়িতে একই সঙ্গে ফোক, ভিন্টেজ ও মর্ডান লুক চান, তাঁদের জন্য মরোক্কান টাইলস প্যাটার্ন। ফোক ডায়মন্ড স্টাইলের এই রঙিন টাইলস লিভিংরুম ও কিচেনের জন্য সবচেয়ে ভালো।

সাবওয়ে টাইলস

যাঁরা মিনিমাল ডিজাইন পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য। নামটা এসেছে সাবওয়ে স্টেশনের দেয়াল থেকে, কিন্তু এই টাইলস এখন মডার্ন কিচেন ও বাথরুমের জন্য জনপ্রিয়। এগুলোকে স্ট্যাগারড বা ভিন্ন ভিন্ন শেপে বসিয়ে ক্রিয়েটিভ টাচ আনা যায় সহজেই।

বাস্কেট উইভ প্যাটার্ন

বলা হয়, যাঁরা মেঝেতে সৌন্দর্য বুনতে চান, তাঁদের জন্যই এ টাইলস। ছোট আয়তাকার টাইলস দিয়ে বোনা বাস্কেটের মতো ডিজাইন। বাথরুম বা ছোট কোনো জায়গায় এই ডিজাইনের টাইলসের ব্যবহারে স্পেসটি হয়ে উঠবে
টেক্সচারড ও ড্রামাটিক।

টেরাজো টাইলস

মার্বেল, কোয়ার্টজ বা গ্লাস চিপস মিশিয়ে তৈরি এই পুরোনো স্টাইলের টাইলস আজকাল ঘর সাজাতে আবার ট্রেন্ডে। এগুলো টেকসই, রঙিন ও ক্ল্যাসিক। ঘরে ভিন্টেজ টাচ দিতে চাইলে টেরাজো হতে পারে সেরা পছন্দ।

আউটডোর টাইলস

বাইরের সৌন্দর্যও গুরুত্বপূর্ণ। ব্যালকনি বা প্যাটিওর জন্য সলিড ও স্টাইলিশ টাইলস বেছে নেওয়া উচিত। স্লেট বা পোরসেলিন টাইপের টাইলসে বাইরের স্পেস হয়ে উঠবে ব্যক্তিগত এক রিট্রিট।