ক্যালেন্ডারে এখন বৃষ্টির মাস। একটুখানি বৃষ্টি পড়লেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ধোঁয়া ওঠা খিচুড়ির ছবিতে সয়লাব হয়ে যায়। আর এই খিচুড়ির তালিকায় এবার এগিয়ে আছে নরম ল্যাটকা খিচুড়ি। রেস্তোরাঁ, গলির মোড়ের দোকান কিংবা ফুডকার্ট, সবখানেই এই ল্যাটকা খিচুড়ি।
কেউ খাচ্ছেন ডিম অথবা মাংসের সঙ্গে, কেউ আলু কিংবা বেগুন ভাজা দিয়ে, আবার কেউ কেউ ল্যাটকা খিচুড়িতে মেশাচ্ছেন টক-ঝাল আচার। রেস্তোরাঁয় বসেও অনেকে চাখছেন গরম-গরম ল্যাটকা খিচুড়ি। ঢাকা শহরে বাড়ির বাইরে যাঁরা খেতে চান, তাঁদের জন্য এখানে রইল ল্যাটকা খিচুড়ির সাতটি গন্তব্য।
বহুদিন ধরেই জনপ্রিয় গুলশানের ‘প্রিমিয়াম সুইটস’–এর ল্যাটকা খিচুড়ি। মাটির পাত্রে পরিবেশন করা হয় এই খিচুড়ি। দেখতে যেমন অভিজাত, খেতেও তেমন সুস্বাদু। প্রথমে আলাদাভাবে রান্না করা হয় খিচুড়ি আর কালাভুনা। এরপর মাটির পাত্রে খিচুড়ির ওপর মাংস দিয়ে নানরুটির সাহায্যে বন্ধ করে দেওয়া হয় পাত্রের মুখ।
ওভেনে গরম করে পরিবেশন করা হয়। নানরুটি ছিঁড়তেই নাকে আসে ঘিয়ের তীব্র ঘ্রাণ। প্রিমিয়াম সুইটসের ল্যাটকা খিচুড়িতে মেশানো থাকে আচার। খিচুড়ির সঙ্গে আরও থাকে তেল-মসলা মাখানো পেঁয়াজ।
এই খিচুড়ির দাম ৯৪০ টাকা। শুধু প্রিমিয়াম সুইটসের গুলশান ১, গুলশান ২, উত্তরা ও মতিঝিল—এই চার শাখায় পাওয়া যায় ল্যাটকা খিচুড়ি। এ ছাড়া দেশের বাইরে প্রিমিয়াম সুইটসের কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের শাখাতেও ল্যাটকা খিচুড়ি খেয়ে থাকেন ভোজনপ্রেমীরা।
দোকানের নামে বিরিয়ানি থাকলেও কারওয়ান বাজারের এ দোকানের ল্যাটকা খিচুড়িই বেশি জনপ্রিয়। সকাল ১০টা থেকেই পাওয়া যায় এই খিচুড়ি। দোকানে এসে এই খিচুড়ি দিয়েই সকালের খাবার সারেন কেউ, আবার কেউ কেউ পার্সেল করে নিয়ে যান বাড়িতে। দোকানটির ডিম দেওয়া ল্যাটকা খিচুড়ি সবচেয়ে জনপ্রিয়। ডিম ছাড়াও রয়েছে গরু, খাসি ও হাঁসের মাংসের ল্যাটকা খিচুড়ি।
দোকানটিতে প্রতিদিন তৈরি হয় ৭০ থেকে ৮০ কেজি চালের ল্যাটকা খিচুড়ি। বৃষ্টি হলে চাহিদা আরও বাড়ে। এ দোকানে ডিম দেওয়া ল্যাটকা খিচুড়ি খেতে খরচ হবে ৮০ টাকা। সঙ্গে গরু অথবা খাসির মাংস যোগ করলে ২৫০ টাকা। মুরগির মাংস নিলে খরচ হবে ১৭০ টাকা।
বনানীর ‘যাত্রাবিরতি’তে সারা বছরই পাওয়া যায় ল্যাটকা খিচুড়ি। এই প্ল্যাটারে ছোট ছোট বাটিতে সাজানো থাকে বেরেস্তা দেওয়া ল্যাটকা খিচুড়ি, চিকন করে কাটা ভাজা আলু, বেগুনি, আচার ও মৌসুমি সবজি।
অন্যান্য জায়গার মতোই বৃষ্টি হলে এই ল্যাটকা খিচুড়ির চাহিদা অনেকটা বেড়ে যায়। এ খিচুড়ি যাত্রার অন্যান্য খাবারের মতোই বেশ সুস্বাদু। খিচুড়ির এই প্ল্যাটারের দাম ৫০৪ টাকা।
বনানীর ‘স্বাদে বাংলাদেশ’ রেস্তোরাঁয় রয়েছে ল্যাটকা খিচুড়ির প্ল্যাটার। যেখানে চিনিগুঁড়া চালের ল্যাটকা খিচুড়ির সঙ্গে রয়েছে বেগুন ভাজা, সালাদ, ডিম ভাজি ও গরুর মাংস কষা।
রেস্তোরাঁটির স্বত্বাধিকারী শাহীন সারওয়ার জানান, এই খিচুড়িতে কোনো ধরনের তেল ব্যবহার করা হয় না, তাই হজমও হয় সহজে। বেগুন ভাজাটিও বেশ সুস্বাদু। ল্যাটকা খিচুড়ির প্ল্যাটারটির দাম ৫০০ টাকা।
মিরপুরের বাঙালিয়ানা ভোজে পাওয়া যায় চার ধরনের ল্যাটকা খিচুড়ি। মুরগি, গরু, হাঁস আর খাসির মাংসের ল্যাটকা খিচুড়ি। তাদের হাঁসের মাংস দেওয়া ল্যাটকা খিচুড়ি খেলাম। স্টিলের প্লেটে পরিবেশন করা ল্যাটকা খিচুড়িতে ছিল পাঁচ টুকরা মাঝারি আকারের মাংস আর ঝোল, ডিম ভাজা এবং পেঁয়াজ-মরিচ ভর্তা।
এই খিচুড়িতে সামান্য বেশি মসলা ব্যবহার করা হয়। দুপুর চারটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত পাওয়া যায় এই খিচুড়ি। রেস্তোরাঁর ম্যানেজার মোহাম্মদ সুমন জানান, ক্রেতারা হাঁস ও মুরগির ল্যাটকা খিচুড়ি খেতেই পছন্দ করেন বেশি। খাসির মাংসের ল্যাটকা খিচুড়ি খুব একটা বিক্রি হয় না।
মুরগির মাংস দিয়ে ল্যাটকা খিচুড়ি খেতে খরচ হবে ১৫০ টাকা, গরুর মাংসেরটা ২৫০ টাকা, হাঁসের মাংস ও খাসির মাংস দিয়ে ল্যাটকা খিচুড়ি খেতে খরচ হবে যথাক্রমে ২৯৯ টাকা ও ৩৫০ টাকা।
মিরপুর ১০–এর ‘বাংলা বিফ সিক্রেট’ নামের ছোট্ট ছিমছাম দোকানে গিয়েছিলাম ফেসবুকের পোস্ট দেখেই। ওপরে ঝুরা মাংস দেওয়া এই দোকানের খিচুড়ি দেখতে এবং খেতে বাকি সব ল্যাটকা খিচুড়ির চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। প্রায় দেড় দিন চুলায় জ্বাল দিয়ে ঘরোয়াভাবে তৈরি করা হয় এই ঝুরা মাংস।
খিচুড়ি রান্নায় অন্যান্য মসলার পাশাপাশি ব্যবহার করা হয় রান্না মাংসের তেল ও মাংস। সাধারণত শুকনো থাকলেও এই দোকানের ঝুরা মাংস কিছুটা ঝোল ঝোল। ঝুরা মাংসের এই ল্যাটকা খিচুড়ির দাম ১৯০ টাকা।
পুরান ঢাকার জনসন রোডে ‘খিচুড়ি ভোজ’ নামের ছোট্ট একটি ফুডকার্টে বিক্রি হয় প্রায় আট থেকে দশ রকমের সবজিমেশানো ল্যাটকা খিচুড়ি। খিচুড়ির ওপর ভেসে থাকে টকটকে লাল টমেটো আর শুকনা মরিচ। সবজির এই ল্যাটকা খিচুড়ির দাম ৬০ টাকা থেকে শুরু। সঙ্গে গরুর ঝুরা মাংস চাইলে দাম পড়বে ২৫০ টাকা।
চাইলে উটের মাংস দিয়েও খেতে পারবেন ল্যাটকা খিচুড়ি। সে ক্ষেত্রে দাম পড়বে ৫৫০ টাকা। ফুডকার্টটির দোকানি বিল্লাল হোসেন জানান, সপ্তাহের সাত দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত দুইটা পর্যন্ত পাওয়া যায় খিচুড়ি।