অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেমস হিউইটের সঙ্গে প্রিন্সেস ডায়ানার পাঁচ বছরের প্রেম ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেমস হিউইটের সঙ্গে প্রিন্সেস ডায়ানার পাঁচ বছরের প্রেম ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’

প্রিন্সেস ডায়ানা সম্পর্কে সাবেক প্রেমিক এমন কিছু তথ্য ফাঁস করলেন, যা বিশ্ব আগে জানত না

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেমস হিউইটের সঙ্গে প্রিন্সেস ডায়ানার পাঁচ বছরের প্রেম ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’। সম্প্রতি সেই জেমস হিউইট এক সাক্ষাৎকারে ডায়ানা সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য ফাঁস করলেন, যা বিশ্ব আগে জানত না।

প্রিন্সেস ডায়ানা ও জেমস হিউইটের মধ্যে সম্পর্কটা ছিল ১৯৮৬–১৯৯১ সাল পর্যন্ত। হিউইটের কাছে ঘোড়া চালানোর প্রশিক্ষণ নিতেন ডায়ানা। সেই থেকে প্রেম। ১৯৯৫ সালে বিবিসির ‘প্যানোরামা’ অনুষ্ঠানের সাক্ষাৎকারে হিউইটের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন ডায়ানা; বা বলা যায় স্বীকার করতে বাধ্য হন। আর এই সম্পর্কের বিস্তারিত উঠে আসে ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত ব্রিটিশ লেখক আনা পাস্তারনাকের ‘প্রিন্সেস ইন লাভ’ বইয়ে। তাতে মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন ডায়ানা। বইটির ওপর ভিত্তি করে সিনেমা ও সিরিজও তৈরি হয়েছে। যাহোক, সে সময় এমন গুজবও রটেছিল যে প্রিন্স হ্যারির বাবা নাকি এই জেমস হিউইট! যা পরবর্তী সময়ে মিথ্যা প্রমাণিতও হয়েছে।

সাক্ষাৎকারে হিউইটের বক্তব্য

সম্প্রতি জেমস হিউইট ‘গুড মর্নিং ব্রিটেন’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডায়ানা সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য ফাঁস করেছেন, যা বিশ্ব আগে জানত না। ৬৬ বছর বয়সী হিউইট জানান, ডায়ানা তাঁর দুই সন্তানের (প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি) সম্পর্কের অবনতি হলে কী হবে, সে বিষয়ে দুশ্চিন্তা করতেন (যা সময়ের সঙ্গে সত্যি হয়েছে)। জেমস হিউইট বলেন, ‘যেকোনো মায়ের বেলায় সন্তানদের সম্পর্কে চিড় ধরা নিয়ে দুশ্চিন্তা করা স্বাভাবিক। তিনি (ডায়না) সব সময় দুই সন্তানের সম্পর্ক কীভাবে ভালো, বন্ধুত্বপূর্ণ রাখা যায়, সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন।’

যেভাবে জীবন বদলে গিয়েছিল

জেমস হিউইট এখন ইউক্রেনে যুদ্ধাহতদের পুনর্বাসনে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন। সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি সর্বশেষ প্রিন্সেস ডায়ানাকে নিয়ে কথা বলেছিলেন ১৯৯৫ সালে বিবিসির প্যানোরামার ওই সাক্ষাৎকারের পর। সে সময় ব্রিটিশ সাংবাদিক মার্টিন বশিরের প্রশ্নের উত্তরে প্রিন্সেস ডায়ানা তাঁদের সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নিলে হিউইটের ব্যক্তি ও পেশাজীবন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেমস তখনো ডায়ানার সঙ্গে সম্পর্ক থেকে ‘মুভ অন’ করার জন্য ভেতরে ভেতরে সংগ্রাম করছিলেন।

বাঁয়ে তারুণ্যে জেমস হিউইট, ডানের ছবিটি কয়েক বছর আগের

ডায়ানার দেওয়া ওই সাক্ষাৎকার প্রচার হওয়ার পর ব্রিটিশ ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া জেমস হিউইটের পেছনে উঠেপড়ে লাগে। আর এমন সময় আন্তর্জাতিক মিডিয়া তাঁকে ‘লাভ র‍্যাট’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। তিনি চাকরিচ্যুত হন, সুনাম নষ্ট হয়, মানসিকভাবে বিপন্ন হয়ে পড়েন। এরপর বহু বছর জেমস হিউইট জনসমক্ষে আসেননি। জীবন যাপন করেছেন লোকচক্ষুর আড়ালে।

হিউইট জানান, বিবিসির ওই সাক্ষাৎকারের আগে প্রিন্সেসকে কী কী প্রশ্ন করা হবে, তা জানানো হয়েছিল। তারপর ডায়ানা সাক্ষাৎকার দিতে সম্মত হন। কিন্তু সাক্ষাৎকারে অনৈতিকভাবে ভিউ, টাকা ও শোরগোলের লোভে হিউইটের সঙ্গে ডায়ানার সম্পর্কের বিষয়টি তুলে আনা হয়। হিউইট বলেন, ‘এরপর আমি বুলিং, কটাক্ষ আর অজস্র নেতিবাচক মন্তব্যে অত্যন্ত মর্মাহত আর আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।’

প্রিন্স হ্যারির মন্তব্য

হিউইট সে সময় ছিলেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের অশ্বচালনা প্রশিক্ষক। প্রিন্স উইলিয়ামস ও প্রিন্স চার্লসের কাছে ‘ফাদার ফিগার’ ছিলেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে হিউইট তা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি তাদের সঙ্গে খেলতাম, সাঁতার কাটতাম, ঘোড়া চালানো শেখাতাম। সেটা ছিল পেশাগত দায়িত্বের সম্পর্ক।’

ডিউক অব সাসেক্স প্রিন্স হ্যারির স্মৃতিকথা ‘স্পেয়ার’

এদিকে ডিউক অব সাসেক্স প্রিন্স হ্যারি তাঁর স্মৃতিকথা ‘স্পেয়ার’–এ ‘হিউইট তাঁর বাবা’—এই গুজব সম্পর্কে লেখেন, ‘এটা খুবই হাস্যকর। গুজবটার একটা কারণ হতে পারে হিউইটের চুল লাল (হ্যারির চুলও লাল, এদিকে চার্লস বা ডায়ানা কারও চুলই লাল নয়)। আরেকটা কারণ হতে পারে মানসিক বিকার।’

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট