
`আমি তোমাকে ভালোবাসি’—এই তিনটি শব্দ কি সব সময় মুখে বলেই ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয়? না, এমন অনেক পুরুষ আছেন, যাঁরা কথায় নয়, আচরণে বেশি ভালোবাসা প্রকাশ করেন। তাঁদের লাজুক দৃষ্টি, নীরবে পাশে থাকা, ছোট ছোট যত্ন—এসবই অনেক অব্যক্ত কথা বলে দেয়। এই না-বলা ভালোবাসা কখনো কখনো উচ্চারিত শব্দের চেয়ে গভীর হয়। হয় আরও সুন্দর ও নির্ভরযোগ্য। কারণ, তাঁদের ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে নীরব ভরসায়, অদৃশ্য মমত্বের আলতো স্পর্শে। চলুন দেখে নিই, পুরুষেরা কীভাবে কথা না বলেই ভালোবাসা প্রকাশ করেন।
যেসব পুরুষ নীরবে গভীরভাবে ভালোবাসেন, তাঁরা ভালোবাসার মানুষের শুধু ভালো সময়ে নয়; প্রয়োজনের মুহূর্তে, ব্যস্ততম দিনে, এমনকি ঝামেলার মধ্যেও পাশে থাকেন।
প্রিয়জনের পরীক্ষা, ভাইভার দিন কিংবা চাকরির ইন্টারভিউর মুহূর্তে তিনি প্রথমেই মনে রাখেন, বার্তা দেন, ‘চিন্তা কোরো না, তুমি পারবে।’
প্রিয় মানুষটি যদি ব্যস্ত থাকেন, তিনি বিরক্ত হন না; বরং শান্তভাবে বলেন, ‘তোমার কাজটা আগে করো, পরে কথা হবে।’
ডেটে যাওয়ার মতো বড় পরিকল্পনা না থাকলেও তিনি চেষ্টা করেন সপ্তাহে অন্তত এক দিন সময় বের করে দেখা করতে। যেমন কোনো ফুচকার দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে মিনিট দশেক আড্ডা অথবা হাঁটতে হাঁটতে কথা বলা।
প্রিয়জনের পরিবারের বিপদ-আপদে দেখবেন ঠিকই তিনি পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাস্তায় কোনো সভা-সমাবেশ থাকলে আগেভাগেই জানিয়ে সতর্ক করে দেন। ভালোবাসা কিন্তু এক দিনের বড় রোমান্টিক মুহূর্তে নয়; বরং এ রকম ছোট ছোট যত্নের মধ্যেই গড়ে ওঠে। এই ধারাবাহিক পাশে থাকা ধীরে ধীরে বিশ্বাস তৈরি করে।
যেসব পুরুষ নীরবে ভালোবাসেন, তাঁরা প্রিয়জনের ছোট ছোট বিষয় কখনোই ভুলে যান না। এসব খুঁটিনাটি তাঁদের কাছে গুরুত্ব পায়; কারণ, আপনি তাঁর কাছে বিশেষ একজন। যেমন প্রিয়জন সকালে চা না খেলে মাথা ধরে, তাই তিনি নিয়মিত জিজ্ঞেস করেন, ‘চা খেয়েছ?’ কোন দোকানের লাচ্ছিটা প্রিয়জন বেশি পছন্দ করেন, তা তিনি মনে রাখেন, সুযোগ পেলে নিয়ে আসেন। ওষুধ বা প্রয়োজনীয় কিছু সময়মতো খাওয়ার কথা তিনি মনে করিয়ে দেন।
একদিন কথাচ্ছলে হয়তো বলেছিলেন কোন সুগন্ধি আপনার পছন্দ, সেটা মনে রেখে বিশেষ দিনে আপনাকে সেই সুগন্ধি উপহার দেবেন তিনি। প্রিয়জনের মা–বাবার জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকীর মতো বিশেষ দিনগুলোও তিনি মনে রাখেন এবং সেদিন তাঁকে মনে করিয়ে দেন, ‘মা-বাবাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছ?’
নরওয়ের নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক জোস্টেইন হোলমেন বলেছেন, পুরুষেরা নারীদের তুলনায় তারিখ বা ঘটনা মনে রাখতে বেশি সমস্যায় পড়েন। তাই কোনো পুরুষ যদি আপনার ছোটখাটো পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দেন, তার মানে তিনি আপনাকে সত্যিই ভালোবাসেন।
ভালোবাসা মানে শুধু আকর্ষণ নয়; এর মধ্যে থাকে গভীর সম্মান। সম্মান সবচেয়ে ভালো বোঝা যায়, যখন তাঁর প্রিয়জন সেখানে উপস্থিত থাকেন না। বন্ধুদের আড্ডায় কেউ যদি প্রিয়জনের ব্যাপারে ভুল বোঝেন বা ঠাট্টা করেন, তখন তিনি নরম গলায় বলেন, ‘ওর ব্যাপারে এমন কথা না বলাই ভালো।’ প্রিয়জন যেসব বিষয়ে কথা শুনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না, তিনি সেসব বিষয়ে কখনোই কিছু বলেন না।
বন্ধুরা যদি অপ্রয়োজনীয় আলোচনা শুরু করেন, তিনি শান্তভাবে সেটা থামিয়ে দেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তিনি কখনোই প্রিয়জনকে খাটো করেন না। এটি শুধু আনুগত্য নয়; এটি প্রিয়জনের প্রতি তাঁর গভীর সম্মান, সুরক্ষা ও দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ।
জীবনে সময় অমূল্য। একবার চলে গেলে আর ফেরানো যায় না। তাই কেউ যদি তাঁর অবসর সময়, সাপ্তাহিক ছুটি বা অলস দুপুর, প্রতিটি সময় প্রিয়জনের জন্য বরাদ্দ রাখেন, এর মানে প্রিয়জন তাঁর জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন অফিস শেষে ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। ঘুরতে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা না থাকলেও শুধু পাশে বসে এক কাপ চা, হালকা গল্পসল্প বা কিছুক্ষণ চুপচাপ সময় কাটান। পার্কে হাঁটতে হাঁটতে নীরব থাকেন, অন্য কারও সঙ্গে নয়, শুধুই প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানোই তাঁর উদ্দেশ্য। নিজের শখ বা ‘মি-টাইম’ কখনো কখনো পিছিয়ে দেন প্রিয়জনের জন্য। প্রিয়জনের জন্য তাঁর ব্যস্ত দিনের মধ্যেও সময় বের করেন।
প্রিয়জনের মন খারাপ হলে বারবার ‘কী হয়েছে? বলো তো?’, ‘কেন এমন হলো?’–জাতীয় প্রশ্ন করলে চাপ বেড়ে যায়। কিন্তু যে পুরুষ ভালোবাসার মানুষকে চাপ দেন না, তিনি প্রিয়জনের পাশে বসে বলেন, ‘ইচ্ছে হলে বোলো…আমি তো আছিই।’
তিনি প্রিয়জনের নীরবতাকেও সম্মান করেন। এটাই সত্যিকারের ‘হোল্ডিং স্পেস’। হোল্ডিং স্পেস মানে হলো কাউকে না নাড়িয়ে, না চাপ দিয়ে, শুধু পাশে থাকা। যে পুরুষ সত্যিকারের ভালোবাসেন, তিনি জানেন, সব সময় সমাধান নয়, কখনো শুধু নিঃশব্দ সঙ্গই সবচেয়ে জরুরি।
সূত্র: মিডিয়াম