সম্পর্ক

সম্পর্কে বেশি কর্তৃত্ব নয়

.

সম্বন্ধ করে তাসনিম ও জয়ের বিয়ে হলেও তাঁরা পূর্বপরিচিত। দুজনেই ভালো চাকরি করেন। বিয়ের পর হঠাৎ তাসনিম বুঝতে পারেন, জয় তাঁর চাকরি করাটা কিংবা চাকরির সূত্রে বাইরে যাওয়াটা খুব সহজভাবে নিতে পারছেন না, দিন দিন এই সমস্যা বেড়েই চলে যা তাঁদের সংসারজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সম্পর্কের শুরুতে মানুষটি এক রকম, আবার পরে ভিন্ন রকম। অনেক ক্ষেত্রে অধিকারবোধ থেকে অথবা অকারণ আশঙ্কা থেকে কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে চান। অনেকে মনে করেন, যার সঙ্গে সম্পর্ক তার ওপর অধিকার শুধু তার-ই একার।
তবে কর্তৃত্বপ্রয়োগের ব্যাপারটা যে শুধু স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রেই ঘটে তা নয়। অনেক সময় বন্ধুবান্ধব বা অন্য সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কর্তৃত্বপরায়ণ মানসিকতা দেখা যায়। তবে যে ক্ষেত্রেই হোক না কেন সম্পর্কের এই ব্যাপারটা অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
প্রতিটা ব্যাপারেই একটা সীমারেখা থাকে, অর্থাৎ যেকোনো সম্পর্কেই মনে রাখতে হবে কতটুকু আমি একজন কে বলতে পারি কিংবা কতটুকু তার ওপর নিজের সিদ্ধান্তটা প্রয়োগ করা যাবে, এর ওপরেই সম্পর্কের ভালো-মন্দ ব্যাপারটা নির্ভর করে। যেকোনো সম্পর্ক হোক তাতে যদি অতিরিক্ত কর্তৃত্ব প্রয়োগের ব্যাপারটা থাকে, তবে সেই সম্পর্কে অনেক বেশি নেতিবাচক একটা প্রভাব পড়ে।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কথাই ধরা যাক, একজন স্বামী যখন তাঁর স্ত্রীর ওপর অনেক বেশি কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে চাইবেন, তখন তাঁদের ভেতর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটা থাকবে না, অর্থাৎ সম্পর্ক থেকে স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপারটা হারিয়ে যাবে। একে অপরের প্রতি সম্মানবোধ থাকবে না। দেখা যাবে বন্ধুবান্ধব, চাকরি, পোশাক সব ক্ষেত্রেই স্বামী বাধা প্রদানের চেষ্টা করেন। এর ফলে সম্পর্কে একধরনের চাপ বোধ হবে এবং সম্পর্কটা যেভাবে এগিয়ে চলার কথা সে ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হবে, হয়তো চাপে পড়ে স্ত্রী মন রক্ষার কারণে মেনে নেবেন কিন্তু সম্পর্কে সম্মানের জায়গাটা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে। সবাই চান যেকোনো সম্পর্কে নির্ভয় বিষয়টা থাকুক কোনো রকম চাপ না থাকুক। এ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর বন্ধুবান্ধব অথবা যেকোনো সম্পর্কেই দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যেটা এমন একটা সম্পর্ক, যা আমরা বিশেষ পরিণত বয়সে গিয়েই নিজেরাই তৈরি করছি। জীবনটাকে সুন্দর করার জন্য দুজনের ক্ষেত্রেই সে ক্ষেত্রে সম্পর্কে যদি নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা থাকে তাহলে সুখী হওয়ার যে ব্যাপারটা অথবা সম্পর্কের সুন্দর ব্যাপারগুলোতে অনেকটা সীমাবদ্ধতা চলে আসে। প্রত্যেকেরই মনে রাখা উচিত, সবার নিজস্ব একটা পছন্দ-অপছন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা থাকে। জোরপূর্বকভাবে তাকে নিয়ন্ত্রণ করাটা অনুচিত।

কর্মক্ষেত্রেও বেশি কর্তৃত্ব খাটানো ঠিক নয়। ছবি: অধুনা

শুধু যে স্বামী স্ত্রীর ওপর কর্তৃত্বপ্রয়োগ করতে চান তা নয়, অনেক সময় স্ত্রীরাও স্বামীর ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে চান। সাধারণত একধরনের অনিরাপদ বোধ থেকেই এটি তাঁরা করে থাকেন, আবার অনেকে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের কারণেও করে থাকেন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, সম্পর্কে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার থাকে, যা প্রত্যেকেরই মূল্যায়ন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে একে অপরের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে সমস্যাগুলোর সমাধান করা উচিত। পারস্পরিক বিশ্বাসের চর্চাটা গড়ে তুলতে হবে এবং নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপারও তুলে ধরতে হবে। স্বামী বা স্ত্রীর যেকোনো একজনকে অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে, শুধু কি তাঁর ক্ষেত্রেই এই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা নাকি সবার ক্ষেত্রে। তাঁকে বুঝিয়ে বলা যেতে পারে যে তাঁর অনিরাপদ বোধ করার কোনো কারণ নেই। এই সমস্যাগুলো পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে ঠিক করে নেওয়া যেতে পারে। একে অন্যের প্রতি কী কারণে অনিরাপদ বোধ করছে, অবশ্যই খোলামেলাভাবে সেসব আলোচনা করা যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, কেউ কখনো কাউকে বদলাতে চাওয়া উচিত নয়, একেকজন একেক রকম। এর ভেতরেই বোঝাপড়া গড়ে তুলতে হবে।
তবে যদি নিয়ন্ত্রণ এবং কর্তৃত্ব প্রয়োগের বিষয়টা অতিরিক্ত মাত্রায় হয়, তবে সে ক্ষেত্রে মুখ বুজে না থেকে প্রতিবাদ করা উচিত।
সূত্র: লাইফহ্যাক, লিভ স্ট্রং ডট কম