পাঁজিয়ার রসে টইটম্বুর রসগোল্লা

বানানো হচ্ছে পাঁজিয়ার রসগোল্লা। ছবি: প্রথম আলো
বানানো হচ্ছে পাঁজিয়ার রসগোল্লা।  ছবি: প্রথম আলো

একসময় পাঁজিয়াকে বলা হতো যশোরের সাংস্কৃতিক রাজধানী। ইতিহাস–ঐতিহ্যের ধারক ছিল পাঁজিয়া। ঐতিহ্যে মণ্ডিত এলাকার খাবারও ছিল প্রসিদ্ধ। পাঁজিয়ার রসগোল্লার ছিল নামডাক। আজও পাঁজিয়ার রসগোল্লা তার স্বাদ বজায় রেখেছে।

যশোরের কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন সাহিত্যিক ধীরাজ ভট্টাচার্য। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস মাথিনের কূপ, যখন পুলিশ ছিলাম, যখন নায়ক ছিলাম। তিনি একসময় ভারতীয় থিয়েটার ও সিনেমার অভিনেতা ছিলেন। পাঁজিয়াতে থিয়েটারও হতো। এই পাঁজিয়াতেই সর্বভারতের কৃষকসভার সম্মেলন হয়েছিল। ব্রিটিশ আমলে এখানে উচ্চশিক্ষিত মানুষের বসবাস ছিল। ঘরে ঘরে সংস্কৃতিচর্চা হতো।

পাঁজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দীপক কুমার মজুমদারের বয়স এখন ৭৫। ঐতিহ্যবাহী রসগোল্লা সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় উপেন চন্দ্র দে (টুনে ময়রা) নামে একজন সুস্বাদু রসগোল্লা তৈরি করতেন। তাঁর মিষ্টির বিশেষত্ব হলো রসগোল্লার ভেতরটা রসে টইটম্বুর হয়ে যাবে। পাঁজিয়া বাজারের কালীমন্দিরের দক্ষিণ পাশে উপেন বাবুর দোকান ছিল। সেখানে রসগোল্লা খেতে দূর থেকে মানুষ আসত। তিনিই পাঁজিয়ার আদি ময়রা ছিলেন।’

সুস্বাদু রসগোল্লা। প্রথম আলো

এখনো পাঁজিয়ার রসগোল্লা পাঁজিয়া বাজারের অঞ্জন মিষ্টান্ন ভান্ডার ও লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডারে পাওয়া যায়। এত সুস্বাদু মিষ্টি হওয়ার গোপন রহস্য কী, জানতে চাইলে মিষ্টি তৈরির কারিগর অসীম কুমার দাস বলেন, ‘খাঁটি গরুর দুধ দিয়ে ছানা তৈরি করা হয়। গুঁড়া দুধ ব্যবহার করা হয় না। সে কারণেই রসগোল্লা সুস্বাদু হয়।’

অসীম কুমার দাসই এই দোকানের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ৪৫ বছর ধরে রসগোল্লা নিজেই তৈরি করেন। তাঁর ছেলে পঞ্চানন দাস বলেন, মান ভালো, তাই লাভ কিছুটা কম হয়। তবে বেচাকেনা বেশি বলে তাঁদের পুষিয়ে যায়। প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ শ টি রসগোল্লা বিক্রি হয়।

অঞ্জন অধিকারী বলেন, ‘আমার দাদু ননী গোপাল অধিকারী এই রসগোল্লা তৈরি করতেন। বাবা প্রয়াত নিমাই অধিকারীও এই রসগোল্লা তৈরি করেছেন। আমিই এখন হাল ধরেছি ব্যবসার।’

 তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল, রসগোল্লা সুস্বাদু হওয়ার কারণ কী? সামান্য হেসে বললেন, ‘এই রহস্য বলা যাবে না।’

অঞ্জন জানান, তাঁর রসগোল্লা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। 

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সৈনিক ৮৭ বছর বয়সী নারায়ণ বসু স্মৃতি হাতড়ে বলেন, ‘১৯৪৬ সালে সর্বভারতীয় কৃষক সমিতির সম্মেলনে আমি ছিলাম স্বেচ্ছাসেবক। ওই সভায় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড পিসি যোশীসহ অনেক নেতা এসেছিলেন। তাঁদের পাঁজিয়ার রসগোল্লা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।’