
আমার বড় মেয়ে নোভা এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট জানতে আমাদের কাউকে সঙ্গে নেয়নি। বাসায় ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলি আর বলি, ‘আমার মেয়েটা এত বড় হয়ে গেছে! ম্যাট্রিক (আমাদের সময় এটাই বলা হতো) পাস করেছে!’
শীলার সময়েও একই কথা বললাম। বিপাশা, আমার ছোট মেয়ের রেজাল্টের দিন আমি বাসায় ছিলাম না। রেজাল্ট বের হবে শুনেই বাসায় ফিরে এলাম। কলবেলের শব্দ শুনে আমিই দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললাম। এবং সেবারও বিপাশাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম। আর বললাম, ‘আমার মেয়েটা এত বড় হয়ে গেছে, ম্যাট্রিক পাস করেছে!’
কিছুক্ষণ পর শীলা কলেজ থেকে ফিরে আমাকে তার ঘরে নিয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘তুমি কি ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছ? আর কী বলেছ ওকে?’
আমি তো আর এসব মুখস্থ করে রাখিনি। যা মনে হয়েছে, তা–ই বলেছি। শীলা বলল, ‘বাঁচলাম!’
আমি বলি, ‘কেন?’
তখন সে বলল, ‘আমাদের দুজনকেই তো তুমি কাঁদতে কাঁদতে একই কথা বলেছ। ওর ধারণা, ওকে তুমি ভালোবাসো না। আর ওর রেজাল্টের পর যদি একই কথা না বলো তাহলে বিপাশার ধারণাই সত্যি হবে।’
সে সময় আমরা ব্যক্তিগত কিছু সমস্যার মধ্যে ছিলাম। এমনিতেই বাসার পরিবেশ ভালো নেই। তার ওপর আবার বিপাশার এই ধারণা! ভাগ্যিস, তিনজনের এসএসসির রেজাল্টের পর একই কথা বলেছিলাম!
শুধু মুখের কথার এদিক–সেদিক হতেই যদি এমন হয়, তাহলে পরীক্ষার ফল খারাপ হলে কী করত, কে জানে!
আগামীকাল (১০ জুলাই) দেশে এসএসসির রেজাল্ট বের হবে। সবাই তো আর একইভাবে পরীক্ষা দেয়নি অথবা একই রেজাল্ট হবে না। এটা ওদের জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। আমি হাতজোড় করে বলছি, আপনারা নিজেদের সন্তানদের একটু আদর–ভালোবাসা দিয়ে জড়িয়ে ধরুন! তাদের একটু সময় দিন, পছন্দের কোনো খাবার রান্না করুন অথবা যেখানে নিয়ে গেলে তাদের ভালো লাগবে, সেখানে নিয়ে যান।
প্লিজ, বাইরের কারও সামনে তাদের কিছু বলবেন না, যা তাদের মনে আঘাত করবে। এই বয়সে তারা খুব অভিমানী হয়। তারা যেন ভুল করে বা ভুল বুঝে দূরে কোথাও চলে না যায়। একটি পরীক্ষা যেন তাদের জীবনে খারাপ প্রভাব না ফেলে।
সব মা-বাবা, ভাই-বোন এবং অভিভাবককে বলছি, ওদের একটু সময় দিন। জড়িয়ে ধরে বলুন, ‘বাবা, আমরা পরেরবার আবার চেষ্টা করব!’
লেখক: কবি, লেখক ও নাট্যকার