অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা নিতে চান? কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন

লিখেছেন অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক আরিফা জাহান

অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক আরিফা জাহান
ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবছর হাজারো শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নিতে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। আপনি যদি অস্ট্রেলিয়ায় পড়ালেখার স্বপ্ন দেখে থাকেন, তাহলে প্রস্তুতি নেওয়ার এখনই সময়।

অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস স্কলারশিপ নিয়ে আমি এখানকার মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে স্নাতকোত্তর করেছি। এখন পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছি। এই যাত্রাপথে যা শিখেছি, সেটাই আপনাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে চাই।

নিজেকে বোঝা ও লক্ষ্য নির্ধারণ

উচ্চশিক্ষার প্রথম ধাপ হলো আপনি কোন বিষয়ে পড়তে চান, তা নির্ধারণ করা। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে নানা রকম কোর্স অফার করে। আগ্রহ, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ও পেশাগত চাহিদা অনুযায়ী কোর্স বাছাই করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রথমেই কোন বিষয়ে আপনার আগ্রহ বা দক্ষতা আছে, ভবিষ্যতে কী করতে চান, এই প্রশ্নগুলোর মীমাংসা করে ফেলুন।

যদি মাস্টার্স করতে আগ্রহী হন, তবে জেনে রাখুন, অস্ট্রেলিয়ায় আপনি কোর্সওয়ার্কভিত্তিক ও গবেষণাধর্মী—দুই ধরনের প্রোগ্রামেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন। এখানে গবেষণাধর্মী মাস্টার্স প্রোগ্রাম সাধারণত এমফিল বা ‘মাস্টার্স বাই রিসার্চ’ নামে পরিচিত। তা ছাড়া কোর্সওয়ার্কভিত্তিক মাস্টার্সেও গবেষণা বা থিসিস করতে হতে পারে। তবে সেটা কোর্সের ধরনের ওপর নির্ভর করে। আপনি কি শিক্ষা ও গবেষণায় ক্যারিয়ার গড়তে চান, নাকি চাকরিমুখী দক্ষতা অর্জন করতে চান? এসব প্রশ্নের উত্তরই আপনাকে পথ দেখাবে। আপনি বুঝতে পারবেন, কোন ধরনের মাস্টার্স বা পিএইচডি আপনি বেছে নেবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রাম বাছাই

একবার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলে উপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রাম খোঁজা শুরু করুন। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে প্রোগ্রামের ধরন, ভর্তির প্রয়োজনীয় যোগ্যতা, শিক্ষকের প্রোফাইল ও গবেষণার ক্ষেত্র বিস্তারিতভাবে দেওয়া থাকে। বিশেষ করে যাঁরা পিএইচডির জন্য আগ্রহী, তাঁদের ক্ষেত্রে সুপারভাইজার খুঁজে নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই ‘ফ্যাকাল্টি প্রোফাইল’ পেয়ে যাবেন, যেখান থেকে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন।

ইংরেজি ভাষার দক্ষতা

আইইএলটিএস, টোয়েফল বা পিটিই—যেকোনো একটি পরীক্ষার মাধ্যমে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা আপনাকে প্রমাণ করতে হবে। কোন পরীক্ষাটি আপনার জন্য প্রযোজ্য হবে, সেটিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন। সাধারণত আইইএলটিএসে সব মিলিয়ে ৭ (লিসেনিং, রাইটিং, রিডিং, স্পিকিং—প্রতিটিতে আলাদা করে ৭) বা সমমানের স্কোর প্রয়োজন হয়। তবে মাস্টার্স বা পিএইচডিভেদে এই স্কোর কম বা বেশি হতে পারে।

বৃত্তির খোঁজ

অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার খরচ বেশি হলেও অনেক বৃত্তির সুযোগ আছে। যেমন—

  • অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস স্কলারশিপ: সরকারি বৃত্তি, মাস্টার্সের জন্য প্রযোজ্য

  • রিসার্চ ট্রেইনিং প্রোগ্রাম (আরটিপি): পিএইচডি ও গবেষণাধর্মী প্রোগ্রামের জন্য

  • বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বৃত্তি: প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই আলাদা বৃত্তি থাকে

এ ছাড়া নানা ধরনের বৃত্তি আছে, যার খবর আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন। বৃত্তির জন্য ভালো একাডেমিক ফল, একটি শক্তিশালী এসওপি (স্টেটমেন্ট অব পারপাস), সুপারভাইজারের সম্মতি (গবেষণামূলক প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে) ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবামূলক ও নেতৃত্বমূলক কাজের অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত

আবেদনের জন্য আপনাকে যেসব কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হবে—

  • সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও নম্বরপত্র

  • আইইএলটিএস বা টোয়েফল বা পিটিইর স্কোর

  • গুছিয়ে লেখা এসওপি

  • এমফিল বা পিএইচডির ক্ষেত্রে গবেষণা প্রস্তাব

  • অন্তত দুটি সুপারিশপত্র

  • স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ বা চাকরির অভিজ্ঞতার সনদ

  • গবেষণাভিত্তিক প্রকাশনা (বিশেষ করে এমফিল বা পিএইচডির জন্য)

আবেদনের প্রক্রিয়া

বিশ্ববিদ্যালয় বা বৃত্তির ওয়েবসাইটে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী অনলাইনে আবেদন করতে হয়। কোর্সওয়ার্কভিত্তিক প্রোগ্রামের আবেদন সাধারণত সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে করতে হয়। আর এমফিল বা পিএইচডির ক্ষেত্রে সুপারভাইজারের অফার লেটার আগে নেওয়া লাগে। বৃত্তিভেদে এই প্রক্রিয়া আলাদাও হতে পারে। যেমন অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস স্কলারশিপের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে যদি কেউ কোর্সওয়ার্কভিত্তিক মাস্টার্স করতে চান, তাহলে তাঁকে আগে বৃত্তির জন্য আবেদন করতে হবে।

অফার লেটার ও ভিসার ধাপ

অফার লেটার পেলে সিওই (কনফারমেশন অব এনরোলমেন্ট) জমা দিয়ে ভিসার (সাবক্লাস ৫০০) জন্য আবেদন করতে হয়; সঙ্গে অর্থনৈতিক নথি, মেডিকেল পরীক্ষার সনদ ও স্বাস্থ্যবিমার প্রমাণ লাগবে। কিছু কিছু বৃত্তি স্বাস্থ্যবিমাও দেয়। যেমন আমি এমফিল ও পিএইচডি দুই ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যবিমাসহ বৃত্তি পেয়েছি।

শেষ কথা

আমরা অনেকেই ভাবি, ভালো সিজিপিএ হলেই বিদেশে পড়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। অবশ্যই ভালো ফল দরকার, কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বলে—অস্ট্রেলিয়ায় স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ, নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা ও সামাজিক সম্পৃক্ততাকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশেষ করে প্রতিযোগিতামূলক বৃত্তিগুলোর ক্ষেত্রে এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরিকল্পিত প্রস্তুতি, সময়মতো পদক্ষেপ ও আত্মবিশ্বাস—চেষ্টা থাকলে এ তিনটি আপনাকে পৌঁছে দিতে পারে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।