ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামগুলো আলাদা কেন

শিক্ষার্থীরা এখানে ক্লাসরুমের বাইরে গিয়ে সরাসরি নগর ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান
ছবি: ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সৌজন্যে

ব্যবসায় শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, সুশাসন, পরিবেশবিজ্ঞান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন অধ্যয়ন, শিক্ষা, কম্পিউটারবিজ্ঞান, ইলেকট্রনিকস, ভাষা ও সাহিত্যসহ নানা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ আছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে। তবে একাডেমিক কোর্সের পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যোগাযোগ, সময়োপযোগী গবেষণা, কেস স্টাডিভিত্তিক প্রস্তুতি, এসবই ব্র্যাকের প্রোগ্রামগুলোকে আলাদা করেছে।

ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছিল এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই এখানকার স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামগুলোতেও গুরুত্ব পেয়েছে সমাজ ও দেশের উন্নয়নমূলক নানা যুগোপযোগী বিষয়। শিক্ষার্থীরা এখানে স্বাস্থ্য, পরিবেশ, প্রযুক্তি, নীতিনির্ধারণ থেকে শুরু করে জেন্ডার ইস্যু—নানা বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পান। বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যতিক্রম কিছু মাস্টার্স প্রোগ্রাম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

জনস্বাস্থ্য

ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। এর অধীন ‘মাস্টার অব পাবলিক হেলথ’ প্রোগ্রামটি শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ১৮ মাসের এই আন্তর্জাতিক মানের কোর্সে বর্তমানে ৩৫টি দেশের শিক্ষার্থীরা পড়ছেন। শিক্ষার্থীরা এখানে ক্লাসরুমের বাইরে গিয়ে সরাসরি নগর ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান। এই স্কুলের অ্যালামনাইরা বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফসহ দেশি-বিদেশি নানা প্রতিষ্ঠানে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা

পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম ইন ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামটি চালু হয় ২০০৫ সালে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পাঁচটি বিশেষায়িত শাখায় মাস্টার্স, ডিপ্লোমা ছাড়াও সার্টিফিকেট কোর্স করার সুযোগ আছে এখানে। পেশাজীবীদের জন্য প্রোগ্রামটি বেশ কার্যকর।

অর্থনীতি

যাঁরা দেশে-বিদেশে অর্থনীতিসংক্রান্ত কাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চান, তাঁদের জন্যই সাজানো হয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মাস্টার্স ইন অ্যাপ্লায়েড ইকোনমিকস প্রোগ্রামটি। অভিজ্ঞ শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিচালিত প্রোগ্রামটি চাকরি ও উচ্চশিক্ষার বিস্তৃত সুযোগ সৃষ্টি করে।

জৈবপ্রযুক্তি

ডিপার্টমেন্ট অব ম্যাথমেটিকস অ্যান্ড ন্যাচারাল সায়েন্সের অধীন ‘মাস্টার অব সায়েন্স ইন বায়োটেকনোলজি’ প্রোগ্রামটি দেশের মধ্যে ব্যতিক্রমী। স্বাস্থ্য, কৃষি ও পরিবেশ খাতে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রোগ্রামটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

উন্নয়ন অধ্যয়ন

যাঁরা দেশ-বিদেশের উন্নয়ন খাতে পেশা গড়তে চান, তাঁদের দক্ষতা উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে ‘মাস্টার অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’ প্রোগ্রামটি। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের অধীন পরিচালিত হয় ৪৫ ক্রেডিটের এই কোর্স। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিও ব্র্যাকের মাঠপর্যায়ের কাজগুলোর সঙ্গে যুক্ত থেকে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পান।

৩৬ ক্রেডিটের ‘মাস্টার অব আর্টস ইন গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ (এমএজিডি) কোর্সটিও দেশের নীতিনির্ধারক, প্রশাসক ও বিভিন্ন খাতের পেশাজীবীদের দক্ষতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম ও সিভিল সোসাইটিতে কর্মরত ব্যক্তিদের প্রয়োজন মাথায় রেখে প্রোগ্রামটি সাজানো হয়েছে।

প্রকিউরমেন্ট ও সাপ্লাই ম্যানেজমেন্ট

৪৮ ক্রেডিটের ‘মাস্টার্স ইন প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড সাপ্লাই ম্যানেজমেন্ট’ কোর্সটি ২০১২ সাল থেকে এই খাতের দক্ষ পেশাজীবী তৈরির লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রোগ্রামটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেন এর অ্যালামনাইরা সরকারি ও বেসরকারি খাতের চাহিদা পূরণ করতে পারেন।

হাতে–কলমে মাঠপর্যায়ে কাজের সুযোগই ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মাস্টার্স প্রোগ্রামগুলোকে আলাদা করেছে

শিশুর বিকাশ

আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ে মাস্টার্স ও পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমার সুযোগ আছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে। শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কীভাবে ভূমিকা রাখতে হয়, সে সম্পর্কেই বিস্তৃত শিক্ষা দেওয়া হয় এই প্রোগ্রামে। ক্লাসের পাশাপাশি মাঠপর্যায়েও বাস্তবভিত্তিক গবেষণার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। এই খাতের বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে গবেষক, নানা অভিজ্ঞজন আছেন শিক্ষকদের দলে। তাই এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে শুধু যে জ্ঞান অর্জন হয় তা নয়, গড়ে ওঠে একটি কার্যকর নেটওয়ার্ক।

শিক্ষা নিয়ে পড়ালেখা

শিক্ষা বিষয়ে মাস্টার্স ও পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করার সুযোগ আছে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের (আইইডি) অধীন। দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক খাতের নেতৃত্ব শক্তিশালীর করার লক্ষ্যে প্রোগ্রামটি সাজানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাঁদের কোর্সের অংশ হিসেবেই বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনের সুযোগ পান, সংশ্লিষ্ট কর্মীদের সাক্ষাৎকার নিতে পারেন। এই অভিজ্ঞতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ব্র্যাকের প্লে ল্যাব পরিদর্শন, যা একটি কমিউনিটিভিত্তিক প্রারম্ভিক শিক্ষাকেন্দ্র, যেখানে ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের খেলায় খেলায় শেখানো হয়।

প্রকৌশল, ব্যবসা ও ইংরেজি

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল বা ব্যবসায় প্রশাসনসংক্রান্ত স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামগুলোও একটু আলাদা। কেননা, ইন্ডাস্ট্রির চাহিদার কথা মাথায় রেখেই কোর্স ও পাঠ্যক্রম সাজানো হয়েছে। প্রকৌশলের প্রোগ্রামগুলোয় শিক্ষার্থীরা যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার সিকিউরিটি, মেশিন লার্নিং ও বিগ ডেটার মতো বিষয় নিয়ে কাজ করার সুযোগ পান, তেমনি এমবিএ ও ইএমবিএতেও জোর দেওয়া হয় কেস স্টাডি, গ্রুপ প্রজেক্ট, বাস্তবভিত্তিক বিশ্লেষণ ও নেতৃত্বের প্রশিক্ষণের ওপর।

মাস্টার্স ইন ইংলিশ ও মাস্টার্স ইন টেসল প্রোগ্রাম দুটিতেও আছে উন্নত গবেষণা ও বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ।