সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘ইমোশনাল ব্যাগেজ’ হলো অতীতের সেসব অভিজ্ঞতা, যেসবের নেতিবাচক প্রভাব মন ও মস্তিষ্কে অনেক দিন ধরে রয়ে যায়
সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘ইমোশনাল ব্যাগেজ’ হলো অতীতের সেসব অভিজ্ঞতা, যেসবের নেতিবাচক প্রভাব মন ও মস্তিষ্কে অনেক দিন ধরে রয়ে যায়

আপনার সঙ্গী কি অতীতের তীব্র আঘাতের কারণে ইমোশনাল ব্যাগেজ বয়ে চলেছেন

সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘ইমোশনাল ব্যাগেজ’ হলো অতীতের সেসব অভিজ্ঞতা, যেসবের নেতিবাচক প্রভাব মন ও মস্তিষ্কে অনেক দিন ধরে রয়ে যায়। অতীত সম্পর্কের তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলতে না পারা, ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া কোনো দুর্ঘটনা থেকে পাওয়া তীব্র মানসিক আঘাতসহ আরও বিভিন্ন কারণে ইমোশনাল ব্যাগেজ সৃষ্টি হয়। এতে একজনের বর্তমান জীবনে নানা ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। যেমন সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে না পারা, সব সময় ভীতসন্ত্রস্ত থাকা, সহজে কারও সঙ্গে মানসিকভাবে ঘনিষ্ঠ হতে না পারা। নিচের ১০টি লক্ষণ দেখে বুঝতে পারবেন আপনার সঙ্গী ইমোশনাল ব্যাগেজের সমস্যায় ভুগছেন কি না।

১. ছোট ছোট বিষয়ে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো

আপনার সঙ্গী কি ছোটখাটো ভুল–বোঝাবুঝিতেও অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন? হয়তো তাঁর মনে কোনো একটা ক্ষত আছে, যা এখনো শুকায়নি। কখনো খাবার টেবিলে বসে ‘তুমি তো ছোট মাছ খেতেই চাও না’ কিংবা ‘তুমি লাউয়ের তরকারি খাও না কেন?’ ধরনের ছোটখাটো কথা থেকেই যদি ঝগড়া বেধে যায়, তাহলে বুঝতে হবে সমস্যা আসলে আরও অনেক গভীরে। সঙ্গীর সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলুন, তাঁকে তাঁর নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে উৎসাহ দিন।

২. সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে না পারা

সঙ্গী হয়তো সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেন না কিংবা অন্যদের কর্মকাণ্ড নিয়ে অযথাই সন্দেহ করছেন। যাঁরা অতীতে প্রতারিত হয়েছেন, তাঁরা সাধারণত এমন আচরণ করেন। সঙ্গী আপনাকে সন্দেহ করলে, কোনো প্রমাণ ছাড়াই আপনার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুললে ধরে নিতে পারেন তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাঁকে নিশ্চয়তা দিন যে আপনারা এখনো পরস্পরের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অতীতের যেসব অভিজ্ঞতার কারণে তিনি এমন করছেন, সেসব ঘটনা নিয়েও আলোচনা করুন।

৩. আগের সম্পর্কের সঙ্গে তুলনা

আপনার সঙ্গী যদি তাঁর সাবেক সঙ্গীর সঙ্গে আপনার তুলনা করতে থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে বর্তমান সম্পর্কের প্রতি তিনি পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নন। এটি ইমোশনাল ব্যাগেজের লক্ষণ। অতীত সম্পর্কের কিছু সুখস্মৃতি কিংবা আবেগের কারণে তিনি হয়তো আপনার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ভালো দিকগুলো পুরোপুরি বুঝতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে সরাসরি আলোচনা করুন।

৪. অতীত নিয়ে অনুশোচনা

আপনার সঙ্গী যদি শুধুই নিজের অতীত নিয়ে আফসোস করতে থাকেন, তাহলে তিনি সম্ভবত নিজেকে একেবারেই মূল্যহীন ভাবছেন। অতীত সম্পর্ক নিয়ে ক্রমাগত আফসোস করতে থাকলে বর্তমানের প্রতি নিজেকে পুরোপুরি নিয়োজিত করা সম্ভব হয় না। অতীত সম্পর্ক থেকে পাওয়া শিক্ষার কথা মনে রাখতে তাঁকে উৎসাহ দিন। অনুশোচনা থেকে মুক্ত হতে তাঁকে সহযোগিতা করুন।

৫. গভীর আলোচনা এড়িয়ে চলা

আপনার সঙ্গী যদি আবেগপূর্ণ আলাপ-আলোচনা এড়িয়ে চলেন, তাহলে সম্ভবত তিনি নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করতে ভয় পান। যদি ভবিষ্যত নিয়ে আলাপ–আলোচনা শুরু হলেই তিনি প্রসঙ্গ পাল্টে দেন, তাহলে তিনি ঘনিষ্ঠ হতে ভয় পান। তাঁকে ধীরে ধীরে নিজের অনুভূতিগুলো স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে প্রকাশ করার সুযোগ দিন। দুর্বলতাও যে একধরনের শক্তি, এ ব্যাপারে তাঁকে আশ্বস্ত করুন।

৬. পুরোনো ঘটনা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা

ধরা যাক, আপনাদের মধ্যে অনেক আগে কোনো বিষয় নিয়ে কথা–কাটাকাটি হয়েছিল। আপনার সঙ্গী যদি প্রায়ই সেই ঘটনা মনে করে অসন্তোষ প্রকাশ করেন, তাহলে বুঝে নিতে হবে তিনি সেদিন খুব বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন, যা আজও ভুলতে পারেননি। তাঁকে নিজের আবেগ প্রকাশ করতে দিন। প্রয়োজনে আগের ঘটনাটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করুন, যাতে দুজনে আগের মান-অভিমান ভুলে সুন্দর একটি ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন।

৭. সমালোচনা সহ্য করতে না পারা

অনেকে সমালোচনাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে গণ্য করেন। গঠনমূলক সমালোচনাতেও রেগে যাওয়া, কথাবার্তা বন্ধ করে দেওয়া হীনম্মন্যতার লক্ষণ। একে অন্যের দোষ না খুঁজে ঠান্ডা মাথায় আলোচনা করুন।

৮. আপনার চিন্তা ও অনুভূতিগুলোকে গুরুত্ব না দেওয়া

আপনার সঙ্গী যদি আপনার মনই না বোঝেন, সবকিছুতে আপনাকেই দোষারোপ করেন, তাহলে তিনি ইমোশনাল ব্যাগেজের শিকার। তিনি যদি আপনার দুশ্চিন্তাকে মোটেও গুরুত্ব না দেন, তাহলে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকবে। ইতিবাচকভাবে নিজের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলুন, সম্মানের সঙ্গে আলোচনার সীমারেখা তৈরি করুন।

৯. ঝগড়াঝাটি-তর্ক এড়িয়ে চলা

আপনার সঙ্গী হয়তো নিজের অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে মানসিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়তে ভয় পান। কোনো ব্যাপারে মতবিরোধ দেখা দিলেই তিনি যদি কথা না বলে চুপ হয়ে যান, তাহলে সমস্যাটি বেশ জটিল। এমন একটি পরিবেশ তৈরি করুন, যেখানে ঝগড়া বা তর্ক–বিতর্ককে কোনো হুমকি নয়, বরং সমস্যা সমাধানের একটি সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

১০. ভীতসন্ত্রস্ত থাকা

কোনো দুর্ঘটনা থেকে পাওয়া প্রচণ্ড মানসিক আঘাতের কারণে একজন সব সময় ভীতসন্ত্রস্ত থাকতে পারেন। এ ধরনের মানুষ সম্পর্ক নিয়ে অহেতুক ভয় পান। আপনার সঙ্গী যদি আবারও কষ্ট পাওয়ার ভয়ে নতুন কোনো অভিজ্ঞতা নিতে ভয় পান, এটি ইমোশনাল ব্যাগেজের লক্ষণ। তাঁকে তাঁর এসব ভয় সম্পর্কে নতুন করে জানতে সহযোগিতা করুন। ধীরে ধীরে তাঁকে নতুন নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে উৎসাহ দিন।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট