এ ধরনের খাবারের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের স্নায়ুতে, বাড়ে মানসিক চাপ
এ ধরনের খাবারের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের স্নায়ুতে, বাড়ে মানসিক চাপ

যেসব খাবারে মানসিক চাপ বাড়ে

তুমুল প্রতিযোগিতার এই যুগে মানসিক চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন অনেকেই। কাজের চাপ থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে কেউ প্রকৃতির কোলে সময় কাটান, কেউ বাড়িতেই করেন ধ্যান বা যোগব্যায়াম।

এমন চেষ্টা নিঃসন্দেহেই ইতিবাচক। তবে মনের চাপ কমাতে এসবের বাইরেও আরেকটি বিষয়ে সচেতনতা প্রয়োজন। তা হলো খাদ্যাভ্যাস।

যেসব হরমোন বা নিউরোট্রান্সমিটারের প্রভাবে আমাদের মন ভালো থাকে, সেসবের মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো সেরোটোনিন। এই সেরোটোনিনের সিংহভাগই আসে আমাদের পরিপাকতন্ত্র থেকে।

মস্তিষ্কের সঙ্গেও পরিপাকতন্ত্রের একটা যোগাযোগ আছে, যাকে বলা হয় গাট-ব্রেন অ্যাক্সিস। অর্থাৎ খাবারদাবারের সঙ্গে মনের দিকটা বেশ জোরালোভাবেই সম্পর্কিত। এমনটাই জানালেন শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের সিনিয়র ক্লিনিক্যাল ফেলো ডা. টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ

আধুনিক জীবনে এমন অনেক খাবারই আমরা খাই, যার কারণে মানসিক চাপ বাড়ে। কী খেলে মনের চাপ বাড়ে, কিসেই-বা কমে, এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক এই বিশেষজ্ঞর কাছ থেকে।

এসব খাবার খেলে বাড়ে প্রদাহের ঝুঁকি

ফাস্ট ফুড
বার্গার, স্যান্ডউইচ, প্যাটিস, হটডগ বা এ-জাতীয় খাবার নির্ঝঞ্ঝাটে ঝটপট খেয়ে নেওয়া যায় ঠিকই। তবে এ ধরনের খাবারের কারণে আমাদের অন্ত্রে থাকা উপকারী জীবাণুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তা ছাড়া এসব খাবারে প্রদাহের ঝুঁকিও বাড়ে। এ ধরনের খাবারের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের স্নায়ুতে। বাড়ে মানসিক চাপ।

কোমল পানীয়
কোমল পানীয় এবং নানা ধরনের বেভারেজ আমরা খাই। প্রচণ্ড গরমে তৃষ্ণা মেটাতে এক বোতল ঠান্ডা কোমল পানীয়কে দারুণ প্রশান্তিদায়ক মনে হলেও আদতে এমন পানীয় আপনার মনের জন্য ভালো নয়। এ ধরনের পানীয়ে প্রদাহ বাড়ে। আর তাতেই বাড়তে পারে মানসিক চাপ।

মিষ্টি খাবার
কেক, পেস্ট্রি, আইসক্রিম, ডোনাট, ফালুদা কিংবা যেকোনো মিষ্টি খাবারই খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়। অথচ মন খারাপ থাকলে অনেকেই মিষ্টিজাতীয় খাবার খেয়ে ফেলেন। সাময়িকভাবে মনে হতে পারে, পছন্দের খাবারটি খেয়ে মন ভালো হলো। কিন্তু অতিমাত্রায় এসব খাবার খেলে বাড়ে প্রদাহের ঝুঁকি। আর বাড়ে মানসিক চাপ। তাই মিষ্টি পছন্দ করলেও খেতে হবে বুঝেশুনে।

রান্নায় ব্যবহার করুন ভালো তেল

বাসি তেলের রান্না
অনেক বাড়িতে ও রেস্তোরাঁয় খরচ বাঁচাতে রান্নার জন্য বাসি তেল ব্যবহার করা হয় দিনের পর দিন। অথচ বাসি তেলে এমন পদার্থ থাকে, যা আমাদের জন্য বিষাক্ত। এই বিষাক্ত উপকরণের প্রভাবেও বাড়ে মানসিক চাপ।

পরিশোধিত খাবার ও প্রক্রিয়াজাত মাংস
রিফাইনড বা পরিশোধিত খাদ্য উপকরণ এখন বহুল ব্যবহৃত। প্রযুক্তির সহায়তায় পরিশোধিত মসৃণ চাল, আটা, ময়দা প্রভৃতি আমরা খাচ্ছি রোজ। প্রক্রিয়াজাত মাংসও এখন জনপ্রিয়। এসব খাবারেও বাড়ে প্রদাহের ঝুঁকি। নিয়মিত এসব খাবার খাওয়ার কারণে বাড়তে পারে মানসিক চাপ।

রাসায়নিকমিশ্রিত খাবার
ফল পাকানোর জন্য মেশানো রাসায়নিক কিংবা শাকসবজিতে মিশে থাকা কীটনাশকও বিষাক্ত। খাবারে থাকা রাসায়নিক পদার্থ যেমন অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ, তেমনি এসবের প্রভাবে মনের চাপও বাড়ে।

মন ভালো রাখতে ঘুম আর শরীরচর্চাও চাই ঠিকঠাক

অ্যালকোহল
অ্যালকোহল–জাতীয় পানীয় গ্রহণেও প্রদাহের ঝুঁকির বাড়ে। মানসিক চাপের এক অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এ ধরনের পানীয়।

মনের যত্নে যা করবেন
টক দই খেতে পারেন। আঁশসমৃদ্ধ খাবার খান। গোটা শস্যের তৈরি খাবার খেতে পারেন। লাল চাল, লাল আটা, ছোলা, ওটমিল, ডার্ক চকলেট মনের জন্য ভালো। তাজা শাকসবজি ও মৌসুমি ফলমূল খান। সবজি খুব বেশি রান্না (ওভার কুক) করবেন না; বরং হালকা ধাঁচের রান্না করুন। সাঁতলানো বা সঁতে করা সবজি খেতে পারেন। সালাদ খেতে পারেন, তাতে যোগ করতে পারেন খানিকটা জলপাই তেল। খেতে পারেন বাদাম, তিসি। গ্রিন টি খেতে পারেন। কিমচি খেতে পারেন। তবে যে খাবারই খান, পরিমিতিবোধ বজায় রাখবেন। খেয়াল রাখবেন, লম্বা সময় খালি পেটে থাকলেও কিন্তু আপনার মেজাজ বিগড়ে যেতে পারে। মন ভালো রাখতে ঘুম আর শরীরচর্চাও চাই ঠিকঠাক।